পর্যটনে শেরপুর (পুঁথিকাব্য)
আল্লাহ স্মরণ করি (২) দরুদ পড়ি রাসুলুল্লাহর প্রতি।
পিতা-মাতা, গুরুজনে জানাই সালাম-ভক্তি॥
তারপর একে একে (২) কথা ছেঁকে করি নিবেদন।
শেরপুর জেলার গৌরবগাঁথার কিছু বিবরণ॥
রূপে-গুণে রানি (২) সবাই জানি আমাদের এই জেলা।
মন ভরে যায়, চক্ষু জুড়ায় পুরাকীর্তি মেলা।
সবুজ ছায়া ঘেরা (২) মায়া ভরা আমাদের শেরপুর।
পর্যটনে প্রাণে মনে আনন্দ ভরপুর॥
আছে গারোপাহাড় (২) রূপের বাহার ঝর্ণাধারা থেকে।
আড়াআড়ি নদী বয়ে চলে এঁকেবেঁকে॥
বনে বন্যপ্রাণী (২) আছে জানি নানা জাতের গাছ।
সমতলে ফসল ফলে, নদী-নালায় মাছ॥
আছে রাজার পাহাড় (২) রূপের বাহার, বৃহত্তম মালভূমি।
ডেউফা নদী, বাবলাকোণায় নানা রূপ মৌসুমী॥
দেখে চক্ষু জুড়ায় (২) কর্ণঝোরায় বালু, রাবার বাগান।
ছোট বড় নানা জাতের বন্য প্রাণির বাথান॥
নেওয়া বাড়ির টিলায় (২) রঙ্গলীলায় শত শত হাতি।
দিনে রাতে বিচরণে করে মাতামাতি॥
চমকে যাবে পিলে (২) বৈশা বিলে পদ্ম ফুলের মেলায়।
শুদ্ধ বায়ু জাগায় স্নায়ু, আনন্দ ঢেউ খেলায়॥
“ইচলি” বিলের কাছে (২) জায়গা আছে “কোদালঝাড়া” নামে।
“দমদমাতে” সৈনিকেরা প্রশিক্ষণে ঘামে॥
আঠারো শ’ সাতে (২) বর্ণনাতে লেখা আছে জানি।
বৃটিশেরা তৈরি করে এই দমদমাখানি॥
বিপ্লবী নিয়োগী (২) ভূক্তভোগী, হার না মানা নেতা।
বাগান ঘেরা বাড়ি আছে শেরপুর টাউন যেথা’॥
বহু মুক্তিযোদ্ধা (২) জানাই শ্রদ্ধা মোস্তফা, নাজমুল।
স্মৃতি মাখা মৃগী নদী, কাটাখালি পুল॥
টিকরকান্দি গ্রামে (২) আইয়ুব নামে মেজর পাকিস্তানি।
বীর যোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয় জানি॥
সাতই ডিসেম্বরে (২) অর্জন করে শেরপুরের বিজয়।
দারগ আলী পার্কে বিশাল লোক সমাগম হয়॥
বিজয় নিশান ওড়ে (২) হৃদয় জুড়ে স্বাধীনতার সুখ।
ভাই হারানোর বেদনাতে ভারাক্রান্ত বুক॥
শেরপুর জেলা জুড়ে (২) সোহাগপুরে বহু গণকবর।
বগাডুবি, নকশী, জুলগাঁও, আহাম্মদনগর॥
আরও বলবো কত (২) অর্ধশত অধিকতর বাকি।
উনষাটটি বধ্যভূমি সেটাও বলে রাখি॥
মৃগী নদীর ধারে (২) ‘কসবা’ গাড়ে শাহাজাদা সুজায়।
‘কসবা’ মানে প্রশাসনিক ছোট কেন্দ্র বুঝায়॥
একুশ বছর ধরে (২) বসত করে রাজ্য শাসন চালান।
শাহাজাদা সুজার পিতা সম্রাট শাহজাহান॥
