শেরপুরের সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য
হাছিনা আক্তার শিমুল : বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ বলা হলেও এদেশে কিন্তু সোনার খনি নেই! মূলত কৃষিতে অপার সম্ভাবনার জন্যই বাংলাদেশকে সোনার দেশ বলা হয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে দুই ধরনের কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয়। যথা – ১. খাদ্যজাতীয় এবং ২.অর্থকরী ফসল। খাদ্য জাতীয় ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, বিভিন্ন ধরনের মসলা।
এরমধ্যে ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানাজাতীয় শস্য। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান অনেক বেশী। ভুট্টা রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় সেইসাথে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল। ভুট্টায় রয়েছে ফাইবার, ফলিক এসিড এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন। ভুট্টা বাংলাদেশের চরাঞ্চলের জন্য খুবই চাষযোগ্য একটি ফসল। এতে রোগবালাই এবং পোকার আক্রমণ কম হয় বলে উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম। ভুট্টার জীবনকাল দীর্ঘ, তাই এরসাথে একসাথে একই জমিতে অনায়াসে আরো কয়েকটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশের মোট জমির প্রায় ৫ শতাংশ বা ০.৭২ হেক্টর মিলিয়ন জমি চরাঞ্চল। চরাঞ্চলের মাটি বেলে এবং পানিধারণ ক্ষমতা খুবই কম। জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম বলে জমির উর্বরতা শক্তিও কম। আর তাই চরাঞ্চলের ফসলের ফলন অন্যান্য এলাকার চেয়ে সবসময় কম থাকে। চরাঞ্চলের ক্রপিং প্যাটার্ন বা ফসল বিন্যাস হল বোরো ধান ও পতিত আমন ধান। আকস্মিক বন্যার জন্য আমন ধান ঝুঁকিপূর্ণ আবার পানি ঘাটতির কারণে বোরো ধানও তেমন লাভজনক নয়। তবুও কৃষকরা তাদের খাদ্য ও গো খাদ্যের জন্য বোরো ধানের চাষ করতে বাধ্য হয়।
এমতাবস্থায় শেরপুরের চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য সম্ভাবনাময় একটি কৃষিপণ্য হচ্ছে বেবিকর্ণ এবং ভুট্টা। “বেবিকর্ণ” শুধু সবজিই নয় এর সবুজ গাছ গরুর জন্য উন্নত পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চরাঞ্চলের পরিত্যক্ত বেলেমাটি এ ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। পোকার উপদ্রব এবং রোগের সংক্রমণও এই ফসলে কম থাকে। তাই উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে কম।
বেবিকর্ণ যেহেতু গাছ সবুজ অবস্থায় সংগ্রহ করা হয় তাই এর সবুজ পাতা ও কাণ্ড গো – খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই গো- খাদ্য সাইলেজের মাধ্যমে ৩-৫ মাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এটি দ্রুত বর্ধনশীল, রসালো, স্বচ্ছ, রাসায়নিক এবং দূষিত পদার্থমুক্ত। তাই যে কোনো পর্যায়ে নিরাপদে গরুকে খাওয়ানো যেতে পারে। যা খাওয়ানোর ফলে গরুর দুধ বৃদ্ধি পায়।
বেবিকর্ণ বেশ প্রশস্ত দূরত্বে রোপণ করা হয়। তাই এর মাঝের সারিতে ডাল জাতীয় শস্য চাষ করা সম্ভব। এতে করে কৃষকরা একই সময়ে বেবিকর্ণ, গো- খাদ্য এবং ডাল তিনটি ফসল একসাথে পেতে পারেন। চরাঞ্চলের এক একর জমিতে বেবিকর্ণ ফলাতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আর এই বেবিকর্ণ সব্জী বিক্রি করে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সেইসাথে পাওয়া যাবে প্রায় ২২টন সবুজ গাছ বা গো খাদ্য।
বাংলাদেশে যদিও বেবিকর্ণের তেমন পাইকারি বা খুচরা বাজার গড়ে উঠেনি। তবে বিভিন্ন চায়নিজ রেস্টুরেন্ট এবং ফাস্টফুড শপগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্যুপে তো বটেই বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক ফাস্টফুড আইটেম তৈরী করা যায় বেবিকর্ণ দিয়ে। তাই বেবিকর্ণ হতে পারে ভবিষ্যৎয়ে বাংলাদেশের জন্য এক অপার সম্ভাবনাময় সবজী। অন্যদিকে পরিপক্ব ভুট্টা মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি হাস- মুরগী, মাছের ও গোখাদ্য হিসেবে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। কৃষিপণ্য এবং ফুড বিজনেস নিয়ে যেসব উদ্যোক্তা কাজ করছেন তারা এই বিষয়টা ভেবে দেখতে পারেন।
শেরপুরের সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য আর কি কি অছে কমেন্ট করুন।