শহীদ নাজমুল আহসান স্মারক গ্রন্থ:
জুলাই ৫, ২০২১: মূলত পারিবারিক উদ্যোগের ফসল ”শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসান স্মারক গ্রন্থ”। ১১ নং সেক্টরের অধীনে ১নং কোম্পানীর কমান্ডার নাজমুল ১৯৭১ সালে ৬ই জুলাই কাঁটাখালীর ব্রীজের নিকটস্থ সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। মেধাবী নাজমুল যুদ্ধে এক সাহসী যোদ্ধা। বীর শহীদ যে কোন জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। প্রাতস্মরণীয় তারা।
১৯৯৯ সালে পালক প্রকাশনীর প্রযত্নে খালেদা রায়হান রুবী (১৯৫২) ও ছড়াকার আলম তালুকদার (১৯৫৬) এর যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত।
চিঠি, স্মৃতিচারণ মূলক লেখা ছাড়াও কবিতা ও ছড়া লিখেছেন শামসুর রাহমান, সুকুমার বড়ুয়া ও আলম তালুকদার।
বাংলার মাটি রক্ষা করতে বাঁচাতে একটি ফুল
ত্রিশ লক্ষ শহীদের সাথে আরো এক নাজমুল।
(যোদ্ধা নাজমুল : সুকুমার বড়ুয়া)
স্মারক গ্রন্থে রয়েছে শহীদ নাজমুলের লিখিত নাটক ও ছোট গল্পের সমাহার । এই সার্বিক কার্যক্রম প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু নাজমুল ও তাঁর সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে কোন বিশ্লেষিত লেখা নেই–যা কোন স্মারক গ্রন্থের বৈশিষ্ট।
তাছাড়া নাজমুলের সাহিত্যকৃত্য নিয়ে একটি পর্যালোচনা পাঠ জরুরী ছিল। জরুরী ছিল একজন নাট্যকর্মী হিসেবে গত শতকে ষাটের শেষের দিকে নালিতাবাড়ি নাট্য আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার মূল্যায়ন করা। বহু কৌনিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে নিশ্চই নাজমুল আরও উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারত।
সম্পাদক দ্বয়ের এটি কোন ভাবনার সীমাবদ্ধতা নয় বরং একটি সাংগঠনিক কর্মতৎপরতার অভাবের ফল। উদ্যোগটি পারিবারিক না হয়ে সামষ্টিক হতে পারত। এগিয়ে আসতে পারতো নালিতাবাড়ির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট কিংবা নালিতাবাড়ি সুধি সমাজ। না, তারা কেউ এগিয়ে আসে নি। প্রকাশনা উৎসব কিংবা আলোচনা-পর্যলোচনার জন্য কোন সেমিনারের আয়োজনও করেন নি। যাতে তরুন সমাজ আলোকিত হতো। জানতে পারত ১৯৭১ সালের নাজমুলদের জীবন বাজি রাখার সাহসিকতা।
১৯৭১ আামাদের উৎসমুখ — বারবার সেখানে ফিরে যেতে হবে। একটি স্মারক গ্রন্থ সেই উৎসের দিকে আমাদের নিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কিংবা প্রেস ক্লাব অথবা নালিতাবাড়িতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সমাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিশ্চয় একদিন এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা তরুন প্রজন্মের।
ইতিহাসের মানবিক চিন্তাধারা বিকাশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী। ভোগ সর্বস্ব মার্কামারা রাজনীতির বুর্জোয়া বলয় ভেঙে ফেলা জরুরী। যার জন্য প্রয়োজন ইতিহাসের ছেঁড়াতাঁর সন্ধান ও সমাজ বিন্যাসের পরতে পরতে এর যে সংযোগ ও সংঘাত এবং সমন্বয়তার পরিসর তাকে খুঁজে বের করা কেননা “এটি কোন আত্মশ্লাঘার পরিচয় নয়; বরং আত্ম পরিচয় উন্মোচনের প্রয়াস মাত্র।” কথাটি লিখেছেন নাজমুল পারিবারের আরেক উজ্জ্বল মুখ অধ্যাপক মোস্তফা কামাল।
স্মারক গ্রন্থ ছাড়াও নাজমুলকে নিয়ে প্রথম কাজ করেন হালুয়াঘাটের বাসিন্দা জনাব এম সুরুজ মিঞা [১৯২৩–১৯৯৬]। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালেই সুরুজ মিয়া লিখলেন,” শহীদ নাজমুল” নাটক। তার পরিচালনায়ই এই নাটকটি ৪-৫ বার মঞ্চায়িত হয় থানা হালুয়াঘাটের বিভিন্ন পাড়ায়। এ ছাঠাও নাজমলুকে কেন্দ্র করে একটি চমৎকার ছড়া লেখেন এই সাহিত্যঅন্ত প্রাণ রাজনীতিবিদ এম সুরুজ মিঞা। এই সংবাদগুলো আমরা স্মরক গ্রন্থে পাইনি।
এছাড়া শহীদ নাজমুল নিয়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেন ছামাদ ফারুক। ” জল জোছনায় নাজমুল’ নামে জীবনী ভিত্তিক উপন্যাস রচনা করে।
নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসান। জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৪৯ গারো পাহাড়ের কোলে, ভোগাই নদীর তীরে নালিতাবাড়ির তারাগঞ্জে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ৫ জুলাই কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংসের পর পার্শ্ববর্তী খাটুয়া গ্রামে যখন তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন পাকিস্তান বাহিনীর আকষ্মিক আক্রমণে যুদ্ধরত অবস্থায় (৬ জুলাই ১৯৭১, মাত্র ২২ বছর বয়সে) শহীদ হন।
ন. ম. নাজমুল আহসানের জন্ম, তাঁর বেড়ে ওঠা, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বিপ্লবী নেতৃত্ব, জীবনের বিচিত্র দিক-দর্শন, ন্যায় ও সত্যের প্রতি অবিচল বিশ্বাস —এ সবই নিপুণসৃজনে উঠে এসেছে ‘জল জোছনায় নাজমুল’ গ্রন্থে।
গ্রন্থের নায়ক মুক্তিযুদ্ধের চিরঞ্জীব শহীদ ন.ম. নাজমুল আহসান স্বাধীনতা পদক ২০১৭ এর জন্য সরকার কর্তৃক মনোনীত হন।
তিন বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এ গ্রন্থটি স্বার্থক গবেষণামূলক সৃজনসৃষ্টি। ইতিহাস সচেতন কবি জনাব আবদুস সামাদ ফারুক তাঁর এই মননশীল রচনার স্বীকৃতি হিসাবে অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশনা উৎসব ২০১৯ সম্মাননা স্মারক লাভ করেন।
ন. ম. নাজমুল আহসানের উদ্দেশ্যে লিখেছেন কবি শামসুর রহমান, কবি শামসুল আলম মোহন সহ খ্যাতিমান লেখকেরা। সুকুমার বড়ুয়ার লিখেছেন ‘যোদ্ধা নাজমুল’ শিরোনামেঃ
বাংলার মাটি রক্ষা করতে
বাঁচাতে একটি ফুল—
তিরিশ লক্ষ শহীদের মাঝে
আরো এক নাজমুল।
দু’যুগ পেরিয়ে তিন যুগ হবে
স্বাধীন বাংলা হলো,
সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ তোমরা
ইতিহাস কথা বলো।
এত বড় দাম না দিলে তোমরা
হতো না বাংলাদেশ,
তোমাদের সেই দানের মহিমা
কখনো হবে না শেষ।
নবপ্রজন্ম সালাম জানিয়ে
মিনারে রাখবে ফুল,
তিরিশ লক্ষ শহীদের সাথে
তুমি এক নাজমুল।”
Table of Contents
সূত্র : ফেসবুক।