শেরপুরের পূর্ব কথা
অতি প্রাচীন কাল থেকে শেরপুর ও বর্তমান ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের কোন অস্তিত্ব ছিল না। পন্ডিতগণ মনে করেন যে, তখন এই অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিল। বাংলাদেশ যে সমুদ্র তলদেশে হতে উৎপত্তি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
আধুনিক কালের ভূতত্ত্ববিদগণ এই মতের সমর্থন করেন। তারা প্রমাণ করছেন অতিপ্রাচীন কালে বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব ছিল না। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ভারতের পূর্ব সীমান্ত সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিল। তারা অনুমান করেন যে গঙ্গা ও ব্রম্মপুত্রের স্রোত আসা কাদামাটিতে বাংলাদেশের উৎপত্তি হয়েছিল। এই মত আজ পর্যন্ত সমর্থিত হয়ে আছে। তবে এই ভূমির গঠন কালে সম্বন্ধে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। পর্বতীকালে এই অংশ ধীরে ধীরে সমুদ্র তলদেশ হতে উত্থিত হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।
অতএব দেখা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে শেরপুরের প্রাচীন ইতিহাসের মিল পাওয়া যায়। অতি প্রাচীন কালেও বাংলাদেশ গভীর বনেজঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল এবং অনার্যরা এখানে বসবাস করত।
দশকাহনিয়া প্রথমে ময়মনসিংহের অধীনে ছিল তারপর জামালপুর মহকুমা হলে তার অধীনে শেরপুর থানা হয়। এরপর শেরপুর হয় মহাকুমা তারপর মহাকুমা থেকে জেলার মর্যাদা লাভ করে। শেরপুরে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ হয়ে ছিল।
একসময় শেরপুর অঞ্চল ছিল কামরূপ রাজ্যের অধীনে। এখানে আদিবাসিদের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে ছিল হাজং, কোচ, গারো, হদি, বানাই, ডালু প্রভৃতি। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের অংশ হিসেবে আদিবাসি কোচ সামন্তদের পরাজিত করে মুসলমান শাসকরা শেরপুর দখল করে নেয়। মুসলমানদের সর্বশেষ শাসক ছিলেন শের আলী গাজী। তারপর শুরু হয় হিন্দু জমিদার প্রথা। হিন্দু জমিদাররা আড়াইআনি, নয়ানি, তিনআনি ইত্যাদি ভাগে জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এরপর ব্রিটিশদের শাসনে দু’শ বছর এবং পাকিস্তানিদের শাসনের পর ২৪ বছর সবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশের শেরপুর।
সূত্র- শেরপুরের ইতিবৃত্ত