আয়োজক ছিলো সমকাল, জিতলো এবার আইডিয়াল
সমকাল কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব-২০১৯ এর জেলা পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্ব আজ ৬ এপ্রিল শেরপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজনে মোট ৮ টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। প্রথম রাউন্ডে বিতর্ক চলে নবারুণ পাবলিক স্কুল বনাম ভিক্টোরিয়া একাডেমি, আইডিয়াল প্রিপারেটরি এন্ড হাই স্কুল বনাম মমতাজ মেমোরিয়াল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বনাম মুকুল একাডেমি, ফৌজিয়া মতিন বনাম পুলিশ লাইন্স।
আইডিয়াল প্রিপারেটরি এন্ড হাই স্কুল প্রথম রাউন্ডে মমতাজ মেমোরিয়ালকে ৩৯ নম্বর, দ্বিতীয় রাউন্ডে সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিকে ৭ নম্বর এবং চূড়ান্ত পর্বে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ৩১.৫ নম্বরের ব্যবধানে হারিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক করার সুযোগ অর্জন করে। আইডিয়ালের পক্ষে ১ম বক্তা স্মরণ, দ্বিতীয় বক্তা ইমন এবং দলনেতার ভূমিকা পালন করে মুফতি। প্রতিটি পর্বে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে দলনেতা মুফতি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মহোদয় সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং আগামী ২৭ এপ্রিল জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেন। সেইসঙ্গে সহকারী শিক্ষকগণকে ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার রুটিনে যাতে ২৭ তারিখ দশম শ্রেণির পরীক্ষা না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি একটি ডিবেটিং ক্লাব করারও আশ্বাস প্রদান করেন।
“হারতে হারতে নিশ্চয়, একদিন তোমার হবেই জয়”
সহকারী শিক্ষক মোঃ রাবিউল ইসলাম স্যার বলেন, সত্যিই যেন আমাদের পক্ষে বিষয়টি তাই হয়েছে। পুলিশ লাইন্সে যতবার বিতর্ক করেছি ততবারই আমাদের হার হয়েছে। এবারও যখন সবার কঠোর পরিশ্রমে একটা শক্তিশালী দল দাঁড় করিয়েছি ঠিক তখনই বিতর্কের আগের দিন ফোন পেলাম দ্বিতীয় বক্তা ভীষণ অসুস্থ। অন্য যাদেরকে দলে রাখা হয়নি তাদের বেশিরভাগই সহযোগিতা তো দূরের কথা খবর নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি তখন চারদিক অন্ধকার দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতিও আমার বিরোধিতা শুরু করেছে। উপায়ান্তর না দেখে ময়মনসিংহ থেকে হেরে আসা দলটিকেই ঠিক রাখলাম। তারা সবাই কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে বেশ শক্ত হয়েছে। তবুও হারার এক অজানা ভয় বুকে নিয়ে জেতার বাসনায় তাদেরকে নিয়ে সকাল সাড়ে আটটায় যথাস্থানে হাজির হয়ে সবার আগে রেজিস্ট্রেশন করে বিতার্কিক শুভংকরের হাত থেকে একটা রজনীগন্ধার ডাঁটা হাতে নিয়ে খুব দ্রুত হাঁটা দিলাম স্কুলের উদ্দেশ্যে। স্কুলের নিকট যেতেই শেরপুর সরকারি কলেজের সাইফুল স্যার ফোন দিলেন তুমি এখনো স্কুলে যাওনি। কলেজ থেকে গাড়ি গিয়ে তোমাকে খুঁজছে। এক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে দেখি উপাধ্যক্ষ রশিদ স্যার বেশ মন খারাপ করেই দাঁড়িয়ে আছেন।
যাইহোক এইচএসসি পরীক্ষার কাজ শুরু করলাম। একসময় সেখানে রেখে আসা মামুন স্যার ও সবুজ স্যারের মাধ্যমে জানতে পারলাম প্রথম পর্বে আমরা জয়লাভ করেছি। মনের মধ্যে অজানা আনন্দ নতুন পানির পুঁটি মাছের মত লাফিয়ে ওঠল। পরীক্ষার কর্তব্য পালন শেষে জানলাম দ্বিতীয় পর্বে ভিক্টোরিয়াকেও হারিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে উত্তীর্ণ। স্কুলের ক্লাস শুরু হলে ক্লাস করতে করতে জানলাম বালিকা বিদ্যালয়কে হারিয়ে জাতীয় পর্যায়ে যাওয়া সুযোগ পেয়েছে আমাদের আইডিয়াল বিতার্কিক দল। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচা।
মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়েছিলাম, তাই সবার আগে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম এবং দশম শ্রেণির বালিকাদের খবরটা দিতেই দেখতে পেলাম অধ্যক্ষ স্যার স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছেন। আমি দ্রুত তাঁর নিকট গিয়ে সেখানে যেতে অনুরোধ করলাম। তিনি বরং আমাকেই যেতে বললেন। আমি বিদ্যুৎ বেগে সেখানে পৌঁছতেই দেখি সবাই চলে যাচ্ছে আর আমাদের শিক্ষার্থীরা আনন্দ ভাগাভাগি করছে।
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আনন্দধ্বনি তুললো। আমারও যেন আনন্দের সীমা নেই। এতোদিনের অনির্বচনীয় কষ্টের যেন অবসান হয়েছে। মনে হচ্ছিল ওরা আজ যা খেতে চায় তাই খাওয়াই, কিন্তু পকেটে ততটা টাকা নাই। যা আছে তা দিয়ে সবাইকে মুড়ি ভর্তাও খাওয়ানো সম্ভব হবে না। আনন্দে মনে হচ্ছিল যেন কী এক অসাধ্য আজ সাধন হয়েছে। সত্যিই তাদের সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টা। তর্ক নয়, যুক্তির ধ্যমেই ধরা দিক মুক্তির আনন্দ।”