আজও মুঘল বাড়ি (২) নাপিত বাড়ি, থানাঘাট, কাঠগড়।
কাচারিঘাট, ধোপাঘাট নাম স্মৃতিতে ভাস্বর॥
বাজার ছিলো সস্তা (২) তার অবস্থা এক টাকা মণ ধান।
অন্য সকল পণ্যমূল্য হারাহারি মান॥
তেজারকান্দি গেলে (২) দেখা মেলে হাঁড়িগাঙ্গের ধারে।
নাম “গাজিপুর গার্ডেন সিটি” সবার নজর কাড়ে॥
ভাটি লঙ্গরপাড়া (২) পূর্বপাড়া চরশেরপুরে যাবে।
বিখ্যাত জামদানি শাড়ি মনের মতো পাবে॥
গজনি, ঝিনাইগাতী (২) মাতামাতি সারা বছর চলে।
গারো, হাজং, মান্দি, খাসি বাস করে সকলে॥
সেগুন, শাল, গজারি (২) সারি সারি বৃক্ষ আছে জানা।
ওয়াচ টাওয়ার, পশুপাখি, হ্রদ, চিড়িয়াখানা॥
বনের গাছে গাছে (২) ঝুলে আছে মৌমাছিদের বাসা।
খাঁটি মধুর স্বাদে-গন্ধে মনটা হবে খাসা॥
পাবে তাঁতের শাড়ি (২) রংবাহারি হস্তশিল্প মেলা।
নৌকা বাইচ, ঘোড়ার দৌড়, দেশি বহু খেলা॥
কাছেই বহুরূপী (২) “চুকোলুপি চিলড্রেন পার্ক” নামে।
“বনরানি ফরেস্ট রিসোর্ট” গান্ধীগাঁয়ের ধামে॥
পাহাড় ঘেরা নদী (২) দেখবে যদি তাওয়াকুচা যাবে।
“মায়াবী লেক”, সবুজ টিলা, বন্যপ্রাণী পাবে॥
পর্যটনের লীলা (২) “মধুটিলা” নালিতাবাড়িতে।
বনভোজনে আসে মানুষ গাড়িতে গাড়িতে॥
রামচন্দ্রকুড়া (২) আছে জোড়া অপূর্ব পাহাড়।
“তরানি” আর “পানিহাটা“, দেখতে চমৎকার॥
“সূতানালি দিঘী” (২) ঝিকিমিকি করে কাঁকরকান্দি।
“সশাল” নামে রাজা থাকতো মাঝখানে ঘর বান্ধি’॥
অধীন সৈনিকেরা (২) ঘোরাফেরা করে নৌকায় চড়ে।
দিনে রাতে পাহারা দেয় পালাবদল করে॥
এক শ’ আশি বিঘা (২) প্রস্থ-দিঘা জমি জুড়ে পুকুর।
স্বচ্ছ পানি, দেখতে জানি মস্ত বড় মুকুর॥
মহারাজার ঘর (২) রাজনগর, কাছেই হাতিবান্দা।
ঐতিহ্যময় বড় বন্দর, আছে মাছের মান্দা॥
ভোগাই নদী জুড়ে (২) পাচ্ছে খুঁড়ে পাথর, চীনামাটি।
পাথরের কয়ারি আছে মোকাম ঝিনাইগাতী॥
আছে গাজীর মাজার (২) গাজীর খামার গিদ্দাপাড়া গ্রামে।
এই অঞ্চলের নামকরণ শের আলী গাজীর নামে॥
সুফি আব্দুল বাকী (২) বলে রাখি, বিবি মাইসাহেবা।
আত্মত্যাগী ভূক্তভোগী করে ধর্মের সেবা॥
আজও গড়জরিপায় (২) ওই দেখা যায় কালিদহের পাড়।
বারোদ্বারী মসজিদ, ডিঙ্গি, জরিপ শাহের মাজার॥
সনাতনি যারা (২) আজও তারা অষ্টমী স্নান করে।
বারুণী স্নান, পূজা-পার্বণ করে শ্রদ্ধা ভরে॥
প্রাচীন নিদর্শন (২) অমূল্য ধন গড়জরিপা জানি।
