আরিফা মডেল কী?
বেসিক দক্ষতা উন্নয়নের জ্ঞান নির্ভর একটি গাইডলাইনের নাম আরিফা মডেল। মূলত বাস্তবমুখী লেখাপড়ার মাধ্যমে নিজের জড়তাগুলো দূর করে জ্ঞানকে শক্তিতে রূপান্তরের একটি পথ। এটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর। মূলত ফেসবুকে চর্চা করা হয় এ মডেলের টাস্কগুলো। যার ফলে দ্রুত পড়া, বোঝা, চিন্তা করা এবং লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
আরিফা মডেলের নামকরণ
আরিফা মডেলের নামকরণ হয়েছে ময়মনসিংহের একজন আরিফা খাতুনের নামে। তিনি একজন গৃহিণী, উদ্যোক্তা এবং সন্তানের মা। সবকিছু সামলে নিজ জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে ই-কমার্স সেক্টরে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অনন্য করেছে তাকে। তার চেষ্টা দৃষ্টি কেড়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যারের।
তিনি ঢাকার বাহিরের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং জেলা পর্যায়ের ই-কমার্সের কনটেন্ট বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি মডেল তৈরি করেন। আরিফা খাতুন যেহেতু ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে দেশি পণ্যের ই-কমার্সে এগিয়ে যেতে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেছেন তাই তার নামে মডেলটির নামকরণ করা হয়েছে আরিফা মডেল। আরিফা খাতুনের উদ্যোগের নাম আফাফ ক্রিয়েশন।
আরিফা মডেলের উৎপত্তি
আরিফা মডেল আইডিয়াটি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাবেক প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ স্যারের। ঢাকার বাহিরের ই-কমার্স উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থীসহ সকলের ”লেখাপড়ার বেসিক দক্ষতা” উন্নয়ন এবং ”জেলা পর্যায়ের ই-কমার্সের কনটেন্ট” বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আরিফা মডেল ধারণাটি (১লা জুন, ২০২১) সকলের সামনে আনেন। শুরু থেকে এ মডেল সকলের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ যেকোন প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই মডেল চর্চা করতে পারে। চর্চা করা যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
আরিফা মডেলের উদ্দেশ্য
বিভিন্ন খাতে অবদান রাখার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে এ মডেল। দিনে দিনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উদ্দেশ্য। যেমন: সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে দেশি পণ্যের জিআই নিবন্ধন। আরিফা মডেলের কিছু উদ্দেশ্য নিম্নে দেওয়া হলো—
- লেখাপড়ার বেসিক দক্ষতার উন্নয়ন।
- দ্রুত আই রিডিং (চোখ দিয়ে পড়া) অভ্যাস তৈরি করা।
- দ্রুত বোঝতে ও চিন্তা করতে পারা।
- দ্রুত টাইপ করতে পারা।
- নিজের ভাষায় লেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
- সরাসরি বিক্রয় পোস্টের পরিবর্তে স্টোরিং টেলিং আকারে পোস্ট লেখার দক্ষতা অর্জন করা।
- দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জড়তা দূর করে আত্মবিশ্বাসী হওয়া।
- ইংরেজির ভয়ভীতি দূর করা। ইংরেজি পড়তে, বোঝতে ও নিজের মতো লিখতে পারা।
- এফ-কমার্স উদ্যোগ এগিয়ে নিতে মার্কেটিং বেসিক দিকগুলোর জ্ঞান অর্জন করা।
- যেকোন বিষয়ের উপর নিজের মতো করে আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখতে ও বলতে পারা।
- ব্যক্তিগত পরিচিতি বৃদ্ধি করা।
- দেশি পণ্যের ই-কমার্সে কনটেন্ট বৃদ্ধি করা।
- ইন্টারনেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে বিনামূল্যে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
- দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অবদান রাখা।
প্রত্যেক পোস্টে আরিফা মডেল বাক্যটি ম্যানশন এবং আরিফা খাতুনকে ট্যাগ করতে বলা হয় কেন?
