গারো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা অঞ্চলের নাম নকশী৷ এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ মহান মুক্তিযোদ্ধে অবদান রাখেন। মুসলিম, গারো, খ্রিস্টান এবং নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়সহ সবাই যুদ্ধে অংশ নেয়। তাদের একজন ছিলেন নীরেন্দ্র মারাক ২৫ বছরের যুবক। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য তুরা রংনাবাগ শিবিরে চলে যায়৷ তারপর তিনি “নাজমুল আহসান” কোম্পানিতে যোগ দেন। নাজমুল আহসান কাঁটাখালী যুদ্ধে শহিদ হওয়ার পর নরেন্দ্র মারাক ঝিনাইগাতী অঞ্চলের যুদ্ধের সাথে অন্য কোম্পানিতে যোগ দেন।
একদিন সন্ধ্যায় ভারতীয় পোড়াকাশিয়া আর্মি ক্যাম্পে থেকে মেজর এসে বললেন নকশী যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে। প্রায় ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও হাকিম সুবেদারের নেতৃত্বে ইপিআর এর ২০-২৫ জন জোয়ান এবং ভারতীয় এক প্লাটুন সৈনিকসহ নকশী বিওপি আক্রমণের জন্য রওয়ানা হয়৷ ক্যাম্পের চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা এবং ঘুটঘুটে অন্ধকার। উত্তর দিক ছাড়া সবদিক থেকে ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলা হয়। পাহাড়ের টিলায় হেভি মেশিনগান আর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর হাতে এলএমজি, এসএলআর এবং এসএমজি। ভারতীয় সেনা ক্যাম্পে বসানো ছিল সিক্স পাউন্ডার মার্টারগান।
মাঝরাতে কমান্ডারের নির্দেশে ফায়ার শুরু করা হয় এবং পাকিস্তানিরাও পাল্টা জবাব দেয়। তীব্র গোলাগুলির একপর্যায়ে আহম্মদনগর পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে দুটি মার্টাল শেল এসে মুক্তিবাহিনীর ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহিদ হন। মুক্তিযোদ্ধারর ভীত হয়ে যায় এবং কমান্ডারের নির্দেশে ক্রলিং করে স্থান ত্যাগ করে।
পরদিন আহম্মদনগর থেকে শেরপুরে ১০ টি মুক্তিযোদ্ধা লাশ পাঠায় পাকিস্তানিরা। শেরপুরের রাজাকারগণ লাশগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। একই দিন কিছু পাকিস্তানি সেনাও আহত হয়। নকশী শহিদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা সবাই টাঙ্গাইলের ছিল তাই তাদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করা যায়নি।
তথ্য সূত্র- মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস।