আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই
ওই পাহাড়ের ঝর্ণা আমি,
ওধাও হ’য়ে বই গো, ওধাও হ’য়ে বই।
শেরপুর রাজার পাহাড়
”কর্মময় ব্যস্ত জীবন থেকে একটু স্বস্তির নিশ্বাস পেতে মানুষ আজকাল খোঁজে প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর যদি সেটা হয় শান্ত, স্নিগ্ধ, মনোরম, নির্জন কোনো সবুজ পাহাড় তাহলে তো সোনায় সোহাগা, তাইনা? এই নির্জন সুন্দর পাহাড়টির নাম ‘রাজার পাহাড়’। এর অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে চলে আসতে হবে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের শ্রীবরদী উপজেলায়। পৌর শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরেই এই পাহাড় অবস্থান।
মেঘালয় ঘেষা অবারিত সবুজের সমারোহ রাজার পাহাড়। যেন সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। এখানে রয়েছে ছোটবড় অনেক টিলা। প্রায় দেড়শ ফুট উঁচু টিলাও আছে। সেখান থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের অনেক কিছুই। শেরপুরের গারো পাহাড়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট এটি। এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কারো মনকে নিঃসন্দেহে আন্দোলিত করবে। এই পাহাড় নিয়ে প্রচলিত আছে কিছু মিথ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে প্রাচীনকালে সম্ভ্রান্ত রাজবংশের এক রাজার অবস্থান ছিল এখানে এবং তারই নামানুসারে এই পাহাড়টির নামকরণ করা হয় রাজার পাহাড়।
আরও পড়ুন : শেরপুরের দর্শনীয় স্থান।
এখানকার অনেক পাহাড়ের মধ্যে এই পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশী। এর চূড়ায় শতাধিক হেক্টর সমতল ভূমি রয়েছে। সবুজ আর নীলের সংমিশ্রণ নিয়ে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই পাহাড়টি যেন আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! এর নৈসর্গিক দৃশ্য মনকে করে আবেগতাড়িত। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা এ পাহাড় শীতকালে প্রতিদিন শতশত মানুষের কোলাহলে পূর্ণ হয়ে উঠে। পাশেই আদিবাসী জনপদ বাবেলোকোনা। এখানে গারো, কোচ, হাজং অধ্যুষিত আদিবাসীদের বসবাস।
অসংখ্য উঁচু টিলায় ঘেরা সুন্দর ছিমছাম একটি গ্রাম। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে গড়ে উঠেছে জনবসতি। পাহাড়ের টিলার এক কোণে রয়েছে পাগলা দারোগা নামের জৈনেক এক ব্যক্তির কাঁঠাল, লিচু ও কলার বাগান। অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত পাহাড়ের চারপাশে রয়েছে হরেকরকম প্রজাতির গাছ গাছালি। এখানে যেতে সরু পথ আর অদ্ভুত নির্জনতা, পাখির কলকাকলি যে কাউকে মুগ্ধ করবেই।
প্রকৃতির নির্জনতার পাশাপাশি এখানে আরো আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংষ্কৃতি, সংরক্ষণ ও চর্চার কেন্দ্র বাবলোকোনা কালচারাল একাডেমী, জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ ও মিলনায়তন। উপজাতীয়দের কারুকার্য মন্ডিত উপাসনালয়, গীর্জা, মন্দির ও অসংখ্য প্রাকৃতিক নিদর্শনের সমাহার। বর্ষাকালে কর্ণঝোড়া ডেউফা নদী জোয়ারে কানায় কানায় ভরে উঠে। কিন্তু দিনের শেষে ভাটা পড়ে শুকিয়ে যায় নদীর পানি। এর বুক জুড়ে রয়েছে বিশাল বালুচর। এটি যেন পাহাড়ের কোল ঘেঁষা বিকল্প সমুদ্র সৈকত।
এ পাহাড়ের পাশে রয়েছে বিডিয়ার ক্যাম্প, বিট অফিস, কারিতাস ও রাবার বাগান। রাজার পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি আদিবাসীদের জীবনযাত্রার নানাদিক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেন অনেকেই। এই পাহাড়ের কাছাকাছিই রয়েছে লাউচাপড়া অবসর কেন্দ্র। এছাড়াও রয়েছে বনফুল নামের ব্যক্তিমালিকানাধীন আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র। শেরপুর শহর থেকে যেকোনো যানবাহনে করে রাজার পাহাড় চলে আসা যায়। তো প্রকৃতির নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে অবসরের বিনোদন হিসেবে সময় সুযোগ করে চলে আসতে পারেন।
Table of Contents
লেখক : হাছিনা আক্তার শিমুল