লজ্জার কথা। কিভাবে যে বলি! আত্ম সম্মান বলে কিছু একটা আমারও তো আছে। আবার তা যদি হয় গোপন কথা। যাক গে, যা হবার হবে! লোকে যা মনে চায় ভাবুক! যেহেতু জীবনের সাথে সম্পর্কিত তাহলে বলেই ফেলি। আবার বেশি নাটক করলে পাঠক আমাকে গাল মন্দ করে গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে।
বয়স ধীরে ধীরে শুধু বাড়তেই আছে। একজন হয়ে বিধবা থাকা আর কত। বুঝতেই পারছো! প্রেম-ভালবাসার কথা বলতেই আমার এত শত দ্বিধা।
আমিও একজনের প্রেমের মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আছি। প্রেমে পড়লে যে কত ধরনের বড় লোকি কথা বলতে হয়, সে তো সবারই জানা। আমিও মাঝে মাঝে অপর পক্ষ্যকে বলতাম। তবে সত্যটাকেই একটু ঘুরিয়ে বলতাম। অন্য সবার মত এত বেশি বেশি বলতাম না। একটা সামাঞ্জস্য রেখেই বলতাম।
তবে এখন আমি কঠোর পরিশ্রম করতেছি। বলতে পারো সংগ্রাম। যেভাবেই হোক প্রেমে মিথ্যা কথা যেন বলতে না হয়। এটা আসলেই অসম্ভব। তাতে অনায়াসেই প্রেম ভেঙে যেতে পারে। তবে চেষ্টা করলে সবি সম্ভব। যদি অপর পক্ষ সত্যিকার অর্থে তোমাকে ভালবেসে থাকে। আর আমি বিশ্বাস করি, দুজন দুজনকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসলেও মিথ্যা আর বিবাহ বহির্ভূত অশ্লীলতার কারণে আজকের কোন প্রেম গুলোই শেষ পর্যন্ত পরিনতি পাচ্ছে না!
অন্যদিকে যতই বাহাদুরি থাকুক না তোমার, চাকরি ছাড়া শশুড় বাড়ির কাছে মূল্যহীন। কি যে কষ্ট, একজন শিক্ষিত ছেলের বিয়ে করা, যদি তার চাকরি না থাকে। সে কথা আর নতুন করে তোমাকে বলার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে মেইন রাস্তা থেকে ছোট গলির রাস্তা বেয়ে পেছন দিক দিয়ে কলেজের সিমানায় ঢুকলাম। কলেজে বরাবরের মতই অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণা। ইন্টারমেডিয়েট থেকে অনার্স-মাস্টার্স পর্যন্ত চালু আছে আমাদের শেরপুর সরকারি (বিশ্ববিদ্যালয়) কলেজে। কেউ যুগলে আবার কেউ একা একা হাটতেছে। আবার এখানে সেখানে এক সাথে গোল করে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রুপ স্টাডি করতেছে। অনার্স প্রথম বর্ষে আমি মাত্র দশ কি বারো দিন ক্লাস করেছিলাম। আর মাস দুই প্রাইভেট পড়েছি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষে একদিন ক্লাস করেছি। ঘটনাক্রমে আমি যখন ক্লাসে উপস্থিত তখনি ছুটি। এটাকে একদিন ধরে নিয়ে বন্ধুদের সাথে বলে বেড়াই। কি গর্বের কাজটাই না করেছি। গর্ব হয় নিজের এই বিরল কৃতিত্ব নিয়ে। কিন্তু আমি চাইনা, আমার পরে আর কেউ এই রেকর্ডের ভাগিদার হোক!
রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের পর নিজেকেই খুঁজে পাই এই সারিতে। তবে তাঁদের মত যে হতে পারবো না সে বিশ্বাস আমার আছে।
দুঃখের বিষয় কি জানো? আমার “সেই মানুষটা” সব সময় আমাকে একটু আরটু সন্দেহ করে! “ইংরেজিতে পড়ো। কলেজের পাশেই তোমার মেস। নিয়মিত কলেজে যাও। প্রাইভেট পড়ো। সব সময় মেয়েদের সাথে আড্ডা দেও। না জানি কত মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছো কে জানে! ছেলেদের কখনো বিশ্বাস করতে নেই, সে কথা আমার ভালোই জানা আছে। সে ছেলে দেখতে যতই ভদ্র হোক।”
এই যে বলি, “তোমার সব অনুমান মিথ্যা। কসম করে বললাম, আমার কোন বিশেষ বান্ধবী নাই। মোবাইলেও আমি তুমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলি না।” শুনলে তো আমার কথা! মনে হয়, এর থেকে আমি সারা বাংলাদেশের মানুষকেও সহজে বুঝিয়ে ফেলতে পারতাম!
এই যে দেখো, আমি এখন কলেজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কত সুন্দরী মেয়ে সামনে দিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে। আমি কিন্তু কারো দিকে তাকাচ্ছি না। কত ভদ্র ছেলের মত শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে পথ চলছি। কয়জন ছেলেই বা আমার মত এরকম হয়। তুমিই বলতো?
এখন যদি তাকে আমার অবস্থাটা দেখাতে পারতাম! যে দেখো, তোমার মানুষটা কত ভালো। তাহলে সে বুঝতো সে কতটা বিভ্রান্তের মধ্যে পড়ে আমার মত একটা অত্যন্ত ভালো ছেলেকে অপবাদ দিচ্ছে।
যাই ঘটুক। আমিও এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নই। ধৈর্য, একাগ্রতা, অধ্যাবস্যায় আর বিশ্বাসই হলো আমার সঙ্গী। সত্য পথেই আছি, সত্য পথেই থাকবো। সেদিন আর বেশি দেরি নাই। যেদিন সে তার সমস্ত ভুল বুঝতে পারবে আর আমাকে বিশ্বাসের প্রশংসায় ভরিয়ে দিবে।
লেখকঃ সাগর আহমেদ
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব