Our Sherpur

মাইসাহেবা জামে মসজিদ

শেরপুর শহের পা রাখলে প্রথমেই যে পুরনো ঐতিহ্য চোখে পড়বে তার নাম মাইসাহেবা জামে মসজিদ।

যারা শেরপুর একবার হলেও এসেছে চোখ বন্ধ করে শেরপুরের নাম নিলেও এই মাইসাহেবা জামে মসজিদ টি ভেসে আসে দর্শনার্থীদের নজরে। আনুমানিক ২৫০ বছর আগে নির্মিত হয় এ মসজিদটি, বর্তমানে নতুন সংস্করণ আনা হলেও তাতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। এর দুই পাশের সুউচ্চ ২ টি মিনার চোখে পড়ে অনেক দূর থেকে। মাইসাহেবা জামে মসজিদের এরিয়াতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২ টি বিশাল গেইট।

My Saheba Gate

মাইসাহেবা জামে মসজিদের এরিয়াতে প্রবেশ পথ

মসজিদটির নামকরণ নিয়ে রয়েছে একটা গল্প নিচে তা তুলে ধরা হলো-

শেরপুরের তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার জমিদার কে দাওয়াত করেন। দাওয়াতের উত্তরে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে একটি জায়গা চান যেখানে তিনি বিশ্রাম করবেন। আর সে সময় এ স্থানে জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘরের পাশে একটা ঘর ছিলো, তিনআনি জমিদার এলাকাটা মুক্তাগাছার জমিদার কে দেবেন বলে মনস্থির করেন এবং হাতি দিয়ে ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশ করেন। কিন্তু হাতি যখনি ঘরটির কাছে আসে তখনই সালাম দিয়ে বসে যায়। খবর পেয়ে তিনআনি জমিদার এসে দেখেন ঘরের ভিতর একজন মহিলা সৃষ্টিকর্তার উপাসনায় মগ্ন। জমিদার ব্যপারটি বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে ফেরত যান। সেই ধর্মপ্রান মহিলা কে মাই সাহেবা বলে সম্বোধন করেন। তার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে যে মসজিদটি নির্মাণ করেন তার নাম দেন মাইসাহেবা জামে মসজিদ (Mai Saheba Mosque)।

মাইসাহেবা জামে মসজিদ
মাইসাহেবা জামে মসজিদে প্রবেশ পথ

এ মসজিদ টি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। তিন আনি বাজার/কলেজ মোড় থেকে জামালপুর বাস্ট্যান্ড রোডে প্রবেশ করতেই হাতের ডান পাশে অবস্থান করছে ঐতিহ্যবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদটি। বিশাল এই  মসজিদের সামনের অংশে অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শেরপুর শহরে প্রবেশের পর যে কারো দৃষ্টি কারবে এই মসজিদটি।

বলা হয় ময়মনসিংহ বিভাগের সবচেয়ে বেশি দান গ্রহণ কারি মসজিদ এটি। রাতদিন ২৪ ঘন্টা দান বক্সে দান আসে। এমনকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এখানে দান করে নিয়মিতভাবে। এক জন দিন মজুর থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী, ভিক্ষুক সহ সকলে পরম ভক্তির সাথে দান কারে থাকেন। বিশেষ করে ড্রাইভারগণ দিনের শুরু এবং শেষ ভাগে নিয়মিত দান করেন, দান না করতে পারলে নাকি তাদের অসম্পূর্ণতা রয়ে যায় সারাদিনের কর্মযজ্ঞে।

মসজিদ টি ৩ তালা বিশিষ্ট, নিচ তালা সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। তবে সমগ্র মসজিদ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করার কাজ চলছে। একসাথে প্রায় ৬০০০ মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে। ১০ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা ও মহিলাদের নামাজের স্থান সংস্কারের কাজ চলমান।(1) প্রতি শুক্রবার শহরের বাহির থেকে হাজার হাজার মুসল্লীগণ জামায়াতে নামাজ আদায় করাতে আসে এ মসজিদে এবং সকলে মিলে দেশবাসী ও গোটা মুসলিম জাতির জন্য দোয়া করে থাকেন।

Mai Saheba Mosque
জুমা নামাজের পূর্বের অবস্থা। ছবি: রূপসী বাংলা

মজিদের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে হুজরা খানা মুয়াজ্জিন কক্ষ, অজুর জন্য রয়েছে দুটি স্থান একটি মসজিদের দক্ষিণ পাশে অন্যটি উত্তর পাশে। এস্তেনজার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত প্রস্রাব ও পায়খানা জায়গা, এস্তেনজার প্রবেশ মুখে রয়েছে ফ্রিতে টিস্যুর ব্যবস্থা।

ইমাম, মুয়াজ্জিন এনং খাদেমঃ একজন জুম্ম ইমাম, একজন সানি ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন এবং তিনজন খাদেম নিয়োজিত আছেন মসজিদ টি’তে।

এ মসজিদ টির রয়েছে অসংখ্য বয়স্ক ছাত্র, তারা প্রতিদিন ফজর নামাজ আদায় করার পর ২ ঘন্টা করে কুরআন ও তাজভীদ শিখেন, বয়স্ক ছাত্রদের অধিকাংশ হলেন যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। তাদের একটা আকাঙ্খা কুরআনের ছাত্র থাকা অবস্থায় মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারা।

মসজিদ টি এরিয়া পাহারা দেওয়ার জন্য দু’জন করে লোক থাকে একজন মসজিদ কতৃপক্ষের অন্যজন পৌর কতৃপক্ষের। মসজিদের চারপাশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় যেন মুসল্লিদের মোটরসাইকেল সহ সকল মালামাল ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকে।

ঐতিহ্যেবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদ
ঐতিহ্যেবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদ। ছবি: রূপসী বাংলা

এ পোস্টের পাঠকদের কেউ শেরপুরে ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার মহাখালী বাস স্ট্যান্ড বা গুলিস্থান স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে বাস যোগে শেরপুর আসতে পারবে। ট্রেনে আসতে চাইলে কমলাপুর বা বিমান বন্দর স্টেশন থেকে প্রথমে জামালপুর তারপর শেরপুর আসতে হবে। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী থেকে শেরপুরের বাস চলাচল আছে নিয়মিত।

রাত্রী যাপন ও খাওয়া-দাওয়ার শেরপুর শহরকে বেচে নিতে হবে। যাতায়াত (বাস) ও হোটেল রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন। এছাড়াও যেকোন তথ্যে জন্য আমাদের চ্যাট বক্সে নক দিন।

তথ্যসূত্র

  1. ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী শেরপুরের ‘মাইসাহেবা’ মসজিদ। বাংলাদেশ প্রতিদিন – ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

Leave a Reply

Scroll to Top