বীরবিক্রম শহীদ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম
বাঙালী জাতির ইতিহাসে সর্বকালর সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে এদেশে ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক তথা সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। প্রিয় দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অকুতোভয় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়। পাক হানাদার বাহিনী আমাদের সূর্য সন্তানদের নির্মম ভাবে হত্যা করে। পাশাপাশি সম্মুখ সমরে হাজারো তরুণ নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়। তাদেরই একজন শেরপুর জেলা তথা এদেশের গর্ব খুররম ভাই শহীদ বীরবিক্রম শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম।
মোতাসিম বিল্লাহ খুররম ১৯৫১ সালের ২০ নভেম্বর মতান্তরে ১৯৫৩ সালের ০২ জুলাই শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মালামারী গ্রামে এক সম্ভান্ত্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ মোশাররফ হোসেন, মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা। চার ভাই ও সাত বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মেধাবী এই বীর মুক্তিযুদ্ধা প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পেয়েছিলেন। তিনি শেরপুরের জিকে পাইলট স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। অতঃপর রংপুরের কারামাইকেল কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কৃতিত্বের সাথে। শেরপুর কলেজে ‘বিএসসি’তে অধ্যয়ন কালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ১১ নং সেক্টরের অধীনে কর্ণঝোরা ইউনিটের কোম্পানী ইনটেলিজেন্স চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সম্মুখ সমরে বিরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ০৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শেরপুর মুক্ত হলে তিনি বীরের বেশেই শেরপুরে প্রবেশ করেন।
কিন্ত তাঁর রক্তে মিশে আছে যুদ্ধ জয়ের নেশা। শেরপুরের সকল জনগণ যখন বিজয় উল্লাশ করছে ঠিক তখন তিনি জামালপুর মুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। লসমনপুর থেকে মিত্র বাহিনী যখন পাকসেনাদের উপর মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাচ্ছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সফল আক্রমণেযখন হানাদার বাহীনির পতন যখন সময়ের ব্যাপার, ঠিক সেই মুহূর্তে এই বীর মুক্তিযুদ্ধা জামালপুরের পাকুটিয়ায় পাক হানাদারদের প্রতিরোধ করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। জামালপুর মুক্তির মাত্র দেড় ঘন্টা আগে হঠাৎ শত্রু সেনার মটর সেলের আঘাতে তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে সেখানেই শহীদ হন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কৃতজ্ঞ জাতি তাকে মরণোত্তর “বীরবিক্রম” উপাধিতে ভূষিত করে। সম্ভবত তিনি দেশের সবচেয়ে কম বয়সী খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা। শহীদ মোতাসিম বিল্লাহ খোররম শেরপুরবাসীর গর্ব। তাঁর জন্ম স্বার্থক। তিনি ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে থাকবেন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
লেখকঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম, সেনা শিক্ষা কোর।