মানুষের ভালবাসা
’সুযোগ থাকার পরও যারা ভালবেসে শেরপুরে রয়ে গেলেন তাদেরই একজন হচ্ছেন ডাঃ এম এ বারেক তোতা। আমার শ্রদ্ধেয় তোতা ভাই। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান হিসেবেই জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম স্কুল নবীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাস ফোরে রোহিনী কান্ত হোড় স্যারের ছাত্র হিসেবে নাম লেখালেন জিকে স্কুলে। গোবিন্দ কুমার উচ্চ বিদ্যালয় তথা জিকে স্কুলে তখন মেধাবী ছাত্রদের সমাবেশ সমাগম। বারেক তোতাও মেধাবী ছাত্র।
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র হলেন। স্কুলে থাকতেই দেখেছেন উনসত্তরের উন্মাতাল সময়। দারোগালী যেদিন শহীদ হয়েছিলেন সেদিন ট্রাক মিছিলে তোতাও শরিক হয়েছিলেন। স্কুলে প্যারেড পিটি করতেন। ছোট তোতা অত কিছু বুঝতেন না। কিন্তু বুঝতেন এক অসহিষ্ণু সময় এক বিক্ষুব্ধ কাল চারপাশ ঘিরে রেখেছে। মুক্তির আকাঙ্খায় সবাই ছুটছে। লড়াইয়ে সামিল হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তোতা কখনো পরিবারের সাথে গ্রামে যেয়ে থেকেছে। কখনো ফিরে এসেছে নবীনগরের বাসায়।
ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। সেনাবাহিনীতে চাকরি নিতে চেয়েছিলেন। কমিশন রেঙ্কে ডাকও পেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে ভিন্ন তরীর যাত্রী হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো। বুলগেরিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে চলে গেলেন চিকিৎসা শাস্ত্র পড়তে।সালটা ছিল ১৯৭৯। বুলগেরিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে গেলেন উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। চাকরির সুবাদে পাড়ি জমিয়েছেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশের টানে বাংলাদেশে ফিরে এলেন। যোগ দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পোস্ট গ্রাজুয়েট হাসপাতাল বা তৎকালীন পিজি তে একজন অনারারি প্রাকটিশনার হিসেবে। কাজ করেছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এবং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
১৯৯০ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিলেন, শেরপুর ফিরে আসবেন। নিয়োজিত করবেন এলাকার মানুষের সেবায়। সেই থেকে প্রাকটিস করছেন একজন চিকিৎসক হিসেবে। ইতিমধ্যেই শেরপুরের মানুষের কাছে একজন নির্ভরশীল আন্তরিক হৃদয়বান চিকিৎসক হিসেবে আস্থা তৈরি করেছেন। গরীব রোগীদের জন্য একটা কল্যাণ ফান্ডও করেছেন। এলাকার দুঃস্থ অসহায় মানুষকে বিনি পয়সাতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। সুযোগ থাকার পরও কেন শেরপুর থাকলেন…..এমন প্রশ্নে ডাঃ বারেক তোতা বলেন, শেরপুরের মানুষের ভালবাসা আমাকে রেখে দিয়েছে এখানে। খুব ভালো লাগে এই মানুষের এই সৌহার্দ্য আর প্রীতির বন্ধনে।আমার সামান্য সার্মথ্য নিয়েই আছি জন্ম শহর শেরপুরে। মানুষের সেবায়। মানুষের ভালবাসায়।
বিএমএ শেরপুর জেলার সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। ডাঃ বারেকের স্ত্রী ডাঃ বুশরা সম্মানীয় ভাবীও এখন কর্মসূত্রে শেরপুরে। আমার শ্রদ্ধাভাজন এই চিকিৎসক দম্পতির জন্য শুভকামনা রইলো।’
সূত্র : ফেসবুক।
জেনে খুবই ভালো লেগেছে।