রূপে-গুণে, ধনে-মানে সে যে মহারানি॥
গড়জরিপার কাছে (২) আজও আছে “কাদির পীরের” দরগা।
দক্ষিণ-পূর্ব কোণাকুণি ঘোনাপাড়া জায়গা॥
ছোট মসজিদ আছে (২) পশ্চিম পাশে আছে মাটির টিলা।
বড় একটি পাথর আছে, বুঝি না তার লীলা॥
রাজা মায়ের দিঘী (২) আলম দিঘী, সাহেব দিঘী আছে।
উত্তর পাশে কূয়া আছে মসজিদের খুব কাছে॥
পরম শ্রদ্ধা ভরে (২) স্মরণ করে জ্ঞানী-গুণী যারা।
আজগুবি সব কথায় মাতে বিদ্যা-বুদ্ধিহারা॥
শাহ কামালের মাজার (২) রুনীর মাজার, নাকুগাঁও বন্দর।
রাবারের ড্যাম, কলাবাগান, দাওধরা সুন্দর॥
ঘাগরা লস্করবাড়ি (২) ইন্দিলপুরে, কসবা মুঘলপাড়ায়।
মসজিদ দেখে ঐতিহ্যময় স্মৃতিতে মন হারায়॥
শনি, গোপীনাথ (২) রঘুনাথ, অন্নপূর্ণা মন্দির।
বারোমারি মিশন আছে সাম্প্রদায়িক সন্ধির॥
আছে ভিন্ন ধর্মের (২) ভিন্ন কর্মের ভিন্ন ভিন্ন রীতি।
হাজার বছর ধরে আছে সম্প্রদায়িক প্রীতি॥
নাটক ও সিনেমায় (২) ওই দেখা যায় মামুন, কামাল, মুকুল।
চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার প্রস্ফুটিত ফুল॥
নানান খেলাধুলায় (২) শেরপুর জেলায় সম্মানিত অতি।
নান্নু, মঞ্জু, সোহরাব, মন্টু, নার্গিস, নিগার জ্যোতি॥
আগের দিনের আতিক (২) আব্দুল খালিক, হযরত আলী মৃধা।
কালা, ঝন্টু, ছানা, টুরু বলে দিলাম সিধা॥
গল্প , ছড়া লেখক (২) ও গবেষক, আছে কাব্যপ্রেমী।
সাইফুল্লাহ পান সম্মাননা বাংলা একাডেমি॥
কবি জিতেন সেন (২) জিতিয়াছেন কোলকাতার গোল্ড মেডেল।
রিয়াজ, হাসান, সোহরাব আলীর বিদ্যাবুদ্ধি অঢেল॥
গিরিশ চন্দ্র সেন (২) প্রকাশ করেন বঙ্গানুবাদ কোরান।
হরচন্দ্রের চারু প্রেসে পয়লা মূদ্রণ করান॥
“বিষাদ সিন্ধু” গ্রন্থ (২) কয়েক খণ্ড ছাপে চারু প্রেসে।
“চারু ভবন” দেখতে পাবেন এই শেরপুরে এসে॥
পুঁথি, কেচ্ছা, গাঁথা (২) নকশি কাঁথা, মণ্ডা, মিঠাই, মিষ্টি।
ধানের চাতাল , বাঁশের শিল্প অনবদ্য সৃষ্টি॥
প্রিয় শেরপুরবাসী (২) ভোগবিলাসী তুলশীমালার গন্ধে।
মহিষের দই, ছানার পায়েস, পিঠা খাই আনন্দে॥
সবাই সবার প্রতি (২) শ্রদ্ধা-ভক্তি দৃঢ় মনোবলে।
প্রয়োজনে মিলিত হই এক পতাকাতলে॥
দাদা গরিবুল্লাহ (২) বলি খুইলা পিতা রজব আলী।
মায়ের নামটি হাজেরা আর নানা আস্কর আলী॥
আমি অধম হারুন (২) মুর্খ দারুণ, জানি কি আর অত?
