শেরপুর পৌরসভা | Sherpur Pourashava
শেরপুর শহরের বটতলা এলাকার একটি টিনের ঘরে ১২ জন সদস্য নিয়ে শেরপুর পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬৯ সালের ১৬ জুন। পরবর্তীতে টিনের ঘর থেকে কারুকার্য করা দৃষ্টিনন্দন লাল রঙের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এর নামকরণ করা হয় ’চারুভবন’। প্রতিষ্ঠাকালে শেরপুর পৌরসভা ৪টি ওয়ার্ডে বিভক্ত থাকলেও বর্তমানে ৫টি ওয়ার্ড। দেশের প্রাচীন পৌরসভাগুলোর একটি শেরপুর পৌরসভা। এর প্রথম প্রশাসক ছিলেন টি এ ডনো। তার মেয়াদকাল ছিল ১৯৬৯-৭৪ সাল। বর্তমানের শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া (লিটন)।
১৯৩৭ সালে পৌরসভা গঠন প্রণালী পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হলে শেরপুর পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ড থেকে ৫টি ওয়ার্ডে উন্নতি করা হয়। বর্তমানে এই ৫টি ওয়ার্ডে ৩০ টি মহল্লা আছে। এর আয়তন ২৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা লক্ষাধিক।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সভাপতির আসন জমিদার বংশীয় কোন না কোন সদস্যের একচেটিয়া অধিকার ছিল। তাই ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোন মুসলমান শেরপুর পৌরসভার সভাপতি (চেয়ারম্যান/প্রশাসক) নিযুক্ত হতে পারেনি। প্রথম মুসলমান পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন মোঃ ইয়াছিন।
১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের বিধান অনুসারে পৌর নির্বাচনে সরাসরি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় পৌরবাসী। তদের ভোটে প্রবীণ জননেতা খন্দকার মজিবর রহমান চেয়ারম্যান এবং ছাত্রনেতা আমজাদ হোসেন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে শেরপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নত হয়।
বর্তমানে পৌরসভা প্রশাসন ১ জন মেয়র, ৩ জন প্যানেল মেয়র, ০৭ জন কাউন্সিলর ও ২ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর দ্বারা পরিচালিত হয়।
চারুভবন | পৌরসভা জাদুঘর
টিনের ঘর থেকে নিজস্ব দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবন নির্মাণে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের অর্ধেক অর্থাৎ ৫ হাজার টাকা দেয় সরকার এবং তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান শ্রী হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী তার পিতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান রায়বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরীর স্মরণে বাকী ৫ হাজার টাকা অনুদায় দেন। শর্ত ছিল ভবনের নামকরণ করা হবে তাঁর বাবার নামে। তাই নির্মান শেষে ভবনের নাম দেওয়া হয় ’চারুভবন’। সম্প্রতি আরও বড় পরিসরে শেরপুর পৌরসভা নতুন ভবন নির্মাণ করে পৌরসভার কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয় এবং চারুভবনকে পৌরসভার জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
দৈনিক প্রথম আলোকে মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, “চারু ভবনের চারটি কক্ষকে পৃথক গ্যালারি করে সেগুলোকে পৌরসভার ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন, শেরপুরসংক্রান্ত প্রকাশনা, শেরপুর অঞ্চলের সাধারণ তথ্যাবলি ও নিদর্শন দিয়ে সাজানো হবে। জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”
সেরপুর টাউন
প্রবীণ কবি ও সাংবাদিক তালাত মাহমুদ বলেছেন, “আগে এই শহরকে বলা হতো শেরপুর টাউন”। তিনি আরও বলেছেন, ”আফ্রিকার কেপ-টাউন, আমেরিকার জজ-টাউন ও পূর্ব পাকিস্তানের সেরপুর টাউন পরিচিত ছিল।” লেখক জ্যোতি পোদ্দার তার বিভিন্ন নিবন্ধনে ‘টাউন শেরপুর’ ব্যবহার করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পৌরসভায় বর্তমানে ২টি সরকারি কলেজ, ২টি বেসরকারি কলেজ, ২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ৭টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়াও ১টি কৃষি ইনস্টিটিউট, ১টি সরকারি গণগ্রন্থাগার আছে।
পৌর ক্লাব
শেরপুর পৌরসভার অধীনের ২টি ক্লাব রয়েছে। একটি ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর ”শেরপুর পৌর কিশোরী ক্লাব” নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অন্যটি ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর “শেরপুর পৌর লেডিস ক্লাব” নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।
শেরপুর পৌরসভার সভাপতির তালিকা
নাম | পদবী | মেয়াদ | |
১ | মি. টি এ ডোনো | প্রশাসক | ১৮৬৯-৭৪ |
২ | শ্রী এন কে বসু | চেয়ারম্যান | ১৮৭৫-৮০ |
৩ | মোহাম্মদ আলী | চেয়ারম্যান | ১৮৮১-৮৬ |
৪ | শ্রী হরচন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৮৮৬-৮৮ |
৫ | রায় বাহাদুর আর বি চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৮৮৮-৯০ |
৬ | শ্রী কৈলাস চন্দ্র নাথ | চেয়ারম্যান | ১৮৯১-৯৩ |
৭ | রায় বাহাদুর আর বি চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৮৯৪-১৯০২ |
৮ | রায় বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯০৩-০৫ |
৯ | রায় বাহাদুর হেমাঙ্গ চন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯০৬-০৮ |
১০ | রায় বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯০৯-১৪ |
১১ | রায় বাহাদুর হেমাঙ্গ চন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯১৫-১৭ |
১২ | রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯১৮-২০ |
১৩ | শ্রী সতীন্দ্র কুমার চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯২১-২৩ |
১৪ | শ্রী মোহিনী মোহন রায় | চেয়ারম্যান | ১৯২৪-২৬ |
১৫ | শ্রী হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯২৭-৩১ |
১৬ | শ্রী সুরেশ চন্দ্র নাগ | চেয়ারম্যান | ১৯৩১-৩৩ |
১৭ | রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯৩৩-৩৮ |
১৮ | শ্রী শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী | চেয়ারম্যান | ১৯৩৮-৪৫ |
১৯ | মোঃ ইয়াছিন | চেয়ারম্যান | ১৯৪৫-৫০ |
২০ | মোঃ আফতাব উদ্দিন আহমেদ | চেয়ারম্যান | ১৯৫০-৫২ |
২১ | রহমত উল্লাহ মিয়া | চেয়ারম্যান | ১৯৫২-৫৮ |
২২ | মীর ফয়জুর রহমান | চেয়ারম্যান | ১৯৫৮-৬০ |
২৩ | আঃ হালিম চৌধুরী | প্রশাসক | ০২.০৬.১৯৬০-৩১.১২.৬০ |
২৪ | শ্রী জে এল দাস | প্রশাসক | ০১.০১.১৯৬০-০১.১০.৬২ |
২৫ | আঃ মজিদ | প্রশাসক | ০২.১০.১৯৬২-১২.০৮.৬৪ |
২৬ | মোহাম্মদ আলী | প্রশাসক | ১৩.০৮.১৯৬৪-১৮.১২.৬৬ |
২৭ | মনোয়ারুল ইসলাম | প্রশাসক | ১৯.১২.১৯৬৬-১৮.০১.৬৯ |
২৮ | আবু জাফর মোঃ হোসাইন খান | প্রশাসক | ১৯.০১.১৯৬৯-০৮.০১.৭১ |
২৯ | আঃ শহীদ চৌধুরী | প্রশাসক | ১৬.০৭.১৯৭১-২৩.০৩.৭২ |
৩০ | সাফায়াত আলী | প্রশাসক | ২৩.০৩.১৯৭২-২৭.০৪.৭৩ |
৩১ | আঃ রশিদ | প্রশাসক | |
৩২ | শাহ মোঃ নাজমুল আলম | প্রশাসক | ১৭.০৮.১৯৭৩-১২.০৩.৭৪ |
৩৩ | খন্দকার মজিবর রহমান | চেয়ারম্যান | ১২.০৩.১৯৭৪-২৩.০৯.৭৭ |
৩৪ | মোঃ আব্দুছ সামাদ | চেয়ারম্যান | ২৯.০৯.১৯৭৭-০৪.১০.৮২ |
৩৫ | শাহ আলম | প্রশাসক | ০৪.১০.১৯৮২-১৮.১২.৮২ |
৩৬ | বজলুর রহমান ভূইঁয়া | প্রশাসক | ১৯.১২.১৯৮২-০৯.০৪.১৯.৮৩ |
৩৭ | আঃ রশিদ | প্রশাসক | ১০.০৪.১৯৮৩-২৫.০৩.৮৪ |
৩৮ | মোঃ লুৎফর রহমান মোহন | চেয়ারম্যান | ২৫.০৩.১৯৮৪-৩০.০৯.৮৮ |
৩৯ | সৈয়দ নজরুর ইসলাম | প্রশাসক | ০১.১০.১৯৮৮-১৯.০২.৮৯ |
৪০ | মোঃ লুৎফর রহমান মোহন | চেয়ারম্যান | ২০.০২.১৯৮৯-৩১.১২.৯২ |
৪১ | হাছানুজ্জামান চৌধুরী | প্রশাসক | ০১.০১.১৯৯২-১৯.১০.৯২ |
৪২ | আফতাব উদ্দিন আহমেদ | প্রশাসক | ১৯.১০.১৯৯২-২০.০৩.৯৩ |
৪৩ | আব্দুর রাজ্জাক আশীষ | চেয়ারম্যান | ২০.০৩.১৯৯৩-১৫.০৩.৯৯ |
৪৪ | এডঃ আব্দুছ ছামাদ | চেয়ারম্যান | ১৫.০৩.১৯৯৯- |
৪৫ | মোঃ মতিউর রহমান | ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান | ১৮.০৯.২০০০-২৩.১০.০১ |
৪৬ | আব্দুল মান্নান | ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান | ০৪.১১.২০০১-৩০.০৫.০৪ |
৪৭ | গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | ৩১.০৫.২০০৪-১৩.০৫.০৮ | |
৪৮ | গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | মেয়র | ১৪.০৫.২০০৮-১৩.০২.১১ |
৪৯ | মোঃ হুমায়ুন কবীর (রুমান) | মেয়র | ১৪.০২.২০১১-১৭.০২.১৬ |
৫০ | আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | মেয়র | ১৮.০২.২০১৬ |
শেরপুর পৌরসভার বাজেট
অর্থ বছর | ঘোষণাকারী | টাকার পরিমাণ |
২০২০-২০২১ | গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ(১) |
২০২১-২০২২ | গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | ৭৭ কোটি ৩০ হাজার (১)(২) |
২০২২-২০২৩ | গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া | ৮১ কোটি ১৭ লক্ষ (১)(২) |
২০২৩-২০২৪ | হাছান মাহমুদ শেলীম আলম | ১২১ কোটি ৬১লক্ষ(১)(২) |
রেফারেন্স
- কবি হিরন্ময়ী চৌধুরীর কথা – জ্যোতি পোদ্দার
- শেরপুর পৌরসভা।
- শেরপুরের ঐতিহ্য চারু ভবন, প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