বসু পরিবার প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা:
”ইংরেজী E অক্ষরের আদলে টিনের চৌচালা স্কুলঘর। সামনের প্রসারিত সবুজ মাঠ নালিতাবাড়ির ফুটবলের উন্মুক্ত চাতাল। মাঠের পশ্চিমে প্রাইমারি স্কুল; আরেকটু এগুলে ক্রীড়াসংস্থানার একতলা ভবন। এই মাঠে হাবুল দত্তের মাঠ কাঁপানো খেলা দেখেই আমার কুট্টিববেলার দিন শুরু। দীর্ঘদেহী হাবুল সকলকে ছাড়িয়ে একটু ঝুঁকে একটু বেঁকে ক্ষিপ্ত গতিতে বল নিয়ে মাঠ কাঁপিয়ে ছুটছে ছঁটছে সারা মাঠ হুর হুর হুররে হুররের ভেতের করতালির ভেতর উত্তেজনার ভেতর তিনি বল নিয়ে ছুটতে ছুটতে এক কিকে গোল। গোল। গোল। রেফারি ইন্দ্র ভূষণ রায় বাঁশি দিতে না দিতে গোলের আনন্দে মাঠে আছড়ে পড়ছে দর্শক।
এই ছিল আমার কুট্টিবেলার দিনগুলো। হাবুল দত্ত মানেই মাঠ কাঁপানো খেলা। মাঠভর্তি দর্শক। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই মাঠ দর্শকপূর্ণ। হাবুল দত্ত সব পজিশনে খেলেন। পুরোমাঠ জুড়ে খেলেন। আমাদের সময়ে হাবুল দত্ত স্টার। কীংবদন্তী। নালিতাবাড়ি ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলাতে তাঁর কদর।
ঠিক তেমনি নালিতাবাড়ির ফুটবল চর্চার ইতিহাসের প্রবাদ পুরুষ হারান বোস। আমবাগানের হারান বোস। হান্টার্স টিমের হারান বোস। যে বছর তারাগঞ্জ স্কুলের সুর্বণ জয়ন্তী হলো সে বছরই হারান বোসের কথা জানলাম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্র চন্দ্র পালের বরাতে। চমকে উঠলাম। হান্টার্স টিমই নালিতাড়ির প্রথম সংগঠিত ফুটবল ক্লাব। ফুটবলের সাথে জড়িয়ে আছে এ তল্লাটের মানুষের আবেগ ভালাভাসা।
উঠান কেন্দ্রিক কানামাছি দাড়িয়াবান্দা গোল্লাছুট কিংবা বৌ পলান্তি খেলতে খেলতে বাঙালি তরুন ফুটবলকেই ভালোবেসে ফেলে। বাইশ জনের নব্বই মিনিটের স্বাসরুদ্ধ গতিশীল খেলা– না ভালোবেসে উপায় নেই। খেলা মানেই ফুটবল। সারাবছর চর্চা। আর পায়ে পায়ে বলের সংগত বাঙালির কিশোরের শুরু হয় বাতালি বড় লেবু বা জাম্বুরা দিয়ে। যেকোন স্থানিকের মতো আমার উত্তর জনপদে অন্য যে কোন খেলায় চেয়ে ফুটবলই জনপ্রিয়। আমাদের শৈশব কৈশোর ফুটবলময়।
ব্রিটিশ বাংলায় এই নালিতাবাড়ি প্রান্তিকের প্রান্তিক– যাকে বলে পাণ্ডববর্জিত এলাকা। তাবলে কিন্তু নালিতাবাড়ি কিন্ত নির্জীব ছিলো না। কী রাজনৈতিক কী সাংস্কৃতিক চর্চার দিক থেকে নালিতাবাড়ি তখন অনেক অনেক এগিয়ে। গত শতের দুয়ের দশক নালিতাবাড়ি সংগঠন চর্চা দশক। গঠিত হয়েছে ”আর্যনাট্য সমাজ” ননাটকের দল– দলের স্থায়ী মঞ্চ। তাও আবার ঘূর্নয়মান। নাটকের দৃশ্যের প্রয়োজনে দুই পাশেই সেট প্রস্তত থাকে। শুধু প্রয়োজনে ঘুরালেই হত। মুক্তাগাছা ছাড়া ময়মনসিংহের অন্য কোথায় ছিল না এমন মঞ্চ। আমরা ধরে রাখতে পারিনি। আধেক গেছে দেশভাগ উত্তর নাট্যকর্মীদের দেশত্যাগের ফলে আধেক গেছে রাজনৈতিক বাতারণ ও ভোগাইয়ের করাল গ্রাসে।
দুয়ের দশকের শেষের দিকে সংগঠিত ফুটবল সংঘ হিসেবে আর্বিভূত হয় হারান বোসের প্রযত্নে Hunters Team. নগেন্দ্র চন্দ্র পাল লিখেছেন, “হান্টার্স টিম নামে এক অপরাজেয় ফুলবল খেলোয়াড় দল গঠিত হয়েছিল। শুধু শেরপুর শহর নয় ময়মনসিংহেও সগৌরবে প্রতিযোগিতা করেছে এই দল।” আমি পড়েই চমকে উঠেছিলাম।
জানার ভেতর এই পর্যন্ত তথ্য নিয়ে আমার অনেকদিন কেটে গেছে। ফুটবল কৈশোরের পর আর খেলিনি। ফুটবল প্রেমের কারনে নানা তথ্য উপাত্ত পেতাম মাত্র। কয়েক বছর আগে পেলাম “বসু পরিবার”– একটি পরিবারের উত্থান পতনের আখ্যান। হারান বোস নিয়ে নানা কথা।
এ ধরণের স্মৃতি কথা কিংবা পারিবারিক বয়ান স্থানিক ইতিহাস চর্চায় সামাজিক উপাদান হিসেবে শুধু নয় একটি তল্লাট গড়ে ওঠার নানা উপাদনে ভরা থাকে। আর স্থানিক ইতিহাস বির্নিমাণ ছাড়া একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস গড়ে উঠতে পারে না। স্থানিক ইতিহাসের কারিগরদের কৃতকর্ম ধৃত থাকে এ সকল স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী বা কোন স্বারকগ্রন্থে। অভীতের সাথে সংযুক্ততা সৃষ্টি করতে না পারলে প্রশস্ত বর্তমান নির্মিত হয় না। আর আজকের বর্তমানই তো আগামী প্রজন্মের ভিত্তি। কাজে বইটি হাতে পেয়ে যদিও ফটোকপি আমি খুবই আমোদিত হয়ে ওঠি। আন্দোলিত হয়ে উঠি।
সাম্প্রতিক সময়ে আরো কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে আব্দুস সামাদ ফারুকের সম্পাদনায় আলো হাতে আঁধারের যাত্রী (২০১৭)। এ তল্লাটের বাতিঘর ডাঃ আবদুল হামিদ। তাকে আবর্তিত করে গড়ে ওঠা এই স্মারকগ্রন্থ একটি চমৎকার কাজ। শিক্ষিকা জোবায়দা খাতুন তাঁর দীর্ঘ শিক্ষক জীবন ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া নিয়ে লিখেছেন “ভোগাইকন্যার আত্মকথন”। “মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ি” লিখেছেন যোদ্ধা আবদুর রহমান তালুকদার। যোদ্ধা হিসেবে ইতিহাসের নানা তথ্য উপাত্ত তুলে এনেছেন তাঁর বইতে।
এছাড়াও তিনি শিকড়ের সন্ধানে (২০১৩) সালে একটি স্মারক বের করেন পার্ষদের সাথে যুক্ত থেকে। নালিতাবাড়ির সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও রাজনীতির প্রাঙ্গনে এই তালুকদার গোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যদিও এটি একটি পারিবারিক দলিল। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে এ অঞ্চলে আসেন গত শতাব্দীতে। সামাজিক পরিকাঠামো নির্মানে এই বইটি গুরুত্বের দাবী রাখে। আধ্যাপক আব্দুস সালাম লিখেছেন, নালিতাবাড়ির মাটি ও আমি এ ছাড়াও শহীদ নাজমুল স্মারক (২০০৭) প্রকাশিত হয়েছে শহীদ পরিবারের প্রযত্নে। নালিতাবাড়ির ইতিহাস পরিগঠনে তথ্য উপত্তাতের উৎস এইবই গুলো।
ঠিক তেমনি আরেকটি বই বসুপরিবার (২০০৫)। যদিও প্রকাশ ভারতের হুগলী থেকে কিন্তু বইয়ের বিষয় নালিতাবাড়ী। দেশভাগ পূর্ব একটি পরিবার ও তৎকালীন সময়ের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষঙ্গে স্মৃতি কথা লিখেছেন বিমল বসু। এই বসু পরিবারে জন্ম হান্টার্স টিমের উদ্যোক্তা হারান বসু (১৯০৮–১৯৩৭)। শুধু তাই নয় আর্যনাট্য সমাজ গঠন ও থিয়েটার হল স্থাপনে হারান বসু পরিবার অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। এইটিমে আরো ছিলেন রাখাল বোস প্রভাত নাগ অবনী কর মাখন সোম আফাজ উদ্দিন আহম্মদ সহ প্রমুখ ।
বসু পরিবার বইয়ের প্রচ্ছদ:
বইটির ভুমিকায় কালিপদ সেনগুপ্ত পারিবারিক তৎপরতা নিয়ে চমৎকার লিখেছেন, “শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান ও সাধারণ ভাবে সমাজের বিবর্তনে প্রতিটি পরিবারেরই একটা ভূমিকা থাকে। আর সে ভূমিকাটা অগ্রগতির পক্ষে বিপক্ষে বা নীরবতবার যাই-ই হোক না কেন এই তিনের দ্বন্দ্বের মধ্যেই আমরা সমাজ বিবর্তনের ছবিটা খুঁজে পেতে পারি।”
এই থিয়েটার হলেই অভিনীত হয় পথের শেষ, আলীবাবা দেবলাদেবী রাতকানা, বঙ্গে বর্গী, গৌতম ব্যাধ, কালকেতু- ফুল্লরা ইত্যাদি নাটক মঞ্চায়িত হয়। হারান বোসের অভিনয়ের জন্য নয় আনী এস্টেটের জমিদার “একসেট তসরের পোশাক” উপহার দেন। শুধু তিনি নন– তার সমসামায়িক তরুনদেন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সে সময় নালিতাবাড়ি মুখরিত ছিল। যোগ্য কেউ হারান বোস ও তার সহযোদ্ধাদের তৎকালীন সাংস্কৃতিক তৎপরতা নিয়ে লিখবেন এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
আমাবাগান নালিতাবাড়ীর সাংস্কৃতিক কাযর্ক্রমের কী দেশভাগ পূর্ব কী দেশভাগ উত্তর বা স্বাধীনতা পর কোন না কোন ভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ছিল ক্রীড়া ও রাজনৈতিক কার্যক্রমও। কমিউনিষ্ট ভাবাদর্শে নেতা কর্মী থেকে শুরু করে পার্টির অফিস পর্যন্ত এখানে ছিল। এখান থেকে নালিতাবাড়ি আড়াই আনী বাজারে যে প্রাদেশিক কৃষক সন্মেলন ১৯৪৩ অনুষ্ঠিত হয় তার সাংগঠনিক কার্যক্রম আমাবাগান কমিউনিষ্ট পার্টি অফিস থেকে পরিচালিত হয়।
ইতিহাসবিদ সুপ্রকাশ রায় “নালিতাবাড়ি প্রাদেশিক কৃষক সন্মলেন পূর্ব ভারতে কৃষক আন্দোলনের মাইল ফলক।” বলে মন্তব্য করেছেন। কাজে কাজেই আমবাগান নালিতাবাড়ির নানা কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নানা তৎপরতার সাথে জড়িয়ে আছে। স্থানিক ইতিহাসের ধরনই এমন স্থানিক পরিসরে কোন না কোন পাড়া মহল্লা নানা কাজে তৎপর হয়ে পড়ে। অন্য মহল্লাতে যে হয় না তা নয়। স্থানিকে কোন একটি পাড়া বা মহল্লা কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। খাল ভাঙা বড়ুয়াজানি তারাগঞ্জ মধ্য বাজার শিমুলতলি কাকরকান্দি প্রভৃতি মহল্লায় কোন না কোন ভাবে নাট্য চর্চার প্রবনতা বিদ্যমান ছিল।
স্বাধীনতার অব্যহতির পর পর মনজুরুল আহসান বুলবুল ও তপন চক্রবর্তীর যৌথতায় প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা “রক্ত পলাশ” প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে এটিই স্বাধীন বাংলাদেশে নালিতাবাড়ীর প্রথম পত্রিকা। যদিও আগেরপড়ে হাতে লেখা বা দেয়ালিকা প্রকাশ পেতো বিভিন্ন দিবসে। অসীম দত্ত হাবুলে শাপলা শালুকের আসর। দেয়ালপত্রিকা “টুংটাং, কলতান ও আমবাগান।
হান্টার্স টিম ছাড়াও নালিতাবাড়িতে তখন ছিল তারাগঞ্জ স্কুল ফুটবল একাদশ। ছিল নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার আমবাগান স্পোটিং ক্লাব। আড়াই আনী বাজারের বি কে ইয়াং ক্লাব গাইলারা ফুটবল টিম, আর স্বাধীনতার পর অগ্রদূত স্পোটিং ক্লাব, যুব মুসলিম লীগ, প্রভাতি সঙঘ, নবরূপী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী প্রভৃতি সংগঠন।
ফুটবল প্রসঙ্গে নানান কথায় ঢুকে পড়েছি যাতে করে হারান বসুর সময়কে ছোঁয়া যায়। হারান বসু “১৯৩৫ সালে জুবিলী উৎসবে ঢাকা শহরের ওয়ারি ক্লাব মাঠে যে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলা হয়েছে তাতে,”বিমল বসু লিখেছেন,” হারান বসু সর্বোত্তম খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।”
অজপাড়া নালিতাবাড়ির আমবাগান থেকে যাওয়া একজন হারান বসুর এই অর্জন শুধু তার নয়– এই তল্লাটের অর্জন।ঢাকার ওয়ারী ক্লাব (১৮৯৮) এই উপমহাদেশে প্রাচীনতম ক্রীড়া সংগঠন। এই সংগঠনের হয়ে হারান বসুর খেলা চাট্টিখানি কথা নয়। বিমল বসু লিখেছেন,”আমাদের বাড়িতে বাবার যে বাঁধানো বড় ফটো আছে তাতে ইউনিফর্ম পরা বাবার বুকে পদকটি শোভা পাচ্ছে।”
ঐ পদক তো হারান বসু গলায় না নালিতাবাড়ির গলাও শোভা পাচ্ছে।হয়তো এপ্রজন্ম সে ইতিহাস ভুলে গেছে। সংগঠিত ফুটবল দল গঠন ও সাংবাৎসরিক কার্যক্রম হারান বসুর ওয়ারী ক্লাব মাঠ বিজয়ের পর গতিশীলতা অর্জিত হলেও মাত্র ২৯ বছরে তিনি হইলোক ত্যাগ করেন। “বাংলা ১৩৪৪ সালে মাঘ মাসে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে।”
এই প্রতিভাবান হারান বসুর মৃত্যুর পর বসু পরিবারের পক্ষ হারানের কনিষ্ঠ ভাই নাট্যাভিনেতা রাখাল বসুর প্রচেষ্টায় হারান বসুর নামে Haran Memorial Shjeld ও হারান বসুর স্ত্রী নামে Binapani Runners up cup competition হতো।
কয়েক বছর হারান বসু নামে ট্রুনামেন্ট পরিচালিত হলেও দেশভাগের পর আর হয়নি। বিমল বসু স্মৃতিকথায় তার পরিবারের কথা ছাড়াও লিখেছেন ব্যক্তি সমাজ সময় ও তৎকালীন সময়ের মঞ্চ নাটকের কথা। গ্রাম বাংলায় তখন নাটকই প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। সেই কাজটি বিমল বসু ১৯৫৭ সালে দেশত্যাগের পূর্বমহুর্ত করে গেছেন। হারান বসুর মতোই তিনি বলিষ্ট মঞ্চ চরিত্রাভিনেতা ছিলেন। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সস্পর্কে সম্যক অবহিত কেউ নিশ্চয় বিমল বসুদের কাজ কারবার সম্পর্কে মূল্যায়ন করবেন।