যা জেনেছি তাই লেখেছি, করে নিজের মত॥
বলি সবার কাছে (২) বাকি আছে বহু তথ্য-কথা।
অনুসন্ধান করলে পাবেন কথার যথার্থতা॥
ত্রুটি থাকে যদি (২) শেষ অবধি ধরিয়ে দিন, তবে।
কথা দিলাম শ্রদ্ধা ভরে সংশোধিত হবে॥
আমার কথা যত (২) আপাতত হয়ে গেলো শেষ।
ইতিহাসে ঐতিহ্যময় সোনার বাংলাদেশ॥
আমার — সোনার বাংলাদেশ॥
টীকা:
ডিঙ্গি: ডিঙ্গি অর্থ নৌকা। গড়জরিপাকে সবচেয়ে সুন্দর ও সুবিন্যস্ত করে সাজিয়েছেন শাহ মজলিস খান হুমায়ূন। দুর্গের ভিতরে সৈন্য সামন্ত, হাতি, ঘোড়া ছিলো। জলপান ও গোসলের জন্য অনেকগুলো পুকুর ছিলো। দুর্গের দক্ষিণ পাশের খালে চারিদিকে পানি বেষ্টিত দ্বীপের মতো নৌকা বা ডিঙ্গির মত লম্বালম্বি একটি শৌখিন ফুলবাগান ছিলো। কালের পরিক্রমায় এই ডিঙ্গি আকৃতির বাগানটি হারিয়ে যায়। কিন্তু স্মৃতিচিহ্ন থেকে যায়। ওই স্থানটি লোকমুখে ডিঙ্গি নামে পরিচিত হয়েছে।
কালিদহ: সুফি জরিপ শাহ তৎকালীন অখ্যাত এই এলাকায় তার আস্তানা প্রতিষ্ঠা ও রাজত্ব কায়েম করেন। নিরাপত্তার জন্য আস্তানার তিন পাশ ঘেরা একটি খাল তৈরি করেন। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় কালিদহ সাগর।
মসজিদ: শাহী বারো দুয়ারী মসজিদ। জরিপ শাহে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
জরিপ শাহের মাজার: কালিদহ সাগর পাড়ে সুফি জরিপ শাহের মাজার অবস্থিত।
কাদির পীর: সুদূর ইয়েমেন থেকে ভারতে ধর্ম প্রচার করতে এক সাথে বারোজন আসেন। তাদের একজন ওলি আব্দুল কাদির (রহ.)। ঘোনাপাড়ায় তার মাজার আছে।
দমদমা: মাটির উঁচু টিলা। যে টিলায় সৈনিকেরা গুলি চালানো প্রশিক্ষণ দেয়। শেরপুরের কোদালঝাড়া মূলত একটি দমদমা। বৃটিশরা এটি তৈরি করে ১৮০৭ সালে।
রুনী গাঁয়ের মসজিদ, মাজার: মোঘল পরিবারের রমনী রুনী বেগম। তার একটা পূত্র ছিলো। তখন জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বেশি ছিলো। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে সে পুত্রকে জলদস্যুরা অপহরণ করে আরাকানে ( বর্তমান চট্টগ্রাম ) নিয়ে যায়। রুনী বেগম পুত্রশোকে পাগলপারা হয়ে চার বেহারার পালকি নিয়ে দরবার থেকে আরাকানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক সরাইখানায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সেখানেই মারা যান। সেখানেই তাকে কবর দেয়া হয়। সম্রাটের কাছে খবর পৌঁছুলে দরবার থেকেই সম্রাট কাঠমিস্ত্রিসহ পাইক পেয়াদা পাঠান। তার কবরের পাশেই একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং ওই এলাকার নামকরণ করা হয় “রুনী গাঁও”। সেই রুনীর মাজার ও মসজিদ আজও আছে, নকলায়।
ইন্দিলপুরে মসজিদ: ইন্দিলপুর (পূর্ব পাড়া) ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ। শেরপুরের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি। প্রায় চার শত বছর আগে ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন হিন্দু জমিদারদের দৌরাত্ম্যে মুসলমানগণ দাড়ি রাখতে, টুপি পরতে অনুমতি নিতে হতো। মুসলমানরা তাদের নামের আগে শ্রী, শ্রীমান, শ্রীমতি লিখতে বাধ্য থাকতো। সে সময়ে মসজিদ নির্মাণ করা দুঃসাধ্য ছিলো। বহু দূর থেকেও এসে মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। স্থানীয় মুসলমানদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন রসুল মাহমুদ ব্যাপারী ওরফে উছলে ব্যাপারী। যতদূর জানা যায়, তিনি ছিলেন জমিদারের অন্যতম ফারায়েজ (প্রজাদের ভূমি বন্দোবস্তকারী)। যার ফলে তিনি এই দুঃসাধ্য কাজ (মসজিদ নির্মাণ) করতে পেরেছেন। উল্লেখ্য, এই মসজিদটি “ঐতিহ্যবাহী রসুল মাহমুদ জামে মসজিদ” নামকরণের দাবি জানাই।
ঈদের মাঠ: ইন্দিলপুর মধ্যপাড়ায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ঈদের মাঠ। ঐতিহ্যবাহী মসজিদ প্রতিষ্ঠার বেশ কয়েক বছর পর ঐতিহ্যবাহী ঈদের মাঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। রসুল মাহমুদ ব্যাপারীর পুত্র আরজ আলী ব্যাপারী এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
