Our Sherpur

কবি তালাত মাহমুদ

কবি তালাত মাহমুদ

কবি সাহিত্যিকদের সুযোগ্য অভিভাবক, প্রচন্ড সাংগঠনিক কর্ম-ক্ষমতার অধিকারী— যার একনিষ্ঠ পরিশ্রম আত্যন্তিক প্রচেষ্টা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় আজ শুধু শেরপুর জেলাতেই নয়, বলা যায় সাহিত্য জগতে কবিদের পথ চলা। তাঁরই হাত ধরে শেরপুর আজ খ্যাতি পেয়েছে “কবিদের শহর” বলে। তিনি হলেন বর্তমান “কবি সংঘ বাংলাদেশ” এর কেন্দ্রীয় সভাপতি কবি তালাত মাহমুদ। তিনি ছোটকাল থেকেই বহুমূখী প্রতিভার সাক্ষর রেখে আসছেন। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, কলামিষ্ট, প্রবন্ধকার, সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী।

কবি তালাত মাহমুদ
কবি তালাত মাহমুদ

স্বাধীনতা দশকের  কবি তালাত মাহমুদ ১৯৫৭ সালের ২০ আগস্ট শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মোঃ মনিরুজ্জামান, মাতা- বেগম হুসনা বানু। ছ’ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ২০২৪ সালের ৩ মার্চ শেরপুর সদর হাসপাতালে তালাত মাহমুদ ইন্তেকাল করেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকেই দৈনিক দেশ (বিলুপ্ত) দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সাহিত্য দর্পণ (১৯৭৩-১৯৮৬) সাপ্তাহিক সফিয়া (বিলুপ্ত) দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক জনকন্ঠ (বিলুপ্ত) সাপ্তাহিক পূর্বকথা, ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক/ সম্পাদক/প্রধান সহকারী সম্পাদক/সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কবির ১৭ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘স্বর্গের দ্বারে মর্তের চিঠি’ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৭৯ সালে ১৪ আগস্ট কবির ২২তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ডাকসু’র তৎকালীন মিলনায়তন সম্পাদক খন্দকার আব্দুর রহিমের ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হয় ‘গীতিলতিকা’ কাব্যগ্রন্থটি।

কবি তালাত মাহমুদ ১৯৮০ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে নিরলস সাহিত্য চর্চা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিবতার জন্য আশির দশকের সাড়া জাগানো ‘জিলবাংলা সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তিনি রাজধানী ঢাকায় ১৯৮১ সনে জাতীয় সাহিত্য সংগঠন “লেকশি” প্রতিষ্ঠা করেন এবং অদ্যাবধি লেকশি’র সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

কবি তালাত মাহমুদ শেরপুর জামালপুর ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশেই সমানভাবে পরিচিত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কবি তালাত মাহমুদকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৫ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত কবিতা পত্রে কবির একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হলে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং কবির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় উঠে।

তালাত মাহমুদ ময়মনসিংহ আনান্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। তিনি আইন শাস্ত্রে লেখাপড়া করলেও আইনজীবি হননি। এ হতভাগা কবি কুড়ি বছর বয়সে শ্লোপয়েজিং এর নির্মম শিকার হয়েছিলেন এবং দীর্ঘ ১২ বছরকাল মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন।

১৯৮২ সালে সর্বদলীয় একুশে উদযাপন পরিষদ কর্তৃক ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ পান। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলো ‘অপমৃত্য অপলাপ’ (উপন্যাস), লোকহীন লোকারণ্য (কাব্য), লাল সিঁড়িতে নীল পেয়ালা (কাব্য), নিষিদ্ধ কবিতা (কাব্য), টাউট মুক্ত সমাজ চাই (প্রবন্ধ গ্রন্থ), উদাম গতরী ন্যাংটা বয়ান এবং নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম (গবেষণা) ইত্যাদি লেখা  বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

কর্ম জীবনে অসামন্য অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউল সমালোচক সংঘ সহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে কবিকে সংবর্ধনা জানায়।

ব্যক্তিজীবনে কবি তালাত মাহমুদ এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী মিসেস আসমাউল হুসনা একজন শিক্ষিকা। কবির পুত্র তানসেন মাহমুদ ইলহাম শিশু ছড়াকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তার দুটি ছড়া প্রথম প্রকাশিত হয়।

কবি তালাত মাহমুদ যতদিন বেঁচে আছেন, কবি সংঘ বাংলাদেশ’র মাধ্যমে সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ সহ সারাদেশের কবিদের যোগ্য হিসেবে মূল্যায়ন করে যেতে চান।

গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলে ভরপুর দেশের প্রান্তিক জেলা শেরপুরকে বাংলাদেশে জেলা হিসেবে নতুন ভাবে পরিচিতি করিয়ে দিতে চান। কবি তালাত মাহমুদ শেরপুরে কবি সম্মেলনের প্রবর্তক। কবি আনিসুর রহমান রিপন, কবি ও এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, কবি ও গবেষক মোস্তফা জিন্নাহ এবং কবি প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. আবদুল আলীম তালুকদার সহ আরও অনেকের সক্রিয় সহযোগিতায় শেরপুরে ২০০০ সাল থেকে কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

কবি তালাত মাহমুদ বর্তমানে দৈনিক ঢাকা রিপোর্ট অনলাইন পোর্টালের প্রধান সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া দৈনিক পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন, কালের ডাক, শ্যামলবাংলা ২৪ ডটকম, শেরপুর টাইমস, দেশবার্তা বিডি ডটকমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ও নিউজ পোর্টালে নিয়মিত কলাম লিখছেন। তালাত মাহমুদ ১৯৯৯ সাল থেকে প্রকাশিত শেরপুর ও জামালপুর জেলার “সৃজনশীল সাহিত্য সাময়িকী ‘আমরা তোমারই সন্তান” এর সম্পাদক ও প্রকাশক।

উল্লেখ্য, তুলশীমালার সুগন্ধে পর্যটনের আনন্দে ‘কবিদের শহর’ শেরপুর সুদূর অতীত কাল থেকেই সাহিত্য সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা অনুশীলনের জন্য পরিচিত। সুদূর অতীত কাল থেকেই অনেক কৃতী কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদের জন্ম হয়ে আসছে এই শেরপুরে।

১৮৬৫ সনে “মাসিক বিদ্যোন্নতিসাধিনী” নামে একই সাহিত্য পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায়। ১৮৮০ সনে শেরপুরে চারু প্রেশ স্থাপিত হয় এবং ১৮৮১ সনে সাপ্তাহিক চারুবার্তা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫ সনে মীর মোশাররফ হোসেনের বিখ্যাত “বিষাদ সিন্ধু” গ্রন্থটি শেরপুরের চারু প্রেশ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। গিরিশচন্দ্র সেন কতৃক অনুবাদকৃত পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম পারা ছাপা হয় শেরপুরের চারু প্রেশ থেকেই।

কবি তালাত মাহমুদের পঙক্তি

মানুষের কাছে ভালোবাসা নেই
আছে শুধু স্বার্থের রসিকতা

আমি এক অপরাধ আপরাধী নই
আমার সবচেয়ে বড় শত্রু আমি নিজেই

এই আমার দেশ
প্রতিদিন মনে হয় প্রথম দেখলাম
অনন্য পরিবেশ
জীব-বৈচিত্রে হারিয়ে গেলাম

Leave a Reply

Scroll to Top