Our Sherpur

জেলা ওয়েবসাইট সম্পর্কে বিস্তারিত

জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে বিভিন্ন সময় ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপে প্রাপ্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরপরও কোন প্রশ্ন থাকলে বা তৈরি হলে কমেন্ট কিংবা আমাকে সরাসরি ইনবক্স করলে আর্টিকেলটি আপডেট করবো

জেলা ওয়েবসাইট কী?

একটি জেলার তথ্য সেন্টার হলো জেলা ওয়েবসাইট। যেখানে জেলার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পাওয়া যাবে। অর্থাৎ গুগলে নির্দিষ্ট একটি জেলার কোন তথ্য সার্চ করলে সে জেলা ওয়েবসাইটকে সামনে নিয়ে আসবে। তা হতে পারে জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, হোটেল, ক্লিনিক, ডাক্তার, বাসের তথ্য থেকে শুরু করে যেকোন তথ্য।

যেহেতু ’আওয়ার শেরপুর’ দেশের প্রথম জেলা ওয়েবসাইট। তাই আমরা এটির উদাহরণ বেশি টানবো।

জেলা ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা

সহজ কথায় বললে ভোগান্তি কমাতে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জেলা ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এখন সবকিছুই হাতের মুঠোয়। তাই জেলা ভিত্তিক তথ্য উপাত্ত হাতের মুঠোই পাওয়া দরকার। এতে করে মানুষের তথ্য পাওয়ার ভোগান্তি যেমন কমবে তেমনি সময়ের স্বদ ব্যবহারও বাড়বে।

একটা জেলাকে তোলে ধরতেও জেলা ওয়েবসাইটের ভূমিকা অপরিসীম। একটা জেলায় অনেক কিছু থাকে তা জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের সামনে তোলে ধরা যায়। উদাহরণ দিলে ক্লিয়ার হওয়া যাবে। শেরপুর জেলায় বহু বছর ধরে তুলশীমালা ধানের আবাদ হয়, মন্ডা উৎপাদন হয়। এই বিষয়গুলো জেলার মানুষ ছাড়া অন্য জেলার মানুষজন তেমন জানতো না। আওয়ার শেরপুরের মাধ্যমে আমরা তা সকলের সামনে তোলে ধরলাম। এরফলে মানুষ জানার এবং ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে।

তেমনিভাবে শেরপুর জেলার সকল বিষয় জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সামনে আনার সুযোগ রয়েছে। এতে করে জেলাবাসীসহ অন্যরাও জানার সুযোগ পাবে এবং ব্যবহার করতে পারবে।

আরেকটা উদাহরণ দিই। আমাদের ওয়েবসাইটে শেরপুর সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া আছে। তাই বাসের তথ্যও দেওয়া আছে। মানুষ আমাদের ওয়েবসাইটে সবচেয়ে বেশি আসে বাসের তথ্য সার্চ করে। অর্থাৎ এটি তাদের উপকারে আসছে। এভাবে মানুষের তথ্যের চাহিদা পূরণ করতে এবং জেলা ব্র্যান্ডিং করতে জেলা ওয়েবসাইট নানাভাবে অবদান রাখতে পারে।

জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে আমাদের পড়াশোনা
জেলা পণ্য নিয়ে লেখাপড়া

জেলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট আইডিয়া

জেলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট আইডিয়াটি রাজিব আহমেদ স্যার ২০১৮ সালের আগস্টে ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে দিয়েছিলেন। স্যার বলার কারণেই পরের দিন থেকে কনটেন্ট তৈরি করতে কাজ শুরু করেছিলাম।()

জেলা ওয়েবসাইট গুলো হতে থাকলে বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টর অনেক উপকৃত হবে। কারণ তখন দেশের ৬৪ টি জেলাতে কি ধরনের পণ্য পাওয়া যায় তা আমরা সহজেই জেনে যাবে।

রাজিব আহমেদ

শুরু করবেন যেভাবে

প্রথমে একটি নাম ঠিক করে নিতে হবে। যেন নামটি দেখলে মানুষ সহজে বুঝতে পারে এটি ঐ জেলার একটি ওয়েবসাইট। নাম ঠিক করা হয়ে গেলে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে। একই নামে ফেসবুকে একটি পেজ, এবং একটিভ রাখতে পারলে একটি ফেসবুক গ্রুপ করতে হবে। একই নামে ইউটিউব চ্যানেল, টুইটার, লিংকডিন, গুগল মাই বিজনেস ইত্যাদি করে রাখতে হবে। শুরুর দিকে অ্যাকাউন্টগুলো করে নিলে ইউজার নামগুলো এক রকম পাওয়া যায়।

ধাপেধাপে জেলার সার্বিক তথ্যগুলো উঠে আসবে। আমরা যদি গুগলে ১৪১৪, ১৯০৫, ২০০০ ইত্যাদি সংখ্যা লিখেও সার্চ করি তাতেও উইকিপিডিয়া থেকে আমরা রেজাল্ট পেয়ে থাকি। প্রত্যেকটি রেজাল্ট আসে সমৃদ্ধ তথ্যসহ। যা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করে। অর্থাৎ জানার পিপাসা পূরণ করে। তেমনি ভাবে জেলা ওয়েবসাইটে জেলার সার্বিক দিক তুলে ধরতে হবে। যেন মানুষ যে বিষয় নিয়ে সার্চ করবে সে বিষয়ে তথ্য জেলা ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যায়।

জেলা ওয়েবসাইট প্রথম দিকে ’ব্লগ’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। একটি ব্লগের প্রাণ হলো কনটেন্ট। আর আমাদের কনটেন্টগুলো হবে জেলা সংক্রান্ত। ব্লগটি এমনভাবে সমৃদ্ধ করতে হবে যেন এটি জেলার তথ্য কেন্দ্র তথা জেলার আয়না হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে।

প্রতিটি ব্লগ কনটেন্টের সাথে যথা সম্ভব রিলেটেড ছবি এবং ভিডিও দিতে হবে। এতে করে পাঠক পড়ে যেমন ভালো লাগবে তেমনি সার্চ ইঞ্জিনও গুরুত্ব দিবে। কনটেন্টগুলো যথাসম্ভব ইউনিক রাখতে হবে। যেন সরাসরি অন্যের লেখা থেকে কপি করা না হয়।

আর্টিকেল নিজে লেখার পাশাপাশি অন্যদের দিয়েও লেখানো যেতে পারে। শেরপুরের সাহিত্য নিয়ে জ্যোতি পোদ্দার স্যার, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রফিকুল ইসলাম রফিক এবং ভ্রমণ বিষয়ক রফিক মজিদ এই ওয়েবসাইটে লিখেন। কারণ তারা স্ব স্ব ফিল্ডে দক্ষ এবং আন্তরিক।

জেলা ওয়েবসাইটের খরচ কেমন?

জেলা ওয়েবসাইট প্রজেক্ট এগিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ খরচের প্রয়োজন হয়। প্রথমত ডোমেইন, হোস্টিং রেজিস্ট্রেশন করতে একটা খরচ। এটি বছর বছর হতে থাকে। এখানে বছরে ৫ হাজার টাকা বা এর কম বেশি হয়। ওয়েবসাইট পরিচালনায় একটা খরচ থাকতে পারে। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করাতে চাইলে একটা খরচ থাকতে পারে। আমারগুলো আমি নিজে করার কারণে খরচ বেঁচে যায়।

এছাড়াও কনটেন্ট সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন দিকে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে যাতায়াত খরচসহ অন্যান্য খরচ প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও মার্কেটিং কিংবা স্পন্সর করতে চাইলে একটা খরচ বহন করতে হবে। মূলত আপনি যা যা করতে চাইবেন সেটার উপর খরচ নির্ভর করবে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে একটা খরচ আছে এবং তা বছর বছর রিনিউ করতে হয়।

জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে এখন তেমন কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু আগামি বছর এই সময় থেকে দেখবেন বড় বড় কোম্পানি গুলো এদিকে বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে চলে আসবে। কারণ শিক্ষা, কৃষি, পর্যটন, ই-কমার্স সব দিকেই জেলার মানুষকে খুব সহজে নিয়ে আসার সেরা মাধ্যম হবে জেলা ওয়েবসাইট।

রাজিব আহমেদ

কোন কোন অফিসগুলোর সাথে কাজ করবেন?

