পর্যটনে শেরপুর (পুঁথিকাব্য)
আল্লাহ স্মরণ করি (২) দরুদ পড়ি রাসুলুল্লাহর প্রতি।
পিতা-মাতা, গুরুজনে জানাই সালাম-ভক্তি॥
তারপর একে একে (২) কথা ছেঁকে করি নিবেদন।
শেরপুর জেলার গৌরবগাঁথার কিছু বিবরণ॥
রূপে-গুণে রানি (২) সবাই জানি আমাদের এই জেলা।
মন ভরে যায়, চক্ষু জুড়ায় পুরাকীর্তি মেলা।
সবুজ ছায়া ঘেরা (২) মায়া ভরা আমাদের শেরপুর।
পর্যটনে প্রাণে মনে আনন্দ ভরপুর॥
আছে গারোপাহাড় (২) রূপের বাহার ঝর্ণাধারা থেকে।
আড়াআড়ি নদী বয়ে চলে এঁকেবেঁকে॥
বনে বন্যপ্রাণী (২) আছে জানি নানা জাতের গাছ।
সমতলে ফসল ফলে, নদী-নালায় মাছ॥
আছে রাজার পাহাড় (২) রূপের বাহার, বৃহত্তম মালভূমি।
ডেউফা নদী, বাবলাকোণায় নানা রূপ মৌসুমী॥
দেখে চক্ষু জুড়ায় (২) কর্ণঝোরায় বালু, রাবার বাগান।
ছোট বড় নানা জাতের বন্য প্রাণির বাথান॥
নেওয়া বাড়ির টিলায় (২) রঙ্গলীলায় শত শত হাতি।
দিনে রাতে বিচরণে করে মাতামাতি॥
চমকে যাবে পিলে (২) বৈশা বিলে পদ্ম ফুলের মেলায়।
শুদ্ধ বায়ু জাগায় স্নায়ু, আনন্দ ঢেউ খেলায়॥
“ইচলি” বিলের কাছে (২) জায়গা আছে “কোদালঝাড়া” নামে।
“দমদমাতে” সৈনিকেরা প্রশিক্ষণে ঘামে॥
আঠারো শ’ সাতে (২) বর্ণনাতে লেখা আছে জানি।
বৃটিশেরা তৈরি করে এই দমদমাখানি॥
বিপ্লবী নিয়োগী (২) ভূক্তভোগী, হার না মানা নেতা।
বাগান ঘেরা বাড়ি আছে শেরপুর টাউন যেথা’॥
বহু মুক্তিযোদ্ধা (২) জানাই শ্রদ্ধা মোস্তফা, নাজমুল।
স্মৃতি মাখা মৃগী নদী, কাটাখালি পুল
শেরপুর জেলা জুড়ে (২) সোহাগপুরে বহু গণকবর।
বগাডুবি, নকশী, জুলগাঁও, আহাম্মদনগর॥
আরও বলবো কত (২) অর্ধশত অধিকতর বাকি।
উনষাটটি বধ্যভূমি সেটাও বলে রাখি॥
মৃগী নদীর ধারে (২) ‘কসবা’ গাড়ে শাহাজাদা সুজায়।
‘কসবা’ মানে প্রশাসনিক ছোট কেন্দ্র বুঝায়॥
একুশ বছর ধরে (২) বসত করে রাজ্য শাসন চালান।
শাহাজাদা সুজার পিতা সম্রাট শাহজাহান॥
আজও মুঘল বাড়ি (২) নাপিত বাড়ি, থানাঘাট, কাঠগড়।
কাচারিঘাট, ধোপাঘাট নাম স্মৃতিতে ভাস্বর॥
বাজার ছিলো সস্তা (২) তার অবস্থা এক টাকা মণ ধান।
অন্য সকল পণ্যমূল্য হারাহারি মান॥
তেজারকান্দি গেলে (২) দেখা মেলে হাঁড়িগাঙ্গের ধারে।
নাম “গাজিপুর গার্ডেন সিটি” সবার নজর কাড়ে॥
ভাটি লঙ্গরপাড়া (২) পূর্বপাড়া চরশেরপুরে যাবে।
বিখ্যাত জামদানি শাড়ি মনের মতো পাবে॥
গজনি, ঝিনাইগাতী (২) মাতামাতি সারা বছর চলে।
গারো, হাজং, মান্দি, খাসি বাস করে সকলে॥
সেগুন, শাল, গজারি (২) সারি সারি বৃক্ষ আছে জানা।
ওয়াচ টাওয়ার, পশুপাখি, হ্রদ, চিড়িয়াখানা॥
বনের গাছে গাছে (২) ঝুলে আছে মৌমাছিদের বাসা।