বিমল ১৯৫৭ সালে দেশত্যাগ করলেও বারবার ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। মন তার নালিতাবাড়িতে দেহ হুগলতে। বিমল লিখেছেন,”আমি বাঙালী বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলার মাটিতে খেলেছি বাল্যের খেলা।…. ভাবে ভাবনায়, চিন্তা ধারায় পথের প্রতিটি ধূলিকনা ছিঁটিফোঁটা বলে দেয় এ ধূলিকনা মুছে ফেললেও বাঙালীত্ব দূররহবে না। সবুজ মায়ার পরশ ঘেরা ঐ তরুরাজি আমায় হাত্তছানি দিয়ে ডাকে বাংলা মায়ের কোলে।” এই সেদিনে বিমুল বসুর সাথে ওভারফোনে কথা বলছিলাম। তিনি নালিতাবাড়ি প্রসঙ্গে এমন ভাবে স্থান ব্যক্তি ঘটনাগুলো রলছেন যেন গতকালই সেখান থেকে এলেন। অথচ মাঝখান থেকে বয়ে গেছে পঞ্চাশ বছর। তার স্মৃতিশক্তি তারিফ না করে পারছি না।
নবরূপী ক্রীড়া সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বিমুল বসুকে সম্বর্ধনা দেন ১৯৯৬। এর আগেও তিনি ১৯৮২ সালে নালিতাবাড়িতে এসেছেন। নববূপী আশির দশকে বেড়ে ওঠা সংগঠন। এই আমবাগান থেকেই হাকাম হীরা শ্যামল দত্ত সেতু দত্ত সহ আরো আরো আমাদের অগ্রজেরা এই সংগঠনটি গড়ে তুলেন কী শারীরিক গঠন কী ভাষা দক্ষতা কী নাট্যচর্চা কিংবা খেলা সব কিছুতেই এই আশির তুর্কিরা আমাদের সংগঠিত করেছেন। তারাই গত শতাব্দীর শেষ প্রজন্ম যারা আর্দশকে সামনে ব্যক্তি সমাজ পরিবার গঠনে আমাদের উৎসাহিত করতেন।পরবর্তী জীবনে যতটুকু সাংস্কৃতিক চর্চা ও চর্যার মধ্যে দিয়ে গেছি নবরূপীই আমার উৎসপীঠ বলে জানি এবং মানি। ইতিবাচক সমাজ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষপ সংগঠন চর্চা। যে সমাজে যত সংগঠন সে সমাজ তত গনতান্ত্রিক।
বিমল বসুকে নবরূপী সম্বর্ধনা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। নবরূপী চর্চা সব সময় ছিল ইতিহবাচক চর্চা। শুধু সম্বর্ধনাই যথেষ্ট নয় প্রয়োজন হারান ববসু ও তার পরবর্তী সময়ের নানা কাজক্রম সম্পর্কে তরুন প্রজন্ম অবহিত হবার পরিসর নির্মান করা।এটি বিভিন্ন ভাবেই হতে পারে। প্রয়োজন বাংবাৎসরিক সাংগঠনিকতা।
নালিতাবাড়ির এই প্রবাদপুরুষ হারান বসুর নামে “হারান বসু স্মৃতি পদক” প্রবর্তিন করা বা স্মারকবক্তৃতা মালা। শুধু যে হারান বসুকে নিয়ে তা নয় — যারা নালিতাবাড়ি পরিগঠনে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন সে সম্পর্কে ধারাবাহিক কার্যক্রম হতেই পারে। পজেটিভ বাংলাদেশ নির্মান শুধু যে সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য তা কিন্ত নয়– স্থানিকের কাজ স্থানিকেই করে যারা আলো হাতে আঁধারের যাত্রী তাদের কাজকারবার অন্যের কাজে পৌছে দেকার মধ্য দিয়েই আমাদের অগ্রজদের প্রাপ্য সন্মান দিতে পারি। ইতিহাস নির্মানে যাদের ভূমিকা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে আমাদের আগামী পথ নির্মাণ করতে হবে। হোক সে ক্রীড়া বা রাজনীতি বা নাট্যচর্চা বা কোন সমাজ সংস্কারমূলক সাংগঠনিক তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি।”