Our Sherpur

শেরপুরের ছানার পায়েস

”টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম আর মুক্তাগাছার মন্ডা, শেরপুরের ছানার পায়েস কেড়ে নেয়যে মনটা।”

Products list of Our Sherpur
শেরপুর জেলার যেসব পণ্য আওয়ার শেরপুর এ পাওয়া যায়।

ছানার পায়েসের ইতিহাস

শতবর্ষ আগে থেকে শেরপুরে উৎপাদন হয় ছানার পায়েস। জমিদার আমলেই মূলত ছানার পায়েসের সুনাম ও পরিচিতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার সময় শেরপুরের জমিদারগণ কলকাতা যাওয়ার সময় বিশেষ পদ্ধতিতে ছানার পায়েস নিয়ে যেতেন সাথে করে। তাদের কারণে অভিজাত শ্রেণির কাছে বিখ্যাত হয়ে যায় শেরপুরের ছানার পায়েস। পরে যখন জনসাধারণের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তা উৎপদান হতে শুরু করে তখন থেকে এর পরিচিতি, চাহিদা ও জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে।

জানা যায় শুরুতে কেবল ঘোষপট্টির ১-২টি দোকানে ছানার পায়েস উৎপাদন হতো। পরে ছানার পায়েসের পরিচিতি, চাহিদা ও জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে দোকানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে শহরের ১০-১২টি দোকানে নিয়মিত তৈরি হয় ছানার পায়েস।

ইন্টারনেটের একাধিক সংবাদ ও ফিচার পড়ে জানা যায়, ”নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শেরপুর ভ্রমণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন শেরপুর ভ্রমণ করেন তখন দূর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডার এর কর্ণধার শ্রী কানাই লাল ঘোষ তাঁকে ছানার পায়েস খেতে দেন। তিনি এই পায়েস খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন।” তা দূর্গাচরণের বর্তমান ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললেও একই তথ্য জানা যায়। তারা বলছেন, তখনকার সময় সংবাদেও তা ছাপা হয়েছে কিন্তু তাদের সংগ্রহে কোন পত্রিকার প্রমাণপত্র নেই।

সংবাদপত্রের কোন কোন জায়গায় পাওয়া যায়, ”পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান শেরপুর এলে তাকে ছানার পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল।” এই সংবাদ ইন্টারনেট ঘেটে অসংখ্য ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়।

News : Ekushey Television – ETV

ছানার পায়েসের রেসিপি

ছানার পায়েসের রেসিপি জানতে কথা হয়, আদি গিরীশ মিষ্টান্নালয়ের কারিগর ছানা বাবুর সাথে। তিনি স্বাধীনতার আগে থেকে এই দোকানে ছানার পায়েস তৈরির কাজ করে আসছেন। ছানা বাবুর হাত ধরে তৈরি হয়েছে ছানার পায়েস তৈরির অগণিত কারিগর। যারা শহরের বিভিন্ন দোকানে নিয়মিত ছানার পায়েস তৈরি করে নিজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন।

ছানার পায়েস তৈরির প্রধান উপকরণ খাঁটি দুধের ছানা, ক্ষীর, ময়দা ও চিনি।

প্রথমে পরিষ্কার একটি পাত্রে দুধ ঢেলে ৪০-৪৫ মিনিট উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিতে হয়। এরপর তাতে পুরাতন ছানার টক পানি বা লেবুর পানি অথবা ফিটকারি ছেড়ে দিয়ে ছানা করে নিতে হয়। অর্থাৎ দুধ ফেটে যায় এবং পানি আলাদা হয়ে যায়। এই ছানা পানি শূন্য করতে কেউ কেউ পরিষ্কার একটি তেনায় ঝুলিয়ে রাখে। আবার কেউ কেউ ঝুড়িতে ঢেলে দেন। যেন পানি শূন্য হয়ে অল্প সময়ে খামিরের ন্যায় জমাট বেঁধে যায়। এতে সময় লাগতে পারে আরও ৩০-৪০ মিনিট। তবে পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে পরিমাণের উপর নির্ভর করে। আমরা কেবল ছানার বাবুর অভিজ্ঞতা তোলে ধরছি।

পরটা তৈরির খামিরের মতো বানিয়ে সেখান থেকে সামান্য পরিমাণে খামির নিয়ে ১৫-১৮ ইঞ্চির দড়ির মতো বানিয়ে নিতে হয়। তারপর ৮-১০ টা করে দড়ি (ছানার রুল) এক সাথে স্কেল বা ছুরি দিয়ে ছোট ছোট গুটি কাটা হয়।

একটি পাত্রে পরিমাণ মতো চিনি আর পানি ৩০-৪০ মিনিট জ্বাল দিয়ে চিনির সিরা তৈরি করে নিতে হয়। এরপর চিনির সিরায় ছানার গুটিগুলো ছেড়ে দিতে হয়। এর আগে আলাদাভাবে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর বানিয়ে নিতে হয়। এক কেজি ক্ষীর তৈরি করতে অন্তত ৪ কেজি দুধ দুই-আড়াই ঘণ্টা ধরে জ্বাল দিতে হয়। ছানা থেকে গুটিগুলো তোলে ক্ষীরে ডুবিয়ে দিলে ঠাণ্ডা হয়ে তৈরি হয় মজাদার ছানার পায়েস।

সাহিত্যে ছানার পায়েস

”সাহিত্যে ছানার পায়েস
ছানার পায়েসের নেই যে কোন বিকল্প,
ছোট হোক বা বড়,
খেতে দিলে চায় যে সবাই আরও অল্প।”

সমকাল

কর্তা বড় ভালোবাসে
ছানার পায়েস খেতে
তাইতো সেদিন সাঁঝের বেলা
বসলো আসন পেতে।

গিনি্ন করে রাগারাগি
মেজাজ খানা চড়া
পায়েস পাতে পড়বে নাতো
হুকুম দিলেন কড়া।

আসলো পাড়া-প্রতিবেশী
বললো একি জ্বালা
ক্ষুধার্ত এই লোকটা তবু
শূন্য পড়ে থালা।

গিনি্ন বলে আসল খবর
নেই তোমাদের জানা
ডায়াবেটিসে ভুগছে সেতো
মিষ্টি খাওয়া মানা।

মাহবুবা চৌধুরী

বাংলাদেশে কত শত খাবার আছে ভাইরে,
আসল খাবার চিনে নেয়ার বিকল্প যে নাইরে।
খেতে চান ছানার পায়েস – যেতে হবে শেরপুর,
খেজুরগুড়ের আসল স্বাদ পাবেন শুধু মাদারীপুর।

দিলীপ গুহঠাকুরতা
শেরপুরের ছানার পায়েস
শেরপুরের ছানার পায়েস

কাস্টমার রিভিউ

আজ শেরপুরের ছানার পায়েস টেস্ট করলাম। খুবই মজার। অতিরিক্ত মিষ্টি ভালো লাগে না। পায়েসটা কম মিষ্টি হওয়াই ভাল লেগেছে।

মিনা ভৌমিক

… প্রথম ছানার পায়েশ নিয়েছি মেলায় গিয়ে। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে তাই ওয়েভ থেকে ছানার পায়েশের দ্বিতীয় ক্রেতা হয়ে গেলাম…।

তাসনিয়া হাসান

আজকে ইফতেরের টেবিলে বসার একটু আগে চলে আসলো শেরপুরের ছানার পায়েস। অনেক তৃপ্তি করে ইফতারের পর্ব শেষ করলাম শেরপুরের ছানার পায়েস দিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ এতো মজার ছিলো।

রুনি আহমেদ

শেরপুরের ছানার পায়েসের দাম

ছানার পায়েস কেবল শেরপুরেই উৎপাদন হয়। শেরপুরে উৎপাদিত ছানার পায়েস পাওয়া যায় অনলাইনে। প্রতি কেজি ছানার পায়েসের দাম পড়ে ৫৫০ টাকা। সবসময় আপডেট দাম জানতে কিংবা অর্ডার করতে ক্লিক করুন ফেসবুকে

ঐতিহাসিক দলীল

  • ১৯৯৯ সালের ৫ জুলাই দেবাশীষ সাহা রায় কর্তৃক প্রথম আলোতে “ছানা পায়েস : শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি” শিরোনামে একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ছানার পায়েস নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। দেবাশীষ লিখেছেন, “ব্রিটিশ শাসনামলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় শেরপুরের ঘোষপট্টিতে। তখন হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হয়।
  • ২০০৩ সালে প্রকাশিত মিনা ফারাহ এর “মধ্য বয়সের সঙ্কট” বইতে উল্লেখ আছে, “মেয়ে দেখতে এসে ওরা দু’দিন থাকবে। পরদিন সকালে ওদের প্রাতরাশ খাওয়ানোর দায়িত্ব পড়লো মামির ওপর। মামি ভালো রাধুনী। বেশ সেজেগুঁজে রান্নাঘরে এলেন। রান্না হলো লুচি, ছোট গোল আলুর তরকারি। গোল বেগুন ভাজা। সঙ্গে মুক্তাগাছার মণ্ডা এবং শেরপুরের ছানার পায়েস।”

রেফারেন্স

1 thought on “শেরপুরের ছানার পায়েস”

Leave a Reply

Scroll to Top