Our Sherpur

তুলশীমালা চালের সাদা ভাত ।। কাকলী রাসেল তালুকদার

আমি জয়েন ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি। চাচাতো ভাই বোন মিলিয়ে আমরা ৯ ভাই বোন একসাথে পড়তে বসতাম। একসাথে খেতে বসতাম। শীতের সময়টায় সাধারণত উঠোনে রৌদের মধ্যে পাটি পেতে আমরা গোল হয়ে বসে আরবী পড়তাম হুজুর এর কাছে (বাড়িতে একজন হুজুর এবং একজন লজিং মাস্টার থাকতেন সবসময়)। হুজুর এর পড়া শেষ হলে নাস্তার বিরতি। নাস্তা শেষে স্যার এর কাছে স্কুলের হোমওয়ার্ক।

শীতের দিনের নাস্তার বিরতির জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কারণ আমার দাদা মৃত হাজী তালেব হোসেন তালুকদার খুব ভোজন রসিক ছিলেন এবং শীতের দিনে সপ্তাহে ৭ দিন ৭ রকমের নাস্তা বানানোর নির্দেশ দিতেন। তাই প্রতিদিন একটা আগ্রহ থাকতো আজকের নাস্তার মেনুতে কি থাকবে। চালের রুটি থেকে খুদের ভাত, ভাপা পিঠা থেকে জাউভাত সব থাকতো শীতের দিনের নাস্তার মেনুতে।

তুলশীমালার সাদা ভাত
শান মনের আনন্দে খাচ্ছে

আমরা যে পাটিতে বসে পড়তে বসতাম সেই পাটিতে বসেই নাস্তা শেষ করতাম। প্লেট/গ্লাস বাড়ির কাজের লোকজন ক্লিন করে নিয়ে যেতো। কিন্তু আমাদের ওখান থেকে উঠার নিয়ম ছিলোনা। আমার দাদার ধারণা ছিলো যদি ওখান থেকে উঠে যাই তাহলে পড়ার কনসেনট্রেশান থাকবেনা। অলসতা কাজ করবে। তাই যখন আরবী পড়া শেষ হওয়ার আগেই রান্নাঘর থেকে আসা স্মেল নিয়ে বুঝতে পারতাম আজকের মেনু কি তখন পড়াতে এমনি মনোযোগ থাকতো না। বিশেষ করে যেদিন জাউভাত রান্না হতো। রান্না শেষে একটা সুন্দর স্মেল উঠোন পর্যন্ত চলে আসতো। আমরা বুঝে যেতাম আজকে পোলাওর চাল দিয়ে গ্রেভি জাউভাত রান্না হয়েছে। সাথে কয়েক রকম ভর্তা এবং পাটালি গুড়। যার ঝাল পছন্দ তার জন্য ভর্তা আর যার মিষ্টি পছন্দ তার জন্য পাটালি গুড়।

ছোট বেলার গল্প কেনো করছি সেটা পরে বলছি এর আগে বলি গত রাতে ঊর্মি আপু মুরগী রান্নার একটা নতুন রেসেপি দিয়েছিলেন। আজকে সেটা ট্রাই করবো ভেবে রেখেছিলাম। আর আজকে আমি সকালে দুইটা ভালো সংবাদ পেয়েছি। মনটা অনেক ভালো ছিলো। তাই ভাবলাম আপুর নতুন রেসিপির সাথে দেলোয়ার ভাইয়ের তুলশীমালা চালের ভাত এর যুগলবন্দী হলে কেমন হয়! রাসেলকে বল্লাম অফিস থেকে চলে আসতে। জিজ্ঞেস করলো কেনো? বল্লাম তুলশীমালা চালের ভাত রান্না করবো তাই দুপুরে বাসায় খাবে।? রাসেলের সাদা ভাত পছন্দ। পোলাও পছন্দ করেনা। সেজন্য তুলশীমালা চাল দিয়ে ভাত চড়ালাম এক চুলায়। আরেক চুলায় ঊর্মি আপুর রেসিপি দেখে মুরগী রান্না শুরু করলাম।

চুলায় রান্না বসিয়ে প্লেট বের করতে গেলাম ড্রয়িং রুমের আলমিরা থেকে। হঠাৎ এমন সুন্দর একটা স্মেল পেলাম ড্রয়িং রুমে থেকেই। একদম ছোট বেলার সেই পোলাও চালের জাউভাত এর স্মেল এর মতো। আহা, মনে হলো কতোদিন পর সেই ছেলেবেলায় ফিরে গেলাম! রান্নাঘর থেকে তুলশীমালা চালের ভাতের স্মেল পুরা বাসা ছড়িয়ে গেলো। আর আমার মনে পড়ে গেলো সেই ছোটবেলার স্মৃতি। উঠোনে রোদে পাটি পেতে পড়তে বসা.. পড়তে বসেই ঘ্রানে অর্ধভোজন.. তারপর নাস্তা করা.. ভাই বোনদের সাথে কম্পিটিশন কে কার আগে নাস্তা শেষ করবে.. কতো স্মৃতি!

কাকলী রাসেল তালুকদার
কাকলী রাসেল তালুকদার

দুপুরের খাবার আজকে আত্মতৃপ্তির সাথে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। শানের বাবার জন্য প্লেট রেডি করলেও শান ওটার উপর হামলে পড়ছিলো। ভাত থাবা দেয় আর নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলে,”মা, উউউউ” ??

ধন্যবাদ দেলোয়ার ভাই। আপনার জন্য ২০-২৫ বছর পর আবার সেই ছোটবেলার স্বাদ, গন্ধ পেলাম। তুলশীমালা চালের সাথে আমার আজকের স্মৃতিটাও আজীবন থেকে যাবে। আপনার তুলশীমালা চাল প্রতি ঘরে ছড়িয়ে যাক এই দোয়া করি।

পোস্ট : উই গ্রুপ

Leave a Reply

Scroll to Top