Our Sherpur

শেরপুরের মন্ডা | Sherpurer Monda

শেরপুরের মন্ডা সাদা রঙের এক প্রকার মিষ্টান্ন। ছানা, ক্ষীর, এলাচ গুঁড়া ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয় মন্ডা। মিষ্টি প্রিয়দের কাছে মন্ডার স্থান অনন্য। জাল করার এক পার্যায়ে ঘন হয়ে আসলে ছোট ছোট অংশে আলাদা করে শেরপুরের মন্ডা (Sherpurer Monda) তৈরি করা হয়। এই মন্ডায় মিষ্টির পরিমাণ খুবই কম।

Products list of Our Sherpur
Our Sherpur sells Tulshimala Rice, Monda, Guger Sandesh and, Chanar Payesh. For online orders click here.

শেরপুরের মন্ডার ইতিহাস

শেরপুর অঞ্চলের জমিদারদের সাথে মুক্তাগাছার জমিদারদের আত্মীয়তা ও কর আদান প্রদানের সম্পর্ক ছিল সুদৃঢ়। এ কারণে উভয় অঞ্চলের জমিদারদের আসা যাওয়া ছিল নিয়মিত। মুক্তাগাছার জমিদারদের প্রিয় খাবার ছিল মন্ডা। তাই তারা শেরপুরের আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসতেন মন্ডা বানানোর কারিগর। জমিদাররা যে কয়দিন শেরপুরের বেড়াতেন তাদের চাহিদা পূরণ করতে আগত কারিগররা চুলা বানিয়ে মন্ডা তৈরি করতেন। এ অঞ্চলের দুধের (গরু) কারণে কারিগররা উন্নত মানের মন্ডা বানাতে  স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। জমিদাররাও শেরপুরের মন্ডা পছন্দ করতেন।

এ কারিগরদের থেকে স্থানীয় মিষ্টি তৈরির কারিগররা মন্ডা তৈরির কৌশল শিখে। এরফলে মন্ডা তৈরি করতে মুক্তাগাছা থেকে কারিগর আনা অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠে। শেরপুরের জমিদারদের খাদ্য তালিকায়ও জায়গা করে নেয় এ মন্ডা। তৎকালীন সময়ে মন্ডা স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র জমিদার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর বাণিজ্যিক ভাবে মন্ডা তৈরি শুরু হয়। বাণিজ্যিক ভাবে শেরপুরের প্রথম মন্ডা তৈরি করেন, চন্দ্র কিশোর দে। বংশানুক্রমে মন্ডা উৎপাদন চলমান রয়েছে।

শেরপুরের মন্ডা
মন্ডা পেয়ে উচ্ছ্বসিত

মন্ডার জনপ্রিয়তা

জমিদার আমল থেকেই শেরপুরের মন্ডা জনপ্রিয়। যার ফলে তখনকার সময় জমিদার পরিবার ব্যতীত সাধারণ মানুষের জন্য মন্ডা উৎপাদন করার সুযোগ ছিল না। আধুনিক যুগেও শেরপুরের মন্ডা খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অসীম। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মন্ডার সুনাম বহুকাল ধরে। স্থানীয় ভাবে শেরপুর আর জামালপুরে বেশি খাওয়া হয় শেরপুরের মন্ডা। এছাড়াও আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার সময় মন্ডা নেওয়ার প্রচলন আছে। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে শেরপুরে অতিথি আসলে আপ্যায়ন করা হয় মন্ডা দিয়ে। শহর থেকে বাসায় ফেরার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য মন্ডা নেওয়ার প্রচলন যুগ যুগ ধরে।  

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ধরণের অনুষ্ঠানে মন্ডার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। উপটোকনেও মন্ডার ব্যবহার সর্বাগ্রে। কথিত আছে সদ্য বিবাহিতরা রাতে নতুন বধূকে খুশি করতে মন্ডা নিতে ভুল করে না। ই-কমার্সের কল্যাণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে শেরপুরের মন্ডা। সেই সাথে অনলাইনে উপহার দেওয়া নেওয়াতে গুরুত্ব পেয়েছে মন্ডা।

ইতিমধ্যে শেরপুর ছাড়িয়ে আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, দক্ষিণ কোরিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর, ইতালি গিয়েছে শেরপুরের মন্ডা। পাশের দেশ ভারতে প্রায় নিয়মিত ই যাচ্ছে। শেরপুর থেকে ভারতে যাওয়ার সময় কলকাতা, মেঘালয়, আসাম সহ বিভিন্ন প্রদেশে থাকা আত্মীয়দের বায়না থাকে শেরপুরের টাটকা মন্ডা নিয়ে যাওয়ার। 

