শেরপুরের নামকরণ
খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে (৬২৯-৬৪৫) চীনা পরিব্রজক হিউ-এন-সাং ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশে পরিভ্রমণ করেন, ভ্রমণ শেষে তিনি একটি গ্রন্থ লিখেন, তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন তিনি পৌন্ড্র হতে একটি বিশাল নদ (ব্রম্মপুত্র) অতিক্রম করে কামরূপ রাজ্যে আগমন করেন। উল্লেখ্য কামরূপ রাজ্যে তখন কুমার ভাস্কর বর্মন রাজা দ্বারা শাসিত হতো। হিউ-এন-সাং ভ্রমণ কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তখনকার বঙ্গভূমি ৬ টি প্রধান রাজ্যে বিভক্ত ছিলো যথাক্রমে-
১. পৌণ্ড্র
২. কামরূপ
৩. সমতট
৪. কমলাঙ্গ
৫. তাম্রলিপ্ত এবং
৬. কর্ণসুবর্ণ।
কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ময়মনসিংহের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো শেরপুর। শেরপুর শহরের নামকরণ নিয়ে নানা মত রয়েছে।
১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে আবুল ফজল তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে শেরপুরের নাম দশকানিয়া উল্লেখ করেন। শেরপুরের ইতিকথা গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন উল্লেখ করেছেন, ”পূর্বকালে ব্রম্মপুত্র নদ অনেক বেশি প্রশস্ত ছিল, তখন কালে জামালপুর থেকে শেরপুর যেতে হলে সম্পূর্ণ পথ খেয়া নৌকায় পাড়ি দিতে হতো। এই পারাপারের জন্য দশকাহন কড়ি নির্ধারণ ছিল বলিয়া এই বিস্তৃত মহাল দশকাহনিয়া নামে পরিচিত হয়।”
শেরপুরের নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকের মত, এই অঞ্চলের প্রজাদের উপর দশকাহন কড়ি বার্ষিক খাজনা নির্ধারণ ছিল তাই দশকাহন নামকরণ হয়েছে।
১৯৫৪ সালে সাহাবাজ খাঁ কম্বো বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, তাদের অধীনে শেরআলী গাজী ছিলেন এই দশকানিয়া অঞ্চলের ভূম্যাধিকারী, এই শেরআলী গাজির নাম হইতে এই অঞ্চলের নাম হয় শেরপুর।
ইতিহাস পন্ডিতরা আরো বলছেন দিল্লির আকবর বাদশাহ খাতক মসনদ আলীকে প্রধান করে দ্বাদশ পরিষদসহ বাংলায় প্রেরণ করেন। এর মধ্যে চারজন গাজী ও চারজন মাজলিস বংশীয় ছিলেন। ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই গাজিগণ শেরপুর ও ভাওয়াল পরগনা গ্রহণ করেন। এই গাজী বংশের শেষ জমিদার ছিলেন শেরআলী গাজী তার নাম অনুসারেই দশকাহনিয়া মহল নতুন নাম হয় শেরপুর। এই শেরপুর তখন একটি পরগনা ছিল তারপর জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর পৌর শহর হয় মহকুমা শহর। পরে ১৯৮৪ সালে জেলার মর্যাদা লাভ করে।
সূত্র- শেরপুরের ইতিবৃত্ত