টিকরকান্দি: ১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর কামালপুরে মুক্তিযোদ্ধারা জয়লাভ করেন। কামালপুর, বাট্টাজোরসহ বেশ কিছু এলাকা তখন শ্রীবরদী থানাধীন ছিলো। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধারা টিকরকান্দি গ্রামে অবস্থান নেন। ৫ই ডিসেম্বর রাতে সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানের মেজর আইয়ুব নিহত হয়। এর মাধ্যমেই শ্রীবরদীর বিজয় নিশ্চিত হয়।
জামদানি পল্লী: শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর গ্রামে কামরুল ইসলাম এবং ভাটিলঙ্গরপাড়া গ্রামের এনামুল হক জামদানি পল্লী গঠন করেছেন। দেশে বিদেশে শেরপুরের জামদানি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সুফি আব্দুল বাকী ও মাইসাহেবা: সুফি দরবেশ মীর আব্দুল বাকী। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে দশকাহনিয়া বাজুর অন্তর্গত সুসাং এর মহারাজা ২৭ ( সাতাস ) একর জমি দান করেন। কিন্তু, তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ছালেমুন নেছা (মাইসাহেবা)-র সময় তৎকালীন জমিদার রাধা বল্লভ চৌধুরী মাত্র ৮ (আট) শতাংশ ছাড়া সব জমি জবর দখল করে নেয়। যে আট শতাংশ জমি দখলমুক্ত ছিলো, সেই জমিতেই স্থাপিত হয় শেরপুর শহরের প্রথম মসজিদ। সেটিই বিখ্যাত মাইসাহেবা জামে মসজিদ। পরবর্তীতে মসজিদের জমি পরিবর্ধন করা হয়েছে।
নিয়োগী: বিপ্লবী রবি নিয়োগী। পিতা রমেশ চন্দ্র নিয়োগী। মাতা সুরবালা নিয়োগী। জন্ম ৩০/০৪/১৯০৯ মৃত্যু ১০/০৫/২০০২ খ্রিস্টাব্দ। বৃটিশ বিরোধী অবিসংবাদিত বিপ্লবী নেতা। টঙ্ক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সহ জীবদ্দশায় জনহিতকর প্রায় সব আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। জীবনে ৩৪ বছর কারা ভোগ করেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অবিসংবাদিত আন্দামান ফেরত বিপ্লবী নেতা।
হরচন্দ্র: জমিদার হরচন্দ্র রায় চৌধুরী। শেরপুরের প্রথম প্রেস চারু প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই চারু প্রেস থেকেই সাপ্তাহিক চারু বার্তা প্রকাশিত হয় ১৮৮১ সালে। হরচন্দ্র রায় চৌধুরী বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারশি, ও ইংরেজি ভাষায় বিদ্বান ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থাবলী — উপাসনোল্লাসিনী, শ্রীবৎস উপাখ্যান, শেরপুর বিবরণী (১৮৭২), বংশানুচরিত (১৮৮৬), শেরপুরের বংশাবলী, মানুষের মহত্ত্ব, ভারতবর্ষীয় আর্য জাতির কর্মকাণ্ড।
নাজমুল ও কাটাখালি পুল: শহিদ নাজমুল আহসান। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং কাটাখালি পুলের ধারে নিয়ে হত্যা করে। তিনি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন ( মরণোত্তর)। স্মৃতি বিজড়িত সেই কাটাখালি পুলে শহিদ নাজমুল স্কয়ার আছে।
মোস্তফা ও মৃগী নদী: শহিদ গোলাম মোস্তফা। পিতা আছির উদ্দিন তালুকদার। মাতা মাহমুদা খাতুন। পাকিস্তানে সৈন্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং পরে মৃগী নদীর শেরি পুলের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ২৩শে আগস্ট দিবাগত রাত বারোটার পর। স্মৃতি বিজড়িত শেরী পুলের ধারে শহিদ গোলাম মোস্তফা স্কয়ার এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দাবি করছি।
মামুন: আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার ও নাট্যকার। বিটিভিতে প্রযোজক হিসেবে ১৯৬৬ সালে যোগ দিয়ে পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯১ সালে। তিনি ২৫টি নাটক, ৭টি উপন্যাস, আত্মজীবনী ও ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন ।
কামাল: কামাল মোঃ কিবরিয়া। রঙিন সাগর ভাসাসহ বহু সিনেমা প্রযোজনা করেছেন।
মুকুল: শহিদুল ইসলাম তালুকদার মুকুল। খায়রুন সুন্দরী সহ বহু সিনেমায় অভিনয় ও প্রযোজনা করেছেন।