শেরপুরের মন্ডা ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার।

মন্ডার পুষ্টি

স্বাস্থ্য বিভাগ মতে, মন্ডা তৈরিতে যেহেতু ছানা, ক্ষীর, এলাচ ও চিনি ব্যবহার হয় তাই মানবদেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, সি, ডি, বি-১২, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। নিয়মিত মন্ডা খেলে শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। হজমের জটিলতার কারণে যারা সরাসরি তরল দুধ খেতে পারে না তারা প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে দুধের বিকল্প হিসেবে মন্ডা খেতে পারে। শেরপুরের মন্ডাতে চিনির পরিমান কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত ভাবে খেতে পারে। মন্ডা শিশু ও বৃদ্ধদের সবচেয়ে বেশি উপকারি ও পছন্দের।

সাহিত্যে মন্ডা

”বিকেল বেলা খায়না কিছু গন্ডা দশেক মন্ডা ছাড়া,
সন্ধ্যা হলে লাগায় তেড়ে দিস্তা দিস্তা লুচির তাড়া”- সুকুমার রায়

প্রচাীন আমল থেকে খুবই পরিচিত কুস্তি খেলা। কুস্তিতে যারা অংশ নেয় তাদের কে বলা হয় পালোয়ান। দুজন করে লড়াই করে বীর বা পালোয়ানরা।  তারা মূলত নিজেদের শারীরিক ক্ষমতার শ্রেষ্ঠাত্ব দেখানোর চেষ্টা করে। কুস্তিতে বলবর্ধক ও পুষ্টিকর খাওয়া দাওয়া সবচেয়ে জরুরি। তাই তারা দিনে যে কয় বার (নিয়ম করে) খাবার গ্রহণ করে তা বলবর্ধক হতে হয়। সুকুমার রায়ের পালোয়ান কবিতা থেকে জানা যায়, পালোয়ানরা বলবর্ধক ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিকেল বেলা নিয়মিত ১০ টি করে মন্ডা খায়।

”এদের ফেলে ওগো ধনী, ওগো দেশের রাজা!
কেমন করে রোচে মুখে মন্ডা- মিঠাই-খাজা?”- কাজী নজরুল ইসলাম

মন্ডা সব সময় ই এলিট শ্রেণির লোকরা ভোগ করতো। মন্ডার উৎপাদনও ‍শুরু হয়েছিল রাজা বা জমিদারদের কেন্দ্র করে। সম্ভবত জাতীয় কবি নজরুণ ইসলাম সমাজের সম্পদশালীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ওদের জন্য মমতা কবিতা টি রচনা করেছেন। আর ধনীদের খাদ্য বিলাসী হিসেবে মন্ডা-মিঠাইর কথা উল্লেখ করেছেন। এই কবিতা আবারও প্রমাণ করে মন্ডার স্থান সবসময় ই ধনীদের খাদ্য তালিকায়।

ক. অসিত কুমার রায় মন্ডা মেঠাই মিষ্টি কবিতায় লিখেছেন, 

ভাঙ্গা সম্পর্ক যেই জুড়ল সেই দোলাতে মিষ্টি;
সকল সুখের খবর হয় যেন মন্ডা মেঠাই মিষ্টি

খ. কল্যাণ চন্দ্র রায় নবান্ন কবিতায় লিখেছেন,

নতুন ধানের খই আর-
মুড়ি-মুড়কি পিঠা
নবান্নে থাকে- চিরা-দই
আরো মন্ডা-মিঠা।

গ. অমিতাভ শূর ইচ্ছেপুরাণ কবিতায় লিখেছেন,

চালচুলোহীন হয়েও বাঁচে ইচ্ছেদেরই কাঁখে নিয়ে
চায় খেতে সে মন্ডা মিঠাই চায় সোনার সিংহাসন!

ঘ. আফরিনা নাজনীন মিলি আপ্যায়ন কবিতায় লিখেছেন,

খাবে তুমি মন্ডা মিঠাই
ভাবছি তোমার আর কি চাই?

ঙ. সীমান্ত প্রধান আইসো আমার গাঁয়ে কবিতায় লিখেছেন,

শীতলক্ষ্যায় ঘুড়তে নিমু
ছাউনী পাতা নায়ে;
মন্ডা-মিঠাই মুড়ি দিমু
আইসো আমার গাঁয়ে।

শেরপুরের মন্ডা
শেরপুরের মন্ডা খাচ্ছে আনশি

কাস্টমার ফিডব্যাক

মন্ডা উৎপাদকরা অতীতে কিভাবে কাস্টমার ফিডব্যাক নিয়েছে জানা নেই। তবে আমরা গত ২১ শে আগস্ট ২০২০ থেকে ফেসবুক আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেরপুরের মন্ডা ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করি। সে দিন থেকে ই আমরা কাস্টমার ফিডব্যাক পেতে শুরু করেছি। আমাদের কাস্টমাররা ফেসবুকে পোস্ট দেখে মন্ডা ক্রয়ে আগ্রহী হয়। তাদের অনেকে মন্ডা হাতে পাওয়ার পর সুন্দর করে ছবি তুলে গল্প বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ফেসবুকে রিভিউ বা ফিডব্যাক পোস্ট দেন। সেখান থেকে কয়েক টা ফিডব্যাকের সারাংশ এবং সোর্স লিংক যুক্ত করেছি।

