আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই বুধবার দিন শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মফিজল হক এবং ময়ের নাম রোকেয়া হক। বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বাস করেন। তিনি দুই মেয়ে এক ছেলের জনক। তিনি পেশায় ছিলেন ডাক্তার।
১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থানীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন এবং তাঁদের সঙ্গে ভারতের ঢালুতে আশ্রয় নেন। ঢালুতে নিজেদের চেষ্টায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলেন। জুন মাসের পর তাঁদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
আগস্ট মাসে তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের ঢালু সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সাব-সেক্টরের অপারেশনাল এলাকা ছিল হালুয়াঘাট, ডালু, ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তেলিখালীতে ছিলো পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য একটি ঘাঁটি। প্রতিরক্ষায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১২৫ জনসহ রেঞ্জার্স ও রাজাকার। সব মিলিয়ে প্রায় ২৩৭ জন।
সেদিন (৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে তিনটায় একসঙ্গে গর্জে উঠল শত শত অস্ত্র। গুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যাচ্ছেন শত্রুর বাংকার লক্ষ্য করে। তাঁদের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্ট। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন।
আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ‘কাট অব পার্টির’ নেতৃত্বে দেন। সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধ সেদিন একে একে ভেঙে পড়তে থাকে। একপর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি যুদ্ধ। পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার পথ ছিল রুদ্ধ। ভোর পাঁচটার দিকে তাদের দিক থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর একজন ছাড়া সবাই নিহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ১৯ জন ও মিত্র বাহিনীর ৫৬ জন শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক‘ খেতাব প্রদান করে।