শুরুর দিকে জেলা পর্যায়ের ই-কমার্স, ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন দিকে পোস্টে ‘আরিফা মডেল’ বাক্যটি উল্লেখ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রাজিব আহমেদ স্যার। নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করার সময় আরিফা আপুর ফেসবুক আইডি ট্যাগ করার জন্যও স্যার বলেছেন। আরিফা আপুর প্রোফাইলে সব জেলার পোস্ট একসাথে পাওয়াই ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রত্যেক পোস্টে ‘আরিফা মডেল’ বাক্যটি ব্যবহারের ফলে ফেসবুকের সার্চ বক্সে আরিফা মডেল গুরুত্ব পেয়েছে এবং ইন্টারনেটে আলাদা একটি শক্তিশালী কিওয়ার্ড সৃষ্টি হয়েছে।
এই মডেলের শক্তি কী?
সহজ কথায় বললে জ্ঞান ও পরিচিতি এই মডেলের শক্তি। উভয়ের সমন্বয়ে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া এর লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও জড়তা এবং লেখাপড়ায় অনাগ্রহ খেয়াল করা যায়। এ মডেল চর্চা ফলে উভয় সমস্যা দূর হয়ে আত্মবিশ্বাস এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এই মডেল নিজের মতো করে গুছিয়ে লেখার এবং কথা বলার পথকে সুগম করে। এগিয়ে রাখে চারপাশের মানুষ থেকে। এগুলোই এই মডেলের শক্তি।
আরিফা মডেলের ধাপগুলো
দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার নাম আরিফা মডেল। কয়েকটি ধাপেধাপে শেষ করতে হয় এই মডেল। এতে নিয়মিত সময় দিতে হয় ৬ মাস বা তার বেশি। ধাপগুলো নিচে দেওয়া হলো-
- ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট: ২০১৯ সালের ১০ই মার্চ নিজের প্রোফাইলে ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট প্রকল্পটি শুরু করেন রাজিব আহমেদ স্যার। প্রতিদিন ২টি করে পোস্ট দিতেন ১০ মিনিট রাইটিং-এর। ১১ই মে ২০১৯ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দিয়েছে ১২২ টি পোস্ট। প্রতিটি পোস্ট ২ মিনিটে পড়ে ৮ মিনিটে একটি কমেন্ট করাই ছিল ১০ মিনিট রাইটিং-এর নিয়ম। কমেন্ট লেখা হতো মূলত পোস্ট পড়ে যা বোঝা গেল কিংবা মাথায় যা আসলো তা নিয়ে। তবে ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট যখন থেকে এই মডেলের টাস্ক হিসেবে গণ্য হয়েছে তখন থেকে কমেন্ট করার পাশাপাশি সেই কমেন্ট এই মডেল অনুসরণ করা যেকোন একটি গ্রুপে পোস্ট দিতে হয়। তা এ মডেল চর্চার আপডেট হিসেবে গণ্য হয়। রাইটিং পোস্ট লিংক এখানে।
- প্রেজেন্টেশন পোস্ট: এটিও রাজিব আহমেদ স্যারের রচিত দক্ষতা উন্নয়নমূলক একটি প্রকল্প। এতে রয়েছে মোট ১০০টি বিষয়। ধারাবাহিকভাবে নিজের মতো করে প্রতিটি বিষয়ে লিখতে হয় একটি করে পোস্ট। এরপর তা পোস্ট করতে হয় ‘ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি)’ গ্রুপে। তবে এই প্রকল্প এ মডেলের আওতাভুক্ত হওয়ার পর থেকে ডিএসবি কিংবা দেশি পণ্যের যেকোন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে হয়। এর উদ্দেশ্য নিজের উন্নতি নিজেই বোঝতে পারা। প্রেজেন্টেশন পোস্ট লিংক এখানে।
