Our Sherpur

শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি

শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি

রবি নিয়োগী

উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী লড়াই-সংগ্রামের কিংবদন্তী পুরুষ, মহান বিপ্লবী কমরেড রবি নিয়োগী আর জ্যোৎস্না নিয়োগী উভয়েই আমাদের শেরপুর-এর অহংকার, আমাদের গর্ব। বিক্রমপুরের যোগেশ মজুমদারের কন্যা জ্যোৎস্না রানী, পরবর্তীতে হন আমাদের শেরপুরের জ্যোৎস্না নিয়োগী। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রবি নিয়োগী বিক্রমপুরের জ্যোৎস্না রানীকে ১৯৪১ সালে বিয়ে করেন।

Products list of Our Sherpur
শেরপুর জেলার যেসব পণ্য আওয়ার শেরপুর এ পাওয়া যায়।

১৯৭২ সালে শেরপুরস্থ জি কে স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। ঢাকা থেকে শেরপুরে এসময়ে যাওয়া আসা কিছুটা কমে গেলেও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের গানের রিহার্সালের জন্য দিপুদি, মঞ্জুশ্রীদি, প্রয়াত নিঝু ভাইদের সাথে আমিও অংশগ্রহণ করেছি। রিহার্সালটা হতো গৃর্দ্দানারায়ণপুরস্থ (পুরাতন গরুহাটী) বিপ্লবী রবি নিয়োগীর বাসার সামনে ঘাস আচ্ছাদিত উঠানে বেশ আয়েশ করে পাটি বিছিয়ে। বিপ্লবী রবি নিয়োগীকে বিকেলের দিকে প্রায়শই শেরপুর নিউমার্কেটের একটা প্রিন্টিং প্রেসে দেখতে পেতাম। যেখানটায় রাজনৈতিক আলোচনাও হোত।

রবি নিয়োগী

সর্বকনিষ্ঠ ছেলে কানাডা প্রবাসী কাজল নিয়োগী, আমার কাজলদা জি কে স্কুলে সম্ভবতঃ আমার বছর দুয়েকের সিনিয়র ছিলেন। আমি আর কাজলদা একসময়ে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে খুব কাছাকাছি বাসায় থাকতাম। দাদা প্রায়ই সকাল আর বিকালের দিকে একটা কুকুরছানা নিয়ে বাসার সামনে হাঁটাহাঁটি করতেন। ২০০১ সালের দিকে বিপ্লবী রবি নিয়োগীর সাথে আমার ঐ বাসার সামনেই দেখা হয়, কথাও হয়। তখন বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থও ছিলেন। সে দেখাটাই ছিল তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা।

শেরপুরকে পূর্ণাঙ্গ জেলা করার জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বিপ্লবী কমরেড এই রবি নিয়োগীই প্রথম সুপারিশ করেছিলেন বলে আমরা জানি। আন্দামান সেলুলার জেল ফেরৎ রবি নিয়োগী তাঁর ৯২ বছরের জীবনকালে ৩৪ বছরই জেলে কাটিয়েছেন। পাকিস্তান আমলে ২৪ বছরের মধ্যে ২০ বছর তিনি জেলেই ছিলেন। আত্মগোপনে কেটেছে আরো প্রায় দুই যুগ।

বিপ্লবী রবি নিয়োগীর স্বাধীনতা পদক কাঁদছে
শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি

জ্যোৎস্না নিয়োগী

কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য জ্যোৎস্না নিয়োগী ছিলেন এদেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের এক অসামান্য অগ্রসৈনিক। তাঁরও জীবনের প্রায় বারো বছর কেটেছে জেল ও আত্মগোপনে। শেরপুরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। তাঁরই চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল উৎসাহী মেয়েদের নিয়ে করা নাট্যদল, ‘আমরা কজনা’।

একসময় শেরপুর নিউমার্কেটের এ জায়গাটা ছিল এক বিশাল মাঠ। এখানে সরিষার চাষ হতো। প্রায় বিকেলেই বিপ্লবী জ্যোৎস্না নিয়োগীকে দেখতাম গৃর্দ্দানারায়ণপুর থেকে মাঠের পূবদিক দিয়ে আখড়াবাড়ীর দেয়াল ঘেষা মাটির রাস্তাটা ধরে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। সামনের রঘুনাথ জিউ মন্দিরের ভেতর দিয়ে কোথায় যেন তিনি চলে যেতেন। আমি তখন হয় স্কুলের বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলাধূলা করছি বা ঘুড়ি উড়াচ্ছি। সময়কাল মোটামুটি ষাটের দশকের শেষ দিকটায়।

গতকাল ২৭ জানুয়ারী ছিল বিপ্লবী জ্যোৎস্না নিয়োগীর ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁদের দুজনকে নিয়ে স্মৃতিগুলো বেশ মনে পড়ছে আজ আমার। নিয়োগী দম্পতি কমরেড রবি নিয়োগী আর বিপ্লবী জ্যোৎস্না নিয়োগী উভয়কেই জানাই লাল সালাম। আর তাঁদের প্রতি রইলো আমার অতল শ্রদ্ধা। শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি।

শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি
শেরপুরের অহংকার নিয়োগী দম্পতি

লেখক: মীর শাহনেওয়াজ

Leave a Reply

Scroll to Top