শুরুর দিকে লক্ষ্য করেছি জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেকে প্রথমে ডিসি অফিসে চলে যায়, সেখানে গিয়ে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকে জেলা ওয়েবসাইট কী? কেন দরকার? তারা কেন সাপোর্ট কার ইত্যাদি।

শুরুতে এসবের দরকার নেই। আপনি কাজ ‍শুরু করেএকটা অবস্থান তৈরির পর তাদেরকে জানাতে পারেন। যে এটি আপনার ওয়েবসাইট, এই এই বিষয়ের উপর তথ্য দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। তা গুগলে সার্চ করলে পাওয়া যায়। এখন চাইলে তারা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে আরও কোন কোন বিষয়গুলো যুক্ত করতে পারেন। বা জেলা ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করতে কোন বিষয়গুলো আপনার ওয়েবসাইটে থাকা দরকার ইত্যাদি।

আমি মনে করি শুরুতে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে যেতে পারেন। কারণ আপনার দরকার জেলা সংক্রান্ত বই পত্র, ম্যাগাজিন, সাহিত্য সংগঠন, সেচ্ছা সেবক ইত্যাদি। এসব কিছু পেতে পারেন গণগ্রন্থাগারে। লাইব্রেরিয়ানের সাথেও আলাপ করতে পারেন। তার থেকে জেনে নিতে পারেন রিলেটেড বিষয়গুলো নিয়ে আপনি কাদের কাছে যেতে পারেন।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কনটেন্টের জন্য মুক্তিযুদ্ধাদের খুঁজে বের করুন। কমান্ডার অফিসে যেতে পারেন সেখান থেকে তথ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নিজের মতো করে না দেওয়াই ভালো। যেহেতু তা জাতির ইতিহাস। তাই রেফারেন্স উল্লেখ করে দিতে হবে। তাহলে আপনার তথ্য পড়ে কারো প্রশ্ন তৈরি হলে তারা সেই সোর্সের সাথে যোতগাযোগ করতে পারবে।

এছাড়াও জেলার শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রবীণ, সুশিলসমাজের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন আপনার ওয়েবসাইটে লেখার জন্য।

ব্লগের একটা অবস্থান তৈরি হওয়ার পর ডিসি অফিসে যেতে পারেন। বিশেষ করে ব্র্যান্ডিং নিয়ে যে ডেস্ক কাজ করে তাদের কাছে। আমি ফেসবুকে নিয়মিত লিখতাম। ডিসি অফিসের লোকজন তা অবগত ছিলেন। তাই তারাই আমাকে ডেকে নিয়ে পুরস্কৃত করেছে।

Md Daloare Hossain, the founder of “Our Sherpur” website that promotes Sherpur district and sells Sherpur local produces online, has received the Deputy Commissioner Entrepreneur Award-2021. He also won the best young entrepreneur award in ‘District Branding Entrepreneur’ category.

risingbd.com
জেলা প্রশাসক উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২১
জেলা প্রশাসক উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২১
জেলা ব্র্যান্ডিং

জেলা ব্র্যান্ডিং এর জন্য সেরা মাধ্যম জেলা ওয়েবসাইট। জেলার প্রতিটি বিষয় নিয়ে সুন্দরভাবে তোলে ধরার জন্য জেলা ওয়েবসাইট দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। শেরপুরের জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটনের আনন্দে তুলশীমালার সুগন্ধে। ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই ওয়েবসাইটে শত শত কনটেন্ট আপলোড করেছি তুলশীমালার উপর। তাছাড়াও পর্যটনের উপর অসংখ্য কনটেন্ট আপলোড করেছি ও করছি। যা জেলা ব্র্যান্ডিং এ দারুণভাবে অবদান রাখছে।

রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শে ২০১৯ সালে প্রথম তুলশীমালা চাল নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেছি। এরপর থেকে নিয়মিত লিখে যাচ্ছি। যার ফলে আমাদের কাজের কারণে কয়েকলাখ মানুষ শেরপুরের তুলশীমালা চাল নিয়ে জানার সুযোগ পেয়েছে। যা জেলা ব্র্যান্ডিং ও কর্মসংস্থানে দারুণ অবদান রাখছে।

এছাড়াও শেরপুরের মন্ডা, ছানার পায়েস, গারো পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্যগুলো নিয়ে লেখালেখির কারণে পরিচিতি বেড়েছে।

কোন কোন তথ্যগুলো আপলোড করবেন?