- ইংরেজি পাঠ্যবই: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইগুলো (ইংলিশ ফর টুডে) পাঁচ বার করে আইরিডিং (শব্দ না করে দেখে দেখে রিডিং পড়া) করতে হয়। প্রত্যেকবার পড়া শেষে ডিএসবি কিংবা দেশি পণ্যের যেকোন গ্রুপে আপডেট পোস্ট দিতে হয়। বইগুলো ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন।
- ক্যাটাগরি পোস্ট: সার্চ ইংলিশ ওয়েবসাইটে ৫টি (0, 1, 2, 3 & 4) ক্যাটাগরিতে কয়েকশ পোস্ট আছে। জিরো ক্যাটাগরি একদম বেসিক পোস্ট, লিখেছেন রাজিব আহমেদ স্যার। ওয়ান ক্যাটাগরি কিছুটা অ্যাডভান্স। এভাবে প্রতিটা ক্যাটাগরি অ্যাডভান্স হয়েছে। এগুলো কেবল আই রিডিং করতে হয়।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স বই: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি প্রথম বর্ষের বইগুলো একবার করে রিডিং পড়তে হয়। এই মডেলের অন্যদের টাস্কের ন্যায় এগুলোরও দিতে হয় আপডেট।
- ইংরেজি পত্রিকা: বাংলাদেশের যেকোন দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা ১০০ দিন পড়তে হয় এবং ফেসবুকে দিতে হয় আপডেট। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ার কারণে ভয় দূর হয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। ইংরেজি পত্রিকা পড়ার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দৈনিক ডেইলি স্টার ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকা। মূলত পত্রিকাদ্বয় সহজে সংগ্রহ করতে পারা এর অন্যতম কারণ।
- ইংরেজি ম্যাগাজিন: টাইমস, ইকোনমিস্ট-সহ যেকোন ৫০টি ইংরেজি ম্যাগাজিন পড়তে ও আপডেট দিতে হয়। তবে নিউজ উইক, ফোর্বস, ফরচুন, হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ ইত্যাদিও কেউ কেউ পড়েন। তবে এসব পত্রিকার পুরাতন সংখ্যা পড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়।
- প্রিন্সিপাল অব মার্কেটিং: বিশ্ববিখ্যাত লেখক পিলিপ কটলারের ‘প্রিন্সিপাল অব মার্কেটিং’ বইটি এক বার রিডিং পড়তে হয় এবং আপডেট দিতে হয় প্রতিটি পরিচ্ছেদের। তবে সম্প্রতি রাজিব আহমেদ স্যার উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন যাদের পক্ষে সম্ভব প্রতিটি পৃষ্ঠার আপডেট-রিভিউ পোস্ট দেওয়ার। এতে করে ঐ বইতে থাকা মার্কেটিং বিষয়ক প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে মাথায় গেঁথে যায় এবং পোস্ট সংখ্যার সাথে নিজের পরিচিতি বাড়ে।
- কিশোর ক্লাসিক: সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্লাসিক বইগুলো পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্যারিয়ারের সংগ্রামের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, শূন্য থেকে যেকোন কিছুর পেছনে লেগে থাকার মানষিকতা তৈরি হয় ইত্যাদি। এটি সরাসরি এই মডেলের টাস্ক না হলেও ভালোভাবে জোর দেওয়া হয় কিশোর ক্লাসিক পড়ার ব্যাপারে।
নোট: লেখাপড়া এই ধাপগুলোকে ‘রিডিং সিলেবাস’ও বলা হয়।
আরিফা মডেলের পরের ধাপ কী?
