Our Sherpur

তুলশীমালার গন্ধে রাজা ফেরেন ছন্দে

তুলশীমালার গন্ধে রাজা ফেরেন ছন্দে

আশরাফ আলী চারু

এক দেশে ছিলেন এক রাজা। রানি, যুবরাজ, রাজকন্যা, উজির, সেনাপতি আর প্রজাদের নিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো রাজত্ব। কোন অভাব ছিলোনা, দুঃখ ছিলোনা, কষ্ট ছিলোনা, ভেদাবেদ ছিলোনা, বৈশম্য ছিলোনা-শুধু সুখ আর সুখ। বলতে গেলে সুখময় রাজত্ব ছিলো, সুখময় দেশ ছিলো এটি।

এ রাজ্যের এত সুখ দেখে জ্বলে পুড়ে মরছিলো রাক্ষসী রাজকন্যা বিসুকা। সে সবসময় কামনা করতো এমন সুখের রাজ্যকে কেমন করে ধ্বংস করা যায়, কেমন করে এখানে রাক্ষুসী রাজত্ব কায়েম করা যায়। তাই সে একদিন পাচিকা রুপ ধারণ করে এলো রাজবাড়ীতে। ঠিক সে সময়ই এলো যখন রাজ পরিবারের জন্য একজন পাচিকা নিয়োগ দেয়া খুব দরকার।

Products list of Our Sherpur
শেরপুর জেলার যেসব পণ্য আওয়ার শেরপুর এ পাওয়া যায়।

বিসুকার রান্নার অভিজ্ঞতার কথা শুনে রাণীর খুব পছন্দ হলো। রাণীর পছন্দমতে তাকে রাজপরিবারের জন্য পাচিকা রুপে নিয়োগ দেয়া হলো। নিয়োগ পাওয়ার পর বিসুকাও নিজেকে ধন্য মনে করতে লাগলো এই ভেবে যে সে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

নিয়োগ পেয়ে রাতের রান্না করেছে বিসুকা। খাবারের টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে বিসুকা। রাজপরিবারের সদস্যরা খাবার খেতে এসে নতুন পাচিকার সুঘ্রাণ যুক্ত খাবারের সুঘ্রাণে মোহিত হয়ে গেলেন সবাই। রাজা তাকালেন বিসুকার দিকে। ভাবলেল, সত্যই সে ভালো পাচিকা। যার রান্নার এত সুঘ্রাণ তার রান্নায় অবশ্যই স্বাদ আছে।

সবারই জিহ্বার জল এসে গেলো সুঘ্রাণে। বহুদিন পর সুঘ্রাণযুক্ত খাবার খেলেন রাজ পরিবার। খেয়েদেয়ে সবাই প্রশংসা করলেন নতুন পাচিকা বিসুকার। ধন্যধন্য রব পড়ে গেলো নতুন পাচিকা বিসুকার নামে। রাজ সভায় আলোচনা হলো এ ব্যাপারে। সে যে সত্যই ভালো রাঁধুনি রাজার মুখ হতে রাজসভায় আলোচনার পর বিসুকার প্রতি সকলের একটা সুদৃষ্টি তৈরি হলো। যার ফলে সে রাজপরিবারে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির আসনে মর্যাদা পেলো। এভাবেই গড়িয়ে যেতে লাগলো সময়।

তুলশীমালার গন্ধে রাজা ফেরেন ছন্দে | YouTube

কিছু দিন পরে রাজসভার সবাই একটা বিষয় খেয়াল করলেন বিসুকা আসার পরে যতই দিন যাচ্ছে ততই রাজপরিবারের লোকগুলো মোটা হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মোখরোচক আলোচনাও করলেন, বিসুকার রান্নায় মনে হয় যাদু আছে যা খেয়ে রাজপরিবারের লোকেরা মোটা হয়ে যাচ্ছে। সব শুনে একদিন রাজা নিজেই সব স্বীকার করলেন। বললেন- মেয়েটার হাতে আসলেই রান্নার যাদু আছে। খেতে কি স্বাদ বলে শেষ করা যাবে না।

রাজার কথার সুর ধরে সকলের মুখেই মুখ রোচক খাবারের আলোচনা হলো ঠিকই কিন্তু আসল বিষয় জানলো না কেউই। তলিয়ে কেউ দেখেন না আসলে রাক্ষস কন্যা বিসুকা রাজপরিবার ধ্বংস করে এখানে রাক্ষস রাজত্ব কায়েম করতে চায়। তাই সে সুঘ্রাণযুক্ত খাবারে কৃত্তিম ঘ্রাণ আর মোটা তাজা করন ঔষদ মিশিয়ে রাজপরিবারকে অসুস্থ বানিয়ে মেরে ফেলতে চায়।

বিসুকার ইচ্ছামতই চলতে চলতে সত্যিই একদিন রাজপরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাজপরিবারের অসুস্থতায় উজির উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। নজর দিলেন বিসুকার উপর। উজিরের ধারণা ছিলো বিসুকা কোন সাধারণ মানুষ নয়। কিন্তু রাজা মশায়ের পছন্দের কারণে এতদিন তিনি কিছুই বলতে পারেননি। এবার তিনি সত্যিই বিসুকার আসল রুপ ধরে ফেললেন। সে যে রাক্ষস কন্যা এর প্রমাণ সংগ্রহ করে রাজার কানে তুললেন কথাটা। উজিরের কথা শুনে রাজা- রাজবৈদ্যিকে ডাকলেন। গণনা করিয়ে উজিরের কথায় সত্যতা পেয়ে বিসুকার উপর ক্ষুব্দ হলেন কিন্তু প্রকাশ করলেন না। রাজবৈদ্যিকে অনতি বিলম্বে বিসুকাকে আটক করার মন্ত্র রপ্ত করতে বললেন এবং বন্ধি করার নির্দেশ দিলেন।

রাজার নির্দেশ মতো উজিরকে সাথে নিয়ে রাজবৈদ্যি বিসুকাকে আটক করলেন এবং ভরে ফেললেন রূপার কৌটায়। সকলেই দেখতে পেলো বিসুকার আসল রুপ, সকলেই জানতে পারলো তার মনোভাসনা। বিসুকাকে আটক করে মুক্ত করলেন রাজপরিবারকে। রাজবৈদ্যির চিকিৎসায় সুস্থ হলেন রাজপরিবারের সকলেই।

তুলশীমালা চালের খাবার
তুলশীমালা চালের খাবার

কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়ালো সুঘ্রাণযুক্ত খাবারের অভ্যাস। এ কয়দিন সুঘ্রাণযুক্ত খাবার খেয়ে এখন আর অন্য খাবার ভালো লাগে না। যার ফলে না খেয়ে দিন কাটাতে হয় রাজ পরিবারের লোকদের। এভাবে কতদিন না খেয়ে আধা খেয়ে চলা যায়? একদিন রাজার নির্দেশে রাজ্যময় ঘোষণা দেয়া হলো সুঘ্রাণযুক্ত খাবার রান্না করতে পারে এমন একজন পাচক রাজপরিবারে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ খবর শুনার পর অনেক পাচক এলেন কিন্তু কারো রান্নায় সফলতা এনে দিতে পারলো না।

এ খবর শুনলো গ্রামের বুদ্ধিমান এক চাষা। যিনি নিয়মিত তুলশীমালা ধানের আবাদ করেন। তিনি বুদ্ধি করে তুলশীমালা কিছু চাল করে নিয়ে হাজির হলেন রাজবাড়িতে। ভালো পাচক হিসেবে পরিচয় দিলেন তিনি। রানি তাকে রান্না ঘর দেখিয়ে দিলেন। রাখাল মনের মতো করে তুলশীমালা চালের সাদা ভাত আর মুরগীর ঝোল করলেন। যথা সময়ে রাজপরিবারের লোকজন খেতে এসে এ পাচকের রান্নায় সুঘ্রাণ পেলেন। খেতে বসে স্বাদও পেলেন ফলে পেটপুরে খেলেন সবাই।

পরের দিন রাজসভায় নতুন পাচককে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন সে ও কোন মায়াবী কিনা? কৃষক তার আসল পরিচয় দিলেন, বললেন- এ সুঘ্রাণ কৃত্তিম নয়, এ সুঘ্রাণ প্রাকৃতিক। আমাদের তুলশীমালা ধানে এ সুঘ্রাণ আছে। আমরা কৃষকরা এর আবাদ করি। আর আপনার দুর্দিনে এই ধানের চাল আপনার কাজে লাগছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত।

Tulshimala
তুলশীমালা ধান

রাজা কৃষকের কাথায় খুশি হলেন। ঘোষণা দিলেন এখন থেকে রাজ্যে তুলশীমালা ধানের আবাদ বৃদ্ধি করা হোক, যাতে আমার প্রজারা সুঘ্রাণযুক্ত এ ধানের চালের ভাত খেতে পারে। এ ব্যাপারে রাজকোষ হতে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা হবে। আর এ কৃষক রাজপরিবারের পাচক হিসেবে এখানেই সপরিবারে থেকে যাবে।

কৃষক মনে মনে বললেন – তবে এতদিনে তুলশীমালা ধানের উপর নজর এলো রাজার। আর আসবেই না কেনো এর সুঘ্রাণ কি আর যেনতেন? ততোক্ষণে কৃষক, রাজার মুখ হতে শুনতে পেলেন – রাজা হাস্যজ্বল মুখে বলছেন, তুলশীমালার গন্ধে রাজা ফেরেন ছন্দে।

Leave a Reply

Scroll to Top