আমি সবসময় বলি জেলা ওয়েবসাইট জেলার আয়না। তাই জেলার সার্বিক বিষয়ে তথ্য উপত্ত আপলোড করা দরকার।

ইতিাহস-ঐতিহ্য: জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই তথ্যগুলোতে আগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে এখানে যে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে যেন সরাসরি কপি পেস্ট না হয়। শেরপুর একটি জেলা। কেবল যে শুধু জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য তা কিন্তু নয় এমনকি গ্রাম মহল্লা পর্যন্ত সবকিছুর ইতিহাস ঐতিহ্য তোলে ধরতে হবে।

নামরকরণ: জেলার নামকরণ থেকে শুরু করে প্রতিটি নামের নামকরণে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি তথ্য একাধিক সূত্র থেকে ভেরিফাই করার চেষ্টা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ: বাঙ্গালী জাতির জন্য মুক্তিযুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে দেশের সব অঞ্চলের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তাই সব জেলায় মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য গঠনা আছে এগুলো তোলে ধরতে হবে।

পর্যটন: জেলার সবগুলো দর্শনীয় স্থানের ছবি ও বর্ণনা তোলে ধরতে হবে।

হোটেল রেস্টুরেন্ট: জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যতগুলো হোটেল রেস্টুরেন্টের সম্ভব হয় তথ্য ‍দিতে হবে। যেনগুলো এগুলোর নাম কিংবা স্থানের নাম লিখে সার্চ করলে গুগলে পাওয়া যায়।

বাস ও যাতায়াত: রাজধানীসহ জেলা থেকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত মাধ্যমগুলোর তথ্য সরবরাহ করতে হবে। যেন গুগলে সার্চ করলে বাস-সহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার যোগাযোগ নাম্বার পাওয়া যায়। আমাদের ওয়েবসাইটে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসে বাসের তথ্যের জন্য।

ডাক্তার, হসপিটাল ক্লিনিক: সুস্থতা অসুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানবজীবনে। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন ডাক্তার, হসপিটাল, ক্লিনিকের তথ্যের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে এসব প্রয়োজন হয়। তখন যেন মানুষ সার্চ করে পেতে পারে তাই অনলাইনে সচল রাখতে হবে।

শিক্ষা: স্কুল, কলেজ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব নোটিশগুলো দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে মানুষ এসব তথ্যের জন্য জেলা ওয়েসাইটে আসবে।

বিখ্যাত ব্যক্তি: প্রত্যেক জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিরা ঐজেলার সম্পদ। তাদেরকে সম্মান দিয়ে তাদের তথ্যগুলো তোলে ধরতে হবে। যেন মানুষ তাদের নাম সার্চ করে তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে পারে।

জেলা পণ্য: জেলায় যেসব পণ্য উৎপাদন হয় সেসব পণ্যের তথ্য আপলোড করতে হবে। যেন জেলাবাসীসহ সবাই এসব তথ্যগুলো জানতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত শেরপুরের তুলশীমালা চাল, মন্ডা, ছানার পায়েস, গুড়ের সন্দেশ-সহ গারো পাহাড়েরর কিছু তথ্য তোলে ধরেছি যেন সবাই এসব পণ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।

সাহিত্য: প্রত্যেক জেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সাহিত্য। জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাহিত্যেকে তোলে ধরতে হবে।

উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও আপনি যে তথ্যগুলো সরবরাহ করার প্রয়োজন মনে করে তা আপলোড করবেন।

একুশে বই মেলায় একদিন

জেলা ওয়েবসাইট ফিচার

জেলা ওয়েবসাইটের অনেকগুলো ফিচার থাকবে। তবে সব জেলায় সব ফিচার প্রযোজ্য না। এখানে আমি কিছু ফিচার নিয়ে আলোচনা করছি।

স্টুডিও: জেলা পর্যায়ে কোন টেলিভিশন নাই। তাই জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে টক-শো বা ইন্টার্ভিউ নেওয়ার মতো প্লাটফর্ম নাই। জাতীয় টেলিভিশন গুলোর পক্ষে সম্ভব নয় জেলা পর্যায়ের সকল চাহিদা নিয়ে কাজ করা। তাই জেলা ওয়েবসাইটের একটা স্টুডিও করে জেলার অতিথিদের আমন্ত্রণ করে বিভিন্ন বিষয়ে টক-শো করা যেতে পারে। এতে করে জেলার সম্ভাবনা গুলো যেমন উঠে আসবে তেমনি সমস্যা গুলোও উঠে আসবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট মহল ব্যবস্থা নিতে পারবে। এরফলে ধাপে ধাপে জেলা উন্নয়ন চিত্র পরিবর্তন হতে থাকবে। এতে করে জেলা ওয়েবসাইটেরও গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়বে এবং প্রশংসা কুড়াবে।

স্টুডিওতে আমন্ত্রিত অতিথিগণ জেলা ওয়েবসাইট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়ার ফলে মনের আনন্দে লেখালেখির জন্যও আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং অন্যদের জানাবে। এভাবেই হতে থাকবে জেলা ব্র্যান্ডিং। এই ওয়েবসাইট জেলার ভাবমূর্তি উজ্জল করতে অবদান রাখবে। ওয়েবসাইট হয়ে উঠবে তথ্যের কেন্দ্রবিন্দু। গবেষণার জন্য এই ওয়েবসাইটের উপর নির্ভর করতে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।

জব পোর্টাল: প্রতিটি জেলায় কিছু শিল্প কারখানা রয়েছে। এস প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তা জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। তাহলে সেই জেলার মানুষ নিজ জেলা থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনগুলো পাওয়ার জন্য জেলা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে।

ই-কমার্স: জেলায় উৎপাদিত পণ্যগুলো নিয়ে জেলা ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে অন্যদের জানার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। সেই সাথে অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রিও করা যাবে। যা জেলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। যেমনটা আমরা করছি শেরপুরের তুলশীমালা চাল, মন্ডা, ছানার পায়েস ও গুড়ের সন্দেশ। এতে করে এই পণ্যগুলো নিয়ে মানুষ জানার সুযোগ পাচ্ছে এবং কেনাকাটা করতে পারছে। যা জেলার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আমাদের ক্যারিয়ার নিশ্চিত করছে।

শিক্ষা নোটিশ: আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো অনলাইনে ততটা সক্রিয় নয়। তাদের সকল নোটিশগুলো জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। তাহলে শিক্ষার্থীরা সেই নোটিশের জন্য জেলা ওয়েবসাইটে ভীড় করতে পারে। তাতে করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও জানার সুযোগ পাবে। এতে করে সময় ও ভোগান্তি সবই কমে যাবে।

পর্যটন: তথ্যের উপর নির্ভর করে বাড়তে পারে পর্যটক। প্রতিটি জেলায় অসাধারণ কিছু স্থাপনা, জায়গা, খাবার সহ নানা কিছু থাকে। এগুলো দেখা ও উপভোগ করার জন্য নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসে ভ্রমণ পিপাসুরা। এখন প্রশ্ন হলো পর্যটকরা কোন স্পট গুলোতে যায়? যে স্পট গুলো সম্পর্কে তার সবচেয়ে বেশি জানাশোনা আছে। এ গুলোতে ভাগান্তি কম হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমরা তো আগে সুন্দরবন, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি বা সিলেট যায়নি তাও কিন্তু ঐ স্পট গুলোতে যাই। এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবল ঐ স্পট গুলো সম্পর্কে আমরা পড়ি বা শুনি তাই যাই। আর যাওয়ার সময় এমন ড্রাইভারদেরই সাথে নেই যাদের স্পট গুলো সম্পর্কে নলেজ আছে।

আমি যদি ‘আওয়ার শেরপুর’ ওয়েবসাইটে জেলার সকল স্পট সম্পর্কে কোয়ালিটি কনটেন্ট ও আকর্ষণীয় ছবি বা ভিডিও আপলোড করি এতে করে অনেকেরই শেরপুর জেলায় ভ্রমণের আগ্রহ বাড়বে। ট্যুর গাইড প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। পর্যটকরা জেলা ওয়েবসাইগুলোতে ট্যুর গাইডের জন্য নির্ভর করতে পারে।

গজনী অবকাশ শেরপুর
গজনী অবকাশ। ছবি: তাসনোভা মৌ

ই-ট্যুরিজম: জেলা সবগুলো দর্শনীয় স্থান থ্রিডি এনিমেশনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে রাখা যেতে পারে। এতে করে মায়েরা তাদের সন্তানকে সেগুলো দেখার সুযোগ করে দিতে পারে। এরজন্য ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ একটা ফি নির্ধারণ করতে পারে। যেন ফি পরিশোধ করে ওয়েবসাইটের এনিমেশনগুলো ১ দিন দেখার সুযোগ পায়।

হোটেল বুকিং: পর্যটক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়। সেখানে গিয়ে লোকাল ট্রান্সপোর্ট সহজে খোঁজে পেলেও হোটেল বুকিং নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খাবারদাবার নির্বাচন করা নিয়েও অসুবিধা হয়। তাই জেলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের এই অসুবিধাগুলো সমাধান করতে পারে। এ জন্য হোটেল সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য ও ছবি আপলোড করা প্রয়োজন।

জেলা ওয়েবসাইট উদ্বোধন
শুভ উদ্বোধন আওয়ার শেরপুর

মন্তব্য

যদি কেউ সত্যি সত্যি জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ শুরু করত তাহলে কি হত? ধরে নেওয়া যাক, আপনি Razib Ahmed ভায়ার কথা মতো আপনার জেলার উপরে ওয়েবসাইট তৈরি করা শুরু করলেন। এটা করতে গিয়ে আপনি কম্পিউটারে টাইপ করা, ওয়েবসাইট কিভাবে বানাতে হয়, ডোমেইন হোস্টিং, কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ছবি এডিট করা, আপলোড করা, ইত্যাদি অনেক ডিজিটাল স্কিল অর্জন করতেন।

আপনি আপনার জেলা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করতে পারতেন। আপনার জেলার সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় যাতায়াত করতেন। এতে করে অনেকের সাথে আপনার চেনা পরিচয় হতো, আপনার জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে পারতেন। অনেক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি সহ বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পেতেন। ঠিক যেমন উইমেন এন্ড ই-কমার্স এর বিভিন্ন ইভেন্টে সবার সাথে চেনা জানা হয় সেরকম।

এখন এরপরে কি হতো?

ধরা যাক, আপনার জেলা ওয়েবসাইট সফল হলো। আপনার জেলার মানুষের কাছে আপনি পরিচিত হলেন। অনেকে হয়তো আপনার ওয়েবসাইটে টুকটাক বিজ্ঞাপন দিত যা থেকে আপনার টাকা আয় হতো।

জেলা ওয়েবসাইট নির্মাণ করতে গিয়ে আপনার যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন হয়েছে সেটার জন্যে। আপনার জেলায় কেউ ওয়েবসাইট বানাতে চাইলে আপনার কাছে আসত। হয়তো আপনি তার কাজটাও পেয়ে যেতেন। এভাবে আপনি টাকা আয় করতে পারতেন।

এখন ধরা যাক, আপনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, অনেক কষ্ট করে জেলা ওয়েবসাইট তৈরি করলেন। কিন্তু সেটা তেমন জনপ্রিয় হলো না। সেভাবে টাকাও আসল না। আপনার টাকা লস হলো। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে কোন কোম্পানিতে চাকরি নেবেন।

আপনি আপনার সিভিতে লিখলেন যে আপনি ওয়েবসাইট বানাতে পারেন, ওয়েবসাইট কিভাবে মেনটেন করতে হয়, কিভাবে এস ই ও করতে হয় সব জানেন এবং আপনার নিজের জেলার উপরে এরকম ওয়েবসাইট বানানোর অভিজ্ঞতা আছে।

ইন্টারভিউতে আপনাকে ওয়েবসাইট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আপনি তাদেরকে কম্পিউটারে আপনার ওয়েবসাইট খুলে চালিয়ে দেখিয়ে দিলেন। তারা বুঝতে পারল যে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তারা আপনাকে চাকরি দিল।