  • রোকসানা আক্তার : “আমার পরিবারের সবাই শেরপুরের মন্ডা খুবই পছন্দ করেছে। বিশেষ করে আমার ছেলেরা কার থেকে কে বেশি খাবে তাই নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু করে দিলো।” সূত্র- ফেসবুক।
  • ফারহানা আসিফ : “আওয়ার শেরপুরের মন্ডা খুব মজা। আমার বাচ্চারা মন্ডা খুব মজা করে খেয়েছে।” সূত্র- ফেসবুক।
  • নুসরাত জাহান জলি : “আমরা ছোট বেলায় জামালপুর থাকতাম। সেই সুবাদে শেরপুরের মন্ডার স্বাদ আমার জানা ছিল। সেই আগের স্বাদই পেলাম। সূত্র- ফেসবুক
  • শারমিন স্মরণী : “আওয়ার শেরপুরের মন্ডা খুব মজার।  মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। আমার বাচ্চারা মন্ডা ইয়াম ইয়াম বলে খুব মজা করে খেয়েছে।” সূত্র- ফেসবুক।
  • সাবিনা ইয়াসমিন : “অনেক আগে একবার খেয়েছিলাম কিন্তু ঐটা একদম মজা ছিল না। তাই মন্ডার বিষয়ে বাজে অভিজ্ঞতা ছিল। আজকে শেরপুরের মন্ডা খেয়ে খুব ই মজা লেগেছে। এতো মজা যে মুখে দেয়ার সাথে সাথে গলে যায়। খুব ই মজা। ” সূত্র- ফেসবুক।
শেরপুরের মন্ডা
ভাইকে শেরপুরের মন্ডা খাওয়াচ্ছে বোন।

শেরপুরের মন্ডার অনলাইনে সম্ভাবনা

দেড় বছর আগেও ঢাকা বা অন্য জেলার মানুষ শেরপুরের মন্ডা সম্পর্কে জানতো না। গত দেড় বছর যাবৎ ফেসবুক ও ইন্টারনেটে শেরপুরের মন্ডা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখির কারণে হাজার হাজার মানুষ এই মন্ডা সম্পর্কে জেনেছে। তাদের মধ্য হতে শতশত মানুষ ইতিমধ্যে শেরপুরের মন্ডার স্বাদ নিয়েছে। এর ফলে নতুন নতুন সম্ভাবনা উদয় হয়েছে ও হচ্ছে। যেমন : 

  • অনলাইনের মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনের বাসায় উপহার পাঠানো যায় শেরপুরের মন্ডা।
  • পারিবারিক ও অফিসিয়াল অনুষ্ঠান গুলোতে মন্ডার প্রচলন শুরু করা যেতে পারে। স্বাদ, খিদা ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কোম্পানী গুলো তাদের মিটিং গুলোর নাস্তা বা স্ন্যাক্সে মন্ডা রাখতে পারে।
  • মন্ডা যেহেতু শিশু থেকে বৃদ্ধ সহ প্রায় সকলের প্রিয় তাই সুসংবাদ, আতিথ্যে, উপহার, বিয়েশাদি, ধর্মী অনুষ্ঠান সহ যেকোন উৎসবে শেরপুরের মন্ডার ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। কারণ এসব অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণির মানুষের আনাগুনা থাকে। আর মন্ডা স্বাস্থ্যের জন্য উাপকারি এবং এটি বিশেষ শ্রেণির খাবার।
শেরপুরের মন্ডা
শেরপুরের মন্ডা

মিডিয়া

  1. ঘরে বসেই কিনুন শেরপুর এর বিখ্যাত মন্ডা – টেকজুম। ২২ আগস্ট, ২০২০
  2. শেরপুরের মণ্ডা খ্যাতি ছড়াচ্ছে দেশ-বিদেশে – সাম্প্রতিক দেশকাল। ৬ নভেম্বর, ২০২০
  3. শেরপুরের মন্ডার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে – আলোকিত বাংলাদেশ। ২৮ নভেম্বর, ২০২০
  4. শেরপুরের মণ্ডা দেশজুড়ে – বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৮ জানুয়ারি, ২০২১
  5. অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে শেরপুরের মন্ডা – বাসস। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Leave a Reply

Scroll to Top