শিরীন সুলতানা অরুনা: আসসালামু আলাইকুম উইবাসি। ছবি দেখেই কিছুটা হয়ত বুঝতে পারছেন, কি নিয়ে আজকের রিভিউ। উই এ জয়েন করার পর থেকেই শুনছি তুলশীমালা তুলশীমালা কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না এইটা কি জিনিশ। অনেকের মত আমিও মনে করেছিলাম হয়ত এইটা কোন মালা জাতীয় কিছু হবে। এই বিষয়ে জানার জন্য একটা পোস্টও দিয়েছিলাম। পরে বিভিন্নজনের রিভিউ দেখে বুঝলাম ইহা একটি খাবার জিনিস মানে চাল। আমার ঐ পোস্ট এ কোন এক আপু শেরপুরের দেলোয়ার ভাইয়ের রেফারেন্স দিলেন। শুরু করলাম উনাকে খোজা, পেয়েও গেলাম। উনার সাথে যোগাযোগ করলাম কিন্তু বাধ সাধলো লক ডাউন। কারন শেরপুরে এস এ পরিবহন নাই আছে সুন্দরবন কুরিয়ার। তারপরে উনি আমার সাথে কথা বললেন আরও অনেক জটিলতা কাটিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। উনার ব্যবহার আর কাস্টমার বলবোনা, উই পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শুভ কামনা দেলোয়ার ভাইয়ের জন্য এই লক ডাউনের সময়েও এত কাঠখড় পুড়িয়ে বাংলাদেশের এক প্রান্ত শেরপুর থেকে রাংগামাটিতে তুলশীমালা কে পৌছে দেয়ার জন্য। গতকাল হাতে পেয়ে গেলাম সেই কাংখিত তুলশীমালা কে। আজকে এই তুলশীমালা চালের খিচুড়ি রান্না করলাম আর সবাই মিলে খুব মজা করে খেলাম। বাচ্চারা খুবই মজা পেয়েছে আর জিজ্ঞেস করছে এইটা কি উই থেকে নেয়া, আমি গর্বভরে বললাম হ্যা। খুবই সুস্বাদু এই তুলশীমালা। দেশের এই স্থানীয় জাত কে আমাদের ধরে রাখতেই হবে। সাথে সাথে রাজীব স্যারকেও ধন্যবাদ আর শুভ কামনা জানাই এমন সুন্দর আর আন্তরিক একটা গ্রুপ আমাদেরকে উপহার দেয়ার জন্য। জয় হউক দেশী পন্যের জয় হউক উইয়ের। সবশেষে বলবো ‘যাকে চিনি তার থেকেই কিনি’।
এখন বিস্তারিত জেনে নেই কে এই তুলশীমালা?
শত বছর আগ থেকেই শেরপুরের তুলশীমালা চালের জুড়ি মেলা ভার। তুলশীমালা শেরপুরের চাষিদের কাছে অমূল্য রত্ন। এই চাল দেখতে যেমন ছোট ও মিহি, এর রয়েছে বাহারি সুগন্ধ। তুলশীমালাকে জামাই আদুরি চালও বলা হয়। নতুন জামাই হলেই শ্বশুড় বাড়িতে অবধারিত রান্না হবে তুলশীমালার পোলাও, খিচুরি, পায়েস বা পিঠা। মোহ মোহ সুগন্ধ আশেপাশে জানান দিবে তুলশীমালা চালের রান্না হচ্ছে। আর এই চালের করা রান্না খাওয়ার ৪/৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হাতে সুগন্ধ লেগে থাকে। পূর্বে এক শ্রেণির অভিজাত কৃষক এই ধান উৎপাদন করতেন। একদা জমিদার অধ্যূষিত শেরপুর জেলার জমিদাররা এই চালের সুস্বাধু খাবার খেতে অভ্যস্থ ছিলেন। জমিদারদের বাড়িতে ইংরেজরা আসলে তুলশীমালা চালের যত বাহারি খাবার পরিবেশন করা হতো। যাওয়ার সময় ইংরেজদের খুশি করতে কিছু তুলশীমালা চাল গাড়িতেও তুলে দেওয়া হতো। দূরের বিশেষ বা নিকটজন কাউকে তুলশীমালা চাল দেওয়ার এই রেওয়াজ শেরপুরে এখনও চালু আছে। বিশেষ কেউ আসলে এখনও ২-১০ কেজি তুলশীমালা চাল দিয়ে খুশি করা হয়।
জানা গেছে, প্রতিযোগীতার বাজারে হাইব্রীড ধানের উৎপাদন দিন দিন বাড়লেও কমেনি স্থানীয় জাতের তুলশিমালার চাহিদা। দেশ ও বিদেশে বাড়ছে এই তুলশিমালা চালের কদর। এই ধানের উৎপাদন পরিমান কম হলেও বছর জুড়ে দাম ও চাহিদা থাকে অটুট। আধুনিক হাইব্রিডের যুগে অভিজাত কৃষক ছাড়াও এখন অনেক কৃষকই এই ধান উৎপাদন করেন। তবে এই ধানের জাত কবে কোথা থেকে আনা হয়েছে তা ৮০ বছরের কৃষকও বলতে পারেন না। সবাই বলেন, ‘বাপ দাদা থেকে আমরা পেয়েছি’।
জানা যায়, বহু পূর্বে জেলার পাহাড়ি এলাকার উঁচু জমি নালিতাবাড়ী ঝিনাইগাতি শ্রীবরর্দী উপজেলায় সীমিত জমিতে এই ধান লাগানো হতো। এখন তুলশীমালা চালের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সমতল অঞ্চল জুড়েও এই ধানের আবাদ হয়ে থাকে। প্রতি বছরই বাড়ছে তুলশীমালার উৎপাদন ও চাহিদা। শেরপুরের তুলশীমালা চালের সুনাম ও সমৃদ্ধি শতশত বছর আগের। সম্প্রতি শেরপুর জেলার ব্র্যান্ডিং এখন সুগন্ধি চাল তুলশীমালা। দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা প্রজাতির সুগন্ধি ধানের চাল উৎপাদিত হলেও শেরপুরের সুগন্ধি তুলশীমালা চাল গুন, মান ও সুগন্ধে ভিন্ন রকম। অসাধারণ ঘ্রাণ, পেট ভারী হয় না, বাচ্চাদের প্রিয়, অল্প সময়ে রান্না হয়। ইতিমধ্যে জেলা ওয়েবসাইট ‘আওয়ার শেরপুর’ শেরপুরের সুগন্ধি চাল ও জেলা ব্র্যান্ডিং তুলশীমালাকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে ফেইসবুকের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চলছে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন