Our Sherpur

রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মকান্ড

সহযোগিতায়: আব্দুর রাজ্জাক (রাজন)

১৯৪৩ সালের ১ ডিসেম্বর শেরপুর শহরের খড়মপুরে খান বাহাদুর ফজলুর রহমান ও লুৎফুন্নেছার ঘরকে আলোকিত করেন রাজিয়া সামাদ ডালিয়া। তাঁর বাবা ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার চিফ হুইপ। রাজিয়া সামাদ ডালিয়া শুধু একটি নাম নয়, আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতিচ্ছবি। তার মেধা, প্রজ্ঞা, সৃষ্টিশীলতা নিবেদন করে যাচ্ছেন একটি আলোকিত সমাজ গড়ার জন্য। তাঁর প্রতিটি চিন্তা-ভাবনা পিছিয়ে পড়া সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য। নিরলস পরিশ্রমী মানুষটি বেঁচে থাকবে যুগ যুগ শেরপুরবাসীর হৃদয়ে। জীবনে অসামান্য সেক্রিফাইজের ফলে অহংকার কে ত্যাগ করে আপন করে নিয়েছেন দেশবাসী কে, তাঁহার সকল চিন্তাচেতনা সাধারণ মানুষকে ঘিরে। তাঁর উদার মানষিকতার জন্য ধনী-গরীবের মাঝে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন সকলের অন্তরে এবং হয়ে উঠেছেন এক অসাধারণ নারী। জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে সকল প্রতিকূলতাকে প্রতিহত করে এগিয়ে গেছেন নিজের মতো করে। জীবনে হারিয়েছেন অনেক, কিন্তু নিজেকে হারাননি কখনো। আরাম-আয়েশের পথে জীবন চালনার সকল আয়োজন ও উপাত্তকে অগ্রাহ্য করে তিঁনি বেছে নিয়েছেন অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো এবং আলোকিত সমাজ গড়ার কাজ। গরিব-অসহায় রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য শেরপুরে গড়েছেন ডায়াবেটিস হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হাতের নাগালে উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে হাত দিয়েছেন হার্ট ফাউন্ডেশনে। খেলাঘর থেকে শুরু করে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিত পরিষদ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, নারী উন্নয়ন, সামাজিক আন্দোলন সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই তিনি পথপ্রদর্শন করেছেন। তাঁহার ভাবনা এবং কর্মকান্ড সাহায্য করে চলেছে নারী ও তরুণ সমাজ এগিয়ে নিতে। ব্যস্ততার মাঝে একটু সুযোগ পেলেই আরাম-আয়েশ কে ত্যাগ করে চলে যান নিজের হাতে গড়া ডায়াবেটিস হাসপাতালে এবং সময় কাটান অসহায় রোগীদের সেবা করে। এ যেন অসীম আত্মতৃপ্তি। সকলের জন্য ডায়বেটিস সেবা নিশ্চত করতে এবং দরিদ্র রোগীদের সহায়তার জন্য হাসপাতালে চালু করেছেন সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা এবং ডায়াবেটিস হাসপাতালে ইনসুলিন ক্রয় করতে আসা দরিদ্র রোগীদের দেওয়া হয় সহায়তা। শুধু তাই নয়, দরিদ্র রোগীদের বিভিন্ন চিকিৎসক এবং হাসপাতালে নিয়েও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। শেরপুর সদর হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার জন্য তিঁনি একজন আয়া রেখে দিয়েছেন এবং নিজ তহবিল থেকে বেতন দেন।

তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি শেরপুর শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। শেরপুরে নারীদের একত্রিত করে ‘উজ্জয়িনী’ সংগঠন গড়েছেন। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পিঠা উৎসব হয়ে থাকে ‘উজ্জয়িনী’ সংগঠন থেকে, যা শেরপুরবাসীর মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। তিঁনি ‘উজ্জয়িনী’ সংগঠনের সভাপতি। খান বাহাদুর ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ও উজ্জয়িনী ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর শেরপুরে বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন আয়োজন করেন। তাঁহার বাড়িতে এতিম ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অসহায় পরিবারকে থাকার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বর্তমানে ১৫ জন হতদরিদ্র ছেলে-মেয়ে উনার আর্থিক সহায়তায় লেখাপড়া করছে। এর কয়েকজন-মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। শহরের সজবরখিলা এলাকায় “উপমা হাসপাতাল” চালু করেছেন। দরিদ্র নারীদের নিজের বাসায় রেখে নকশিকাঁথা সেলাই শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার “তরুপল্লব” এর কার্যকরী সদস্য। রাজিয়া সামাদ ডালিয়া (১৯৪৩ থেকে বর্তমান) প্রায় ৭৬ বছরের মহিমাময় এ জীবন বহু বর্ণিল ও প্রোজ্জ্বল এবং সর্বোতভাবে ত্যাগের মহিমায় ভাস্কর। তাঁহার জীবনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এই সত্যে উপনীত হওয়া সহজ হয়, কাজের মধ্যে সংহতি সৃষ্টি করে এমন কিছু সৃষ্টি করেছেন, যাতে রয়েছে সত্যের আলো, উদারতার দৃষ্টান্ত। এখানেই তিনি স্বার্থক, তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে চিরকাল।

Leave a Reply

Scroll to Top