নিজেকে দক্ষ করা এ মডেলের প্রথম ধাপ। এটি শেষ করতে নিয়মিত সময় দিতে হয় অন্তত ৬ মাস। এই মডেলে উন্নতিগুলো নিজের ক্যারিয়ারে কাজে লাগানোই এ মডেলের দ্বিতীয় ধাপ। এ পর্যায়ে এসে কেউ নিজ ফিল্ডে কনটেন্ট লেখা কিংবা পাবলিক স্পিকিং করেন দক্ষতার সাথে। আবার যারা শিক্ষার্থী তারা শিক্ষা জীবনে এগিয়ে থাকেন, চাকরি প্রার্থীগণ এগিয়ে থাকেন বেসিক দক্ষতায়।
দেশি পণ্যের ই-কমার্সে আরিফা মডেল
দেশি পণ্যের প্রায় সব উদ্যোক্তা ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে নিজের উদ্যোগ পরিচালনা করছে। তাই উদ্যোগ ও পণ্য নিয়ে লেখালেখি, ক্রেতার সাথে যোগাযোগ-সহ সবকিছু করতে হয় উদ্যোক্তাকে। এই মডেলের কাজগুলো শেষ করলে তা খুব সহজে এবং দ্রুততার সাথে করা যায়। এছাড়াও দেশি পণ্যের ই-কমার্সকে তোলে ধরতে কনটেন্ট তৈরি কিংবা স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথোপকথন করা যায় দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে।
এই মডেলের কারণে দেশি পণ্যের ই-কমার্সে দিনে দিনে বাড়ছে কনটেন্টের সংখ্যা। এ মডেল শেষ করা উদ্যোক্তাদের অনেকে দেশি পণ্যের ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে পরিশ্রম করছেন বিভিন্ন পর্যায়ে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারগণ গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন আরিফা মডেল।
উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, এই মডেল অনুসারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছে সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট, এসএমই ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)-সহ সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কথা। যার ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশি পণ্যের ই-কমার্স এবং তৈরি হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ।
আরিফা মডেল ও ই-কমার্স ক্লাব
ই-কমার্স খাতের দ্রুত প্রসার ঘটলেও তা শিক্ষা খাতে গুরুত্ব পায়নি। এ কারণে কোনো স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-কমার্সের উপর আলাদা কোর্স কিংবা বিষয় নেই। তাই নেই ই-কমার্স নিয়ে নিয়মিত আলোচনাও। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-কমার্সের আলোচনা বাড়াতে কাজ করছে এ মডেল শেষ করা দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা।
তাদের প্রচেষ্টায় ই-কমার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে। আগ্রহ প্রকাশ করেছে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বেশ কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ই-কমার্স খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির সুযোগ করে দেওয়া উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য। যেন শিক্ষার্থীগণ ই-কমার্স খাতে ক্যারিয়ারমুখী হয় ভবিষ্যতে।
আরিফা মডেল ও জিআই পণ্য
স্থানীয় পণ্যের জিআই স্বীকৃতি ও নিবন্ধন সরকারের সম্পদ। বাংলাদেশে জিআই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে। জামদানি পণ্যের জিআই নিবন্ধনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সুফল। দেশে উৎপাদিত হাজারের বেশি পণ্য থাকলেও গত ১০ বছরে নিবন্ধন পেয়েছে মাত্র ১৬টি।
এগুলো হলো— জামদানি শাড়ী, বাংলাদেশ ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাপারিভোগ, বাংলাদেশ কালিজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলী আম, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বগুড়ার দই এবং বাংলাদেশের শীতলপাটি।
দেশি পণ্যের জিআই নিবন্ধন সংখ্যা বাড়াতে আন্তরিক ভাবে কাজ শুরু করেছে এ মডেল অনুসরণকারী উদ্যোক্তারা। তারা ডকুমেন্টেশন করেছে, মুক্তাগাছার মন্ডা, মণিপুরি শাড়ি, চটপটি ইত্যাদি নিয়ে। তাদের কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
এ মডেল অনুসরণ করে ভালো করার উপায়
সাধারণত যেকোন দিকে তুলনামূলক সুযোগ বেশি রাজধানী ঢাকায়। সে তুলনায় পিছিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরগুলো। ইন্টারনেট সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছে। তাই দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে এ মডেলের সুফল লাভ করা যায়। মূলত যে যেখান থেকে এ মডেলের ধাপগুলো শেষ করে সে উন্নতি অর্জন করে।
তারাও আপডেটগুলো দেওয়ার কারণে ফেসবুকে পরিচিতি পাচ্ছে, ক্রেতাদের সাথে দ্রুত ও সাবলীলভাবে যোগাযোগ করতে পারে, বিক্রয় পোস্টের পরিবর্তে স্টোরি টেলিং পোস্ট লিখে। জেলা প্রশাসকের অফিস-সহ সর্বত্র দেশি পণ্য নিয়ে আলোচনা করতে পারে, ই-কমার্স ক্লাব তৈরিতে অবদান রাখছে, পণ্যের তথ্য জোগাড়ে কাজ করছে ইত্যাদি। এর ফলে তারাও এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার উদ্যোক্তাদের মতই।
আরিফা কারা?
অনেকে ভাবতে পারে এ মডেলের আরিফা কী কেবল আরিফা আপুই? রাজিব আহমেদ স্যার বহু পোস্ট কমেন্টে বলেছেন যারাই কাজগুলো শেষ করেন তারাই একজন আরিফা। মডেলটি আরিফা আপুর নামে হলেও তাকেও শেষ করতে হয়েছে সবগুলো ধাপ এবং তিনিও অন্যদের মতো কনটেন্ট তৈরি, জিআই পণ্যের ডকুমেন্টেশনসহ সব কাজ করে থাকেন বা করতে হয়।
নেতৃত্ব বিকাশে আরিফা মডেল
নেতৃত্ব একটি বিশেষ গুণ ও দক্ষতা। এটি যোগ্যতা প্রমাণের ভিত্তিতে অর্জন করতে হয়। এ মডেলের ধাপগুলো শেষ করার কারণে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রতিভা প্রকাশ করা আরও সহজ হয়। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করতে, প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে, জিআই পণ্যের ডকুমেন্টেশনসহ সব দিকে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়। আর দল হয়ে কাজ করতে প্রয়োজন হয় নেতৃত্বের। এ মডেলের অধীনে অনেকগুলো নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে সারাদেশে।
পাবলিক স্পিকিং এ আরিফা মডেল
জনসম্মুখে বক্তব্য দিতে শক্তি হিসেবে কাজ করে এ মডেল। এর যথেষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুকে। এখানে সেবতি’স ড্রেস কর্ণারের স্বত্বাধিকারী আরজেনা হক সেবতির কথা বলা যায়। তিনি ছিলেন একজন গৃহিণী, দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা এবং সন্তানের মা। কিন্তু এ মডেল শেষ করে এখন বিভিন্ন ইভেন্ট, সেমিনারসহ ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্পিচ দেন দেশি পণ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে। তা সম্ভব হয়েছে এ মডেলের টাস্কগুলো শেষ করে নিয়মিত থাকার কারণে।
কীভাবে ভূমিকা রাখে ক্যারিয়ারে?
যেহেতু আরিফা মডেল লেখাপড়ার শক্তিকে উজ্জীবিত করে তাই দক্ষতার সাথে লেখাপড়া কেন্দ্রিক যেকোন কাজ করার সুযোগ বাড়ে। কেউ চাইলে কনটেন্ট তৈরি করতে পারে কিংবা অন্য যেকোন দিকে বেশি জানতে পারে। এ মডেলের কারণে পড়ার অভ্যাস, সার্চ করার অভ্যাস এবং জানার অভ্যাস তৈরি হয়। তাই এসব কারণে প্রতিযোগি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে এ মডেল শেষ করা লোকজন। যেটি তার যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রকাশে ভূমিকা রাখে।
আরিফা মডেল কাদের জন্য?
যারা লেখাপড়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে চায় এ মডেল তাদের জন্যই। এ মডেলের সকল কার্যক্রম লেখাপড়া কেন্দ্রিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়— কাস্টমার নিয়ে স্টোরি টেলিং করা, দেশি পণ্যের কনটেন্ট তৈরি করা, দেশি পণ্য নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলা, ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য দেওয়া, পরিক্ষার খাতায় নিজের মতো করে লেখতে পারা, পড়া অভ্যাস তৈরি করা ইত্যাদিতে যারা ভালো করতে চায় এ মডেল মূলত তাদের জন্য।
জেলা ওয়েবসাইট তৈরিতেও দারুণভাবে অবদান রাখছে আরিফা মডেল।
বিস্তারিত লেখার জন্য ধন্যবাদ
আরিফা মডেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য বহুল লেখা। যারা আরিফা মডেল নিয়ে জানতে চান তারা সহ অনেকেই উপকৃত হবেন।
আমি আশা করি অনেক ধরনের প্রশ্নের সমাধান করতে ভূমিকা রাখবে এই ওয়েবসাইট।