চন্দ্রকান্ত: মহাপণ্ডিত চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। অবিভক্ত ভারতে কোলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়াও পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির “গভর্নমেন্ট সংস্কৃত উপাধি” পরীক্ষার পরীক্ষক এবং “এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল”-এর সদস্য ছিলেন। সতী পরিণয়, শিশুশিক্ষা ও প্রাথমিক পাঠশালা সহ ৩১টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়াও মঞ্চনাটকে অদ্বিতীয় প্রতীভার অধিকারী ছিলেন।
সাইফুল্লাহ: বিশিষ্ট কবি ও গবেষক। সাহিত্যে শেরপুর জেলার প্রথম বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন ২০২৪ ইং সালে।
জিতেন সেন: বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। অবিভক্ত ভারতে কোলকাতার গোল্ড মেডেল লাভ করেন।
রিয়াজ হাসান: ডক্টর রিয়াজুল হাসান। মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের জোলগাঁওয়ের বাসিন্দা। তিনি শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বর্তমানে (২০২৪ ইং) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এন সি টি বি ) চেয়ারম্যান।
সোহরাব আলী: বায়োকেমিস্ট্রিতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত (২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) একমাত্র বি এল ডিগ্রিধারী।
নান্নু: মনোয়ার হোসেন নান্নু। জন্ম ২৭/০৮/১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে, মারামারি গ্রামে। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বর্ষসেরা ফুটবলার এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন। তিনি জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়াও আবাহনী, মোহামেডান, দিলকুশা, ওয়ারী ক্লাব, রহমতগঞ্জের হয়ে খেলেছেন। আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন। মজার ব্যাপার, ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবাহনী এবং ছোট ভাই মঞ্জু মোহামেডানের অধিনায়ক হয়ে জমজমাট খেলা উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকায় নান্নু-মঞ্জু এই দুই ভাইয়ের নাম থাকবে।
মঞ্জু: শামসুল আলম মঞ্জু। জন্ম ১৪/০৩/১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে, মলামারি গ্রামে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ক্রেতা লেখক সমিতির বর্ষসেরা পুরস্কার এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন। তিনি জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়াও আবাহনী, মোহামেডান, রহমতগঞ্জ, ধানমন্ডি ক্লাব ওয়ারী ক্লাবেও খেলেছেন। মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন। রহমতগঞ্জে এবং যুব চ্যাম্পিয়নশিপ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ ছিলেন।
সোহরাব: মোঃ সোহরাব আলী। মামদামারি, ধিয়ের চর। প্রায় সারা দেশেই হাডুডু খেলায় সুনাম অর্জন করেছেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সাফ গেমসে কাবাডির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ার ছিলেন। তার দল রানার্সআপ হয়। তিনি বর্তমানে আর্মি গলফ ক্লাবের কোচ।
মন্টু: আকরাম হোসেন মন্টু। মামদামারি। প্রায় সারা দেশেই হাডুডু খেলায় সুনাম অর্জন করেছেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সাফ গেমসে কাবাডির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ার ছিলেন। তার দল রানার্সআপ হয়।
জহির রায়হান: কুসুমহাটি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জহির রায়হান। ২০২০ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক গেমসে ( পুরুষ ৪০০ মিটার ) অংশগ্রহণ করেন।
নার্গিস: জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ২০২৪।
নিগার জ্যোতি — নিগার সুলতানা জ্যোতি। জন্ম ০১/০৭/১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে, শেরপুর। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক (২০২৪)। জাতীয় টি-২০ দলের অধিনায়ক ছিলেন (২০২৩)।