কোচ নৃ গোষ্ঠী

২৩১ কিলোমিটারের এই ঝিনাইগাতি রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে শেরপুর জেলার একটি উপজেলা। দেড়লাখ বাসিন্দা অধ্যশিত এ উপজেলায় জীবন ধারায় ছড়িয়েছে বাঙ্গালী, গারো আর কোচ নৃ গোষ্ঠীর মানুষ জন। চারটি ইউনিয়নের সমবায় করে ঝিনাইগাতিতে সালচূড়া, হালচাটি, বাকাকুড়া বানবরসহ অনেক গুলো কোচ অধ্যশিত গ্রাম আছে নলকুড়া ও কাংশাই ইউনিয়নে।

কোচদের সমাজ কাঠামো মাতৃতান্ত্রিক ছিল একসময়, এখন পিতৃতান্ত্রিক হলেও কর্ম দিয়ে নিজের প্রাধান্য ধরে রেখেছে কোচ মেয়েরা।

কোচরা গ্রামকে বলে গাং আর ঘরকে বলে হানক। পকৃতির কাছ থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে নিজেদের হানক ওরা নিজেই বানায়। কোচদের ঘরের দেওয়ালটা সাধারণত হয় মাটির। বাটার পুড়ানো ইটের পরিবর্তে রোদে শুকানো ইট দিয়ে দেওয়াল গাথে ওরা। আঠালো এঁটেল মাটির এসব ঘর বানাতে খরচ পরে কম। দেখতেও সুন্দর, টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং নিরাপদ। ছাদে ওরা ব্যবহার করে বাঁশ, কাঠ, চন এবং খড়। ওদের ঘরের দেওয়ালে নজর কাড়ে চমৎকার অলংকড়ন। কোচদের ঝকঝকে তকতকে ঘর, ওঠান দেখলেই বুঝা যায় সাংস্কৃতিক মানে উন্নত ওরা। ওদের পরিচ্ছন্ন জিবনধারার এ ঐতিহ্য একদিন-দুদিনের নয়, বংশ পরম্পরার।

নারী পুরুষ সবাই দল বেধে নেমে পরে কর্মে, ছোট বেলা থেকে পাওয়া স্বাবলম্বী জীবনের শিক্ষাটা কোচরা লালন করে সব কাজে। বাঁশ দিয়ে হরেক রকমের জিনিস বানানো কোচদের নিত্যদিনের কাজ। অবসর পেলেই ওরা বসে পরে বাঁশ এবং দা নিয়ে। চাষাবাদটা মুল পেশা বলে ওরা দৈনন্দিন কর্ম জীবনে উল্লেখযোগ্য কাজ, হরেক রকমের কৃষি পণ্যের পরিচর্যা।

ভাতের বিকল্প হিসেবে ওরা খায় কাসাবা (শিমলা আলু) নামের পাহাড়ি আলু। ভাত সবজিও খায়।

যে মেয়েরা তাঁতের কাজ জানে তাদের মেধা এবং ধৈর্য্য আছে। আছে সংসারী হওয়ার যোগ্যতা, এধারণা থেকে কোচ মেয়েরা হাত পাকায় তাতের কাজে। কৃষিজীবী কোচরা অন্যান্য গোষ্ঠীর মত পাহাড় টিলায় নয় ওরা আবাদ করে সমতল ভূমিতে। চাষাবাদের মত কঠিন কাজেও পিছিয়ে নেই কোচ মেয়েরা ফসলের মাঠে ওরা কাজ করে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে। ইতিহাসের গরিমা ঐতিহ্যের ধুতি সংস্কৃতির ঐশ্বর্য কোন দিকেই কমতি নেই কোচদের।

স্বাধীন কোচ রাজ্যের বাসিন্দা ছিল প্রায় ৭’শ বছর আগে। ওদের শ্রমনিষ্ঠ জীবন ধারা বৈচিত্র্য তাই ত এতো আকর্ষণীয় শেরপুর জেলার এ ঝিনাইগাতি উপজেলা।

Leave a Reply