আরেকটা হতে পারে। আপনার জেলার সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটের কিছু কাজ করে দিতে হবে। তারা লোক খুজছে। তখন সেই অফিসার আপনার সাথে যোগাযোগ করল এবং ব্যাপারটা বলল। কারণ আপনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা আপনার ওয়েবসাইটের কাজে তার অফিসে গিয়েছেন। তিনি আপনার ওয়েবসাইট দেখেছেন এবং তিনি জানেন যে আপনি ভাল কাজ পারেন। তিনি আপনাকে আশ্বস্ত করলেন যে আপনাকে আপনার কাজের জন্যে উপযুক্ত সম্মানীও দেয়া হবে।

তার মানে কি দাঁড়াল? আপনি আপনার পকেটের টাকা খরচ করে জেলা ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। সেটা করতে গিয়ে অনকে কষ্ট করেছেন। দিন শেষে ওয়েবসাইটটা সেরকম জনপ্রিয় হয় নি। কিন্তু এই ওয়েবসাইট তৈরি করতে গিয়ে আপনার যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে। সেটা দিয়ে কিন্তু ঠিকই আপনি অন্যভাবে টাকা উপার্জনের ব্যবস্থা করে ফেললেন এবং দেখা গেল যে আপনি জেলা ওয়েবসাইট তৈরি করতে গিয়ে যে টাকা খরচ করেছেন। দুইবছরের মাথায় এভাবে কাজ করে আপনি সেই টাকাটা উঠিয়েও ফেলেছেন।

এই জিনিসটাই রাজিব ভায়া আপনাদের বার বার বোঝাতে চেষ্টা করে। আপনি যখন এরকম কোন কাজ করবেন। তখন সেটাতে ব্যর্থ হলেও সেই কাজের যে জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা আপনি অর্জন করবেন। সেটা আপনার সাথে থেকে যাবে এবং সেটা ব্যবহার করে আপনি উপার্জনের অনেক রাস্তা তৈরি করতে পারবেন।

রাজিব ভাই নিজেও এরকম কাজ করেছেন অনেক এবং অনেক গুলোতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ভায়া আপনাদেরকে তাও বলেন এটা সত্যি কথা। আমি ২০০০ সাল থেকে ভায়ার সাথে কাজ করছি। আমি এরকম অনেক কাজের সাথেই জড়িত ছিলাম। আজকে আমার যা কিছু দক্ষতা এভাবেই কাজ করতে করতে অর্জন হয়েছে।

ভায়া সবসময়ে বলেন ভায়া নিজের টাকা স্বাস্থ্য, আর শরীর নষ্ট করে ই-ক্যাব ফেসবুক গ্রুপ দাঁড় করিয়েছেন। অনেকেই চিন্তা করত ভায়ার মাথায় আসলে ছিট আছে। কিন্তু না। ভায়া সেই সময়ে ই-ক্যাব ফেসবুক গ্রুপ দাঁড় করাতে গিয়ে যে কষ্ট করেছেন এবং তার যে অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান অর্জন হয়েছে। সেটাই তিনি সার্চ ইংলিশ এবং উই গ্রুপ তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। আর আজকে সার্চ ইংলিশ যে কি পরিমাণে সফল তা আপনারা সবাই জানেন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও অনেকে সার্চ ইংলিশকে চেনে। কিন্তু এটা সম্ভব এই জন্যে হয়েছে কারণ ভায়া নিজের টাকা, স্বাস্থ্য, শরীর এবং সময় নষ্ট করে ই-ক্যাব ফেসবুক গ্রুপ দাঁড় করিয়েছিলেন বলে। ওই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকলে ভায়া এভাবে সার্চ ইংলিশকে সফল করে তুলতে পারতেন না।

সারা জীবন এভাবেই ভায়া নিজের টাকা খরচ করে কাজ করে জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং সেটাই তিনি সবাইকে করতে বলেন। কিন্তু ৯৯.৯৯% মানুষ খালি লাভ লস নিয়ে চিন্তা করেছে। তাদের না আছে কোন কাজের অভিজ্ঞতা, না আছে কোন দক্ষতা, কিন্তু ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি তাদের করতে হবে এই জ্ঞানটা একেবারে টনটন করে। এটাই হলো ট্রাজেডি।

এসএম মেহেদি

1 thought on “জেলা ওয়েবসাইট সম্পর্কে বিস্তারিত”

Leave a Reply

Scroll to Top