শেরপুর গজনী অবকাশ
বাংলাদেশের উত্তর সিমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। গারো পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভারতের মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে নদ-নদী আর পাহাড়ি সৌন্দর্য্যে ভরপুর, আমাদের এই শেরপুর। এ জেলার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। তার উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। শেরপুর জেলার ৫ টি উপজেলার মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলা সর্ব উত্তরে। ঝিনাইগাতী উপজেলা গারো পাহাড়ের সিমান্তে অবস্তিত হওয়ায় এখানে রয়েছে- গারো, কোচ, হাজং, বানাই এবং ডালু অধ্যুষিত উপজাতিদের বসবাস।
বর্ণনা
ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত গজনী অবকাশ। এটি শেরপুর জেলা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি গজনী অবকাশ ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিকট স্পট হিসেবে পরিচিত সকলের মাঝে। দর্শনার্থীদের ভ্রমন আরও আনন্দঘন করতে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এটিকে নতুন রুপে নির্মিত করা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্র হিসেবে। এ পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ি সৌন্দর্যমণ্ডিত।
গজনি, পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে রয়েছে সারি সরি গজারী, শাল, সেগুন, মহুয়া, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস সহ আরও শত শত নাম না জানা গাছ-গাছালি এবং লতাপাতার বিন্যাস। পাহাড়, বনানী, ঝর্ণা, টিলা, লেক, হ্রদসহ প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম সৌন্দর্য মিলে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয় ভ্রমণকারীদের ক্লান্ত মনে। লাল মাটির উঁচু পাহাড়, ছোট-বড় টিলা, মাঝে সমতল, গহীন জঙ্গল আর উপজাতীদের ঘরবাড়ির সৌন্দর্য্য বিষন্ন মনকে করবে উৎফুল্ল। তাই তো প্রতি বছর শীতকালে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে ভ্রমণ পিপাশু মানুষ গুলো ছুটে আসেন এ প্রাকৃতিক লীলাভূমি শেরপুরে।
পাহাড়ী ঝর্ণার গতিপথে বাধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক, লেকের মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ এবং লেক ভিউ পেন্টাগন, দুইয়ের মধ্যে দোদ্দুল্যমান ব্রীজ নির্মাণ করে তৈরি করা হয়েছে বন্ধন। কৃত্রিম লেকের শান্ত জলে নৌ বিহারে ভ্রমণের জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট এবং দৃষ্টিনন্দিত ময়ুরপঙ্খী নৌকা। পাহাড়ের চূড়ায় শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট উন্নতমানের দ্বিতল রেষ্ট হাউজ। পাদদেশ থেকে পাহাড়ের চুড়ায় উঠার জন্য রয়েছে দু’শতাধিক সিঁড়িসহ আঁকাবাঁকা আকর্ষণীয় পদ্মসিঁড়ি। গজনীতে পিকনিক কারীদের জন্য রয়েছে বিশুদ্ধ পানির নলকূপ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং রান্নাবান্নার আয়োজন।
পাহাড়ি চূড়া থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে ৬৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সাইট ভিউ টাওয়ার। সাইট ভিউ টাওয়ারের চূড়ায় উঠলে চারদিকে দেখা যায় ধূসর, আকাশী ও সবুজের সমারহ। গজনী অবকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য কৃত্রিম ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বৃহৎ ডাইনোসর ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি আমরাকে পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। বৃহৎ ভাস্কর্য গুলোর অন্যতম হলো দন্ডায়মান জিরাফ। গজনীতে তৈরী করা হয়েছে গ্রীক ধারায় চৌবাচ্চার দুইটি হাঁস এবং পানির খেলা।
সাদা সিমেন্ট দ্বারা ঝিলের পাড়ে নির্মিত আছে জলপরী ভাস্কর্য। জলপরীকে দেখে মনে হয়, জলে সাতার কেটে ক্লান্ত হয়ে পানি থেকে মাত্র উঠে শ্রান্ত-ক্লান্ত অবস্থায় বসে আছে। স্থাপত্যধর্মী ভাস্কর্য হলো ড্রাগন। ড্রাগনটি হা করে আছে মনে হয় সব খেয়ে ফেলবে, আসলেই তাই। ড্রাগনের দু’ মাড়ির (মাথা) ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হওয়া যায়। ড্রাগনের মাথা সবাইকে ভিতু করে দেয়, তবে এ ভীতি যেন আরও আনন্দ বাড়িয়ে দেয় ভ্রমণকারীদের। ড্রাগনের মাথা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে বের হওয়া একটা অন্যরকম অনুভূতি। আরও আছে মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক সহ অনেক কিছু।
গেটপাস
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী নিয়ে প্রবেশ করতে উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে গেটপাস নিতে হয়। বড় গাড়ী (বাস ও ট্রাক) ৩০০ টাকা, মাজারি গাড়ি (মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মেক্সি) ১৫০ টাকা, প্রাইভেটকার ১০০ টাকা এবং সিএনজি ৫০ টাকা ফি পদান করে গেটপাস নিয়ে ভিতরে যেতে হয়। সীমান্তে বিজিবির নকশী ক্যাম্পের পাশে দিয়ে যাতায়াতের সময় এই গেটপাস পদর্শন করাতে হয়। গজনীতে পছন্দ মতো রাইড ব্যবহারের জন্য আলাদা ভাবে ফি পদান করতে হয়।
যাতায়াত
রাজধানী ঢাকা থেকে শেরপুরের দুরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। শেরপুর আসার জন্য সড়ক পথে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়ত খুব সহজ। মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে শেরপুর আসতে এসি বাসে ভাড়া গুনতে হয় ৪০০ টাকা এবং নন-এসি বাসে ৩০০ টাকা। বাসে ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে আর মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে সময় লাগে ৩.৩০ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা। গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকেও বাসে আসা যায়।
ট্রেনে আসতে হলে কমালাপুর রেলওয়ে স্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে জামালপুর আসতে হবে তারপর সিএনজি করে শেরপুর আসতে হবে। জামালপুর থেকে শেরপুরের দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে যায় সড়ক পথে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে কুমিল্লা, বি. বাড়িয়া, ময়মনসিংহ হয়ে সড়ক পথে শেরপুরে আসা যায়। শেরপুর থেকে গজনীর দুরুত্ব ৩০ কিলোমিটার। সিএনজি ভাড়া রিজার্ভ ২৫০ টাকা (প্রতিজন ৫০ টাকা)।
গজনী কিসের জন্য বিখ্যাত?
গজনীতে অনেকগুলো রাইড রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রাইড যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে পর্যটকদের ভ্রমণ চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
শেরপুর থেকে গজনী কত কিলোমিটার?
শেরপুর থেকে গজনী প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
গজনী অবকাশ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুরে অবস্থিত।
শেরপুর গজনী পিকনিক স্পট
গজনী একটি পিকনিক স্পট। সারাদেশ থেকে বিশেষ করে শীতকালে পিকনকি করতে ছুটে আসে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গজনী অবকাশ ছবি
নিচে স্লাইড আকারে কিছু ছবি দেওয়া হলো। প্রতিটি ছবি ২ সেকেন্ড পর পর নিজে নিজে পরিবর্তন হবে। এছাড়াও পুরো পোস্টে কিছু ছবি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ছবি রূপসী শেরপুরের সৌর্যন্যে।
গজনী অবকাশে কি কি আছে?
oজনী অবকাশে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের উপযোগী রাইড, সুইমিং পুল, ঝুলন্ত সেতু, ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি আছে।
বেশি ছবি থাকার কারণে পড়তে ভালৈা লেগেছে।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে সৌন্দর্য বাড়ছে বছর বছর।