Our Sherpur

স্থানিককে দিনলিপি | জ্যোতি পোদ্দার

স্থানিককে দিনলিপি

জ্যোতি পোদ্দার
লেখক: জ্যোতি পোদ্দার

জানুয়ারি ২১, ২০২১: “বিকাল-বাজারের মাথার উপর ছাতির মতো মেলানো বিরাট বটগাছ। ইলসা তল্লাটের মানুষজন প্রাত্যহিক কেনাকাটা এখানেই সারেন। কী নেই? ছোট্টখাট্টো এই পুরাতন বাজারঘাটে গেরস্থালী সবই পাওয়া যায়। বহু পুরানো এই বাজার। বটবৃক্ষও প্রবীণ। বয়সের ভারে মুলকাণ্ড পচতে শুরু করেছে। হাটুরেদের ছায়া দেবে কে? এই প্রবীণ চলে গেলে? প্রবীণ বট নিজের ঝুরি নামিয়ে নামিয়ে নানা স্থানে নিজকে টিকিয়ে রাখার কসরত করে যাচ্ছেন। সেই ঝুরিও শক্তপোক্ত এখন।

পাশে দাড়িয়েই থাকা আবুল কালাম আজাদ “বেচে থাকার সাধ যার আছে তারাই থাকে টিকে থাকার লড়াইয়ের কষ্ট। আনন্দও” বলতে বলতে রাস্তার দুপাশের মাটিতে মেলানো বটের ঝুরিনাম শক্ত হাত দুটি দেখলেন। এদিকটা এই হাতের উপরই মেলে দিয়েছে বটে। পাশে ইন্দিরা। হাটুরেদের পানীয় জলের ব্যবস্থা। ১৯১৯ সালের তৈরি। তখন তো ইন্দিরাই পানীয় জলের উৎস।

হেজেমজে গেলেও সন লেখা শানের গায়ে। উত্তরের দিকে আরেকটু হেটে গেলেই বড় মহল্লা। এখানেও আরেক ইন্দিরা। এটি গ্রামের মানুষ জনের জন্য আর বাজারেরটি বাইরের মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খোশ মোহম্মদ চৌধুরী। আজো এতো বছর মানে ১০২ বছর পরও গ্রামবাসী খোশ মোহাম্মদ চৌধুরীকে মনে রেখেছে। ময়মনসিংহ ডিস্ট্রিক বোর্ডের মেম্বার হবার পর পরই তিনি এ তল্লাটি ২৬০টির মতো কুয়া বা ইন্দিরা প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯১৪ সালে কামারিয়া চরে যে প্রজাসন্মিলনী হয় তা ইতিহাসে উজ্জ্বল স্বাক্ষর হয়ে আছে। বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন সে সময়ে এই চরে। পরবর্তী জমিদার প্রথা বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে ওটে এই সন্মিলনী ছিল তার দাহিকাশক্তি। এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন খোশ মোহাম্মদ চৌধুরী। আবুল মনসুর আহমেদ “খোশ মোহাম্মদ চৌধুরীর নাম সোনার হরফে লেখা থাকার বস্তু” লিখেছেন তার ’আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে।

Our Sherpur YouTube

মজার ঘটনা হলো এই সফরে কাকতালীয় ভাবে ছিলেন এস এম ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল। শৈবালের পিতার দাদা ছিলেন এই খোশ মোহাম্মদ চৌধুরী। পূর্ব পুরুষের কৃতি দেখে নিশ্চয়ই শৈবালের ভালো লেগেছে।

ইনছান আলি(৮০) ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন এই ইলসা গ্রাম। তিনি জানালেন,” ১৯৪৭ সালের পর পরই হিন্দু গ্রামটি শুন্য হয়ে পড়ে।” রাজনীতির মারপ্যাঁচে চৌদ্দ পুরুষের গ্রাম ছেড়ে জমি জমা বিক্রি করে অন্যদেশে ঘর করছে এখানকার আদি মানুষেরা। টবে লাগানো গাছের মতো।

কোন কিছুই শুন্য থাকে না। ইনছান আলী জানালেন,” ঢাকা ময়মনসিংহ নোয়াখালী টাংগাইল সিরাজগঞ্জ থেকে মানুষেরা এসে ঘর করেছেন এখানে।” তারাও তাদের মাটি ছেড়ে এখানে পুঁতেছেন জীবনের ধন।

YouTube | Our Sherpur

জীবন এমনই। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বসতি করা। জলে ভাসা পদ্মের মতো। চলতে চলতে কোন কঞ্চিতে আটকে গেলে সেখানে জীবন। সেখানেই মরণ। আবার উত্তর পুরুষদের অন্য জায়গা খোঁজার পালা। থিতু হবার পালা। ‘৪৭ — এই অঞ্চলে নতুন বসতির নতুন নির্মানের এক পালাগানের নাম।

বাজার পেরুলেই ৬০ নং ইলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইন্দিরা প্রতিষ্ঠা করার চার বছর পূর্বে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা। নতুন বিল্ডিং। পাশে শহীদ মিনার। রাস্তার এপাশে পুরাতন ভাঙা স্কুল। বটের শেকড়ে ছেয়ে গেছে মেঝে। ভাঙা পুরান ইস্কুল ঘরে আমরা পুরান দিনের শিক্ষার্থীদের কলকাকলি শোনার জন্য অনেকক্ষণ কান পেতে রইলাম। দোচলা টিনের ভাঙা দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। আবুল কালাম আজাদ বললেন শত বছর আগে আমার আপানার মতো শিক্ষকই তো এখানে পড়িয়েছেন” হুম। ঠিক বলছেন — বলেই হাটতে হাটতে বাজারে ভেতর ঢুকে পড়লাম।”

স্থানিককে দিনলিপির কিছু চিত্র:

সূত্র : ফেসবুক | স্থানিককে দিনলিপি

Leave a Reply

Scroll to Top