খাঁটি মধুর স্বাদে-গন্ধে মনটা হবে খাসা॥
পাবে তাঁতের শাড়ি (২) রংবাহারি হস্তশিল্প মেলা।
নৌকা বাইচ, ঘোড়ার দৌড়, দেশি বহু খেলা॥
কাছেই বহুরূপী (২) “চুকোলুপি চিলড্রেন পার্ক” নামে।
“বনরানি ফরেস্ট রিসোর্ট” গান্ধীগাঁয়ের ধামে॥
পাহাড় ঘেরা নদী (২) দেখবে যদি তাওয়াকুচা যাবে।
“মায়াবী লেক”, সবুজ টিলা, বন্যপ্রাণী পাবে॥
পর্যটনের লীলা (২) “মধুটিলা” নালিতাবাড়িতে।
বনভোজনে আসে মানুষ গাড়িতে গাড়িতে॥
রামচন্দ্রকুড়া (২) আছে জোড়া অপূর্ব পাহাড়।
“তরানি” আর “পানিহাটা“, দেখতে চমৎকার॥
“সূতানালি দিঘী” (২) ঝিকিমিকি করে কাঁকরকান্দি।
“সশাল” নামে রাজা থাকতো মাঝখানে ঘর বান্ধি’॥
অধীন সৈনিকেরা (২) ঘোরাফেরা করে নৌকায় চড়ে।
দিনে রাতে পাহারা দেয় পালাবদল করে॥
এক শ’ আশি বিঘা (২) প্রস্থ-দিঘা জমি জুড়ে পুকুর।
স্বচ্ছ পানি, দেখতে জানি মস্ত বড় মুকুর॥
মহারাজার ঘর (২) রাজনগর, কাছেই হাতিবান্দা।
ঐতিহ্যময় বড় বন্দর, আছে মাছের মান্দা॥
ভোগাই নদী জুড়ে (২) পাচ্ছে খুঁড়ে পাথর, চীনামাটি।
পাথরের কয়ারি আছে মোকাম ঝিনাইগাতী॥
আছে গাজীর মাজার (২) গাজীর খামার গিদ্দাপাড়া গ্রামে।
এই অঞ্চলের নামকরণ শের আলী গাজীর নামে॥
সুফি আব্দুল বাকী (২) বলে রাখি, বিবি মাইসাহেবা।
আত্মত্যাগী ভূক্তভোগী করে ধর্মের সেবা॥
আজও গড়জরিপায় (২) ওই দেখা যায় কালিদহের পাড়।
বারোদ্বারী মসজিদ, ডিঙ্গি, জরিপ শাহের মাজার॥
সনাতনি যারা (২) আজও তারা অষ্টমী স্নান করে।
বারুণী স্নান, পূজা-পার্বণ করে শ্রদ্ধা ভরে॥
প্রাচীন নিদর্শন (২) অমূল্য ধন গড়জরিপা জানি।
রূপে-গুণে, ধনে-মানে সে যে মহারানি॥
গড়জরিপার কাছে (২) আজও আছে “কাদির পীরের” দরগা।
দক্ষিণ-পূর্ব কোণাকুণি ঘোনাপাড়া জায়গা॥
ছোট মসজিদ আছে (২) পশ্চিম পাশে আছে মাটির টিলা।
বড় একটি পাথর আছে, বুঝি না তার লীলা॥
রাজা মায়ের দিঘী (২) আলম দিঘী, সাহেব দিঘী আছে।
উত্তর পাশে কূয়া আছে মসজিদের খুব কাছে॥
পরম শ্রদ্ধা ভরে (২) স্মরণ করে জ্ঞানী-গুণী যারা।
আজগুবি সব কথায় মাতে বিদ্যা-বুদ্ধিহারা॥
শাহ কামালের মাজার (২) রুনীর মাজার, নাকুগাঁও বন্দর।
রাবারের ড্যাম, কলাবাগান, দাওধরা সুন্দর॥
ঘাগরা লস্করবাড়ি (২) ইন্দিলপুরে, কসবা মুঘলপাড়ায়।
মসজিদ দেখে ঐতিহ্যময় স্মৃতিতে মন হারায়॥
শনি, গোপীনাথ (২) রঘুনাথ, অন্নপূর্ণা মন্দির।
বারোমারি মিশন আছে সাম্প্রদায়িক সন্ধির॥
আছে ভিন্ন ধর্মের (২) ভিন্ন কর্মের ভিন্ন ভিন্ন রীতি।
হাজার বছর ধরে আছে সম্প্রদায়িক প্রীতি॥
নাটক ও সিনেমায় (২) ওই দেখা যায় মামুন, কামাল, মুকুল।
চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার প্রস্ফুটিত ফুল॥
নানান খেলাধুলায় (২) শেরপুর জেলায় সম্মানিত অতি।
নান্নু, মঞ্জু, সোহরাব, মন্টু, নার্গিস, নিগার জ্যোতি॥
আগের দিনের আতিক (২) আব্দুল খালিক, হযরত আলী মৃধা।
কালা, ঝন্টু, ছানা, টুরু বলে দিলাম সিধা॥
গল্প , ছড়া লেখক (২) ও গবেষক, আছে কাব্যপ্রেমী।
সাইফুল্লাহ পান সম্মাননা বাংলা একাডেমি॥
কবি জিতেন সেন (২) জিতিয়াছেন কোলকাতার গোল্ড মেডেল।
রিয়াজ, হাসান, সোহরাব আলীর বিদ্যাবুদ্ধি অঢেল॥
গিরিশ চন্দ্র সেন (২) প্রকাশ করেন বঙ্গানুবাদ কোরান।
হরচন্দ্রের চারু প্রেসে পয়লা মূদ্রণ করান॥
“বিষাদ সিন্ধু” গ্রন্থ (২) কয়েক খণ্ড ছাপে চারু প্রেসে।
“চারু ভবন” দেখতে পাবেন এই শেরপুরে এসে॥
পুঁথি, কেচ্ছা, গাঁথা (২) নকশি কাঁথা, মণ্ডা, মিঠাই, মিষ্টি।
ধানের চাতাল , বাঁশের শিল্প অনবদ্য সৃষ্টি॥
প্রিয় শেরপুরবাসী (২) ভোগবিলাসী তুলশীমালার গন্ধে।
মহিষের দই, ছানার পায়েস, পিঠা খাই আনন্দে॥
সবাই সবার প্রতি (২) শ্রদ্ধা-ভক্তি দৃঢ় মনোবলে।
প্রয়োজনে মিলিত হই এক পতাকাতলে॥
দাদা গরিবুল্লাহ (২) বলি খুইলা পিতা রজব আলী।
মায়ের নামটি হাজেরা আর নানা আস্কর আলী॥
আমি অধম হারুন (২) মুর্খ দারুণ, জানি কি আর অত?
যা জেনেছি তাই লেখেছি, করে নিজের মত॥
বলি সবার কাছে (২) বাকি আছে বহু তথ্য-কথা।
অনুসন্ধান করলে পাবেন কথার যথার্থতা॥
ত্রুটি থাকে যদি (২) শেষ অবধি ধরিয়ে দিন, তবে।
কথা দিলাম শ্রদ্ধা ভরে সংশোধিত হবে॥
আমার কথা যত (২) আপাতত হয়ে গেলো শেষ।
ইতিহাসে ঐতিহ্যময় সোনার বাংলাদেশ॥
আমার — সোনার বাংলাদেশ॥
টীকা:
সুফি আব্দুল বাকী ও মাইসাহেবা — সুফি দরবেশ মীর আব্দুল বাকী। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে দশকাহনিয়া বাজুর অন্তর্গত সুসাং এর মহারাজা ২৭ (সাতাস ) একর জমি দান করেন। কিন্তু, তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ছালেমুন নেছা মাইসাহেবার সময় তৎকালীন জমিদার রাধা বল্লভ চৌধুরী মাত্র ৮ (আট) শতাংশ ছাড়া সব জমি জবর দখল করে নেয়। যে আট শতাংশ জমি দখলমুক্ত ছিলো, সেই জমিতেই স্থাপিত হয় শেরপুর শহরের প্রথম মসজিদ। সেটিই বিখ্যাত মাইসাহেবা জামে মসজিদ। পরবর্তীতে মসজিদের জমি পরিবর্ধন করা হয়েছে।
নিগার জ্যোতি — নিগার সুলতানা জ্যোতি। জন্ম ০১/০৭/১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে, শেরপুর। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক (২০২৪)। জাতীয় টি-২০ দলের অধিনায়ক ছিলেন (২০২৩)।