Our Sherpur

বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে দেখেছি।

ক‍্যাপ্টন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম

 

আজ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্ম দিন। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের পর থেকেই তাঁকে দেখার খুব সাধ ছিল। অসাধাররণ বক্তৃতা সরাসরি শোনার ইচ্ছেটাও প্রবল ছিল। ৬৯ সালের মার্চ মাসে ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করলে সব সভা সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৭০ সলে সাধারণ নির্বাচনের সময় তিনি সারাদেশ চষে বেড়ান তখন বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আসে। ঐ সময় শেরপুর ছিল থানা শহর, গ্রামের মত। বঙ্গবন্ধু কি শেরপুরে আসবেন? আনিস মোক্তারর সাহেব ও নিজাম সাহেব নমিনেশন পেয়েছেন। বারবার তাদের জিজ্ঞেসা করছি বঙ্গবন্ধু কি শেরপুর আসবেন? তারা চেষ্টা করছেন বলে জানান।

হঠাৎ খবর আসে বঙ্গবন্ধু শেরপুর আসবেন। তারিখটা মনে নাই,তবে নভেম্বরের কোন একদিন। চারদিকে আনন্দের বন্যা। প্রচার করার জন্য লোক ভাগ করে দেয়া হয়। আমদের বলাইর চর ইউনিয়নে প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমরা পড়াশোনা বন্ধ রেখে টিনের চোঙ নিয়ে পায়ে হেঁটে প্রচার করতে থাকি। দারোগ আলী পার্কে জনসভা হবে। স্মরণ কালের সবচেয়ে বেশি লোক আসবে। আনন্দ আর ধরেনা।
তারিখ সমাগত। এর মাঝে ঘটলো এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বরিশাল, ভোলা,হাতিয়ায় স্মরণ কলের ভয়াবহতা ঘূর্ণিঝর। প্রায় ১২ লক্ষ লোক মারা গেল। জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধ সকল সভা স্থগিত করে দলবল নিয়ে চলে গেলেন দুর্যোগপূর্ণ এলাকায়। বঙ্গবন্ধুকে আর দেখা হলোনা।

এরপর নির্বাচন, সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে। আমরা আশা ছেড়ে দিলাম।আর বঙ্গবন্ধুর দেখা পাব না। তারপর অনেক ঘটনা। দেশ স্বাধীন হলো, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে ফিরে এলেন।আবার দেখার সুযোগ সৃষ্টি হলো। ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাস বঙ্গবন্ধু জামালপুর আসবেন। এবার অবশ্যই দেখা যাবে। আমরা কয়েকজন বন্ধু সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর পীরের বাড়ি গেছি। সেখান থেকে জামালপুর এসে বঙ্গবন্ধুকে দেখবো। সেখান থেকে এসে একেবারে পিছনে পড়লাম। জামালপুর স্টেডিয়ামের শেষ দিকে একটা টিনের ঘরের চালে উঠলাম অনেকের সাথে। বঙ্গবন্ধু আসলেন আর তখনই টিনের চাল ভেঙে হুরমুর করে নিচে পড়ে আহত হলাম। বেচে গেলেও বঙ্গবন্ধুকে আর দেখা হলো না।কষ্ট রয়েই গেল।

এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু অসুস্থ হয়ে লন্ডন চলে গেলেন। সুস্থ হয়ে কিছুদিন বিশ্রাম। সভা সমাবেশ বন্ধ। ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু ময়মনসিংহে আসবেন। সার্কিট হাউজ ময়দানে ভাষণ দিবেন। এবার সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। তখনকার দিনে ট্রেন ছাড়া যাবার কোন পথ ছিল না। রাত দুইটায় ট্রেন। সন্ধ্যার পর জামালপুর ঘাট পার হওয়া যায় না। তাই আগের দিন বিকালে কয়েকজন বন্ধু জামালপুর স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে রাত তিনটার দিক ময়মনসিংহে পৌঁছালাম। সারারাত স্টেশনে অপেক্ষা করে পরদিন সকালে সার্কিট হাউজে একেবারে সামনে গিয়ে বসলাম। বিকাল চারটায় ভাষণ দিবেন প্রিয় নেতা। তপ্ত রোদে বসে আছি সারাদিন। কখন বঙ্গবন্ধু আসবেন।

সভা শুরু হলো। রফিক উদ্দিন ভূইয়া সভার সভাপতি। এরপর তিনি আসলেন। ডান চেয়ারে বঙ্গবন্ধু, বামে সৈয়দ নজরুল, মাঝে সভাপতি।
লোকে লোকারণ্য। তীল ধারণের জায়গা নেই। পিছনের লোক হুরাহুরি করছে। সবাই চেষ্টা করছে থামাতে। জনতা কারো কথা শুনছেনা। অবশেষে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে সবাইকে চুপ করতে বললে সবাই নিশ্চুপ।
আমারা সবার সামনে। নয়ন ভরে বঙ্গবন্ধুকে দেখলাম,ভাষণ শুনলাম।মনের আশা পূর্ণ হলো। রাতে আবার ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ি ফেরা।
তারপর ১৯৭৫ সাল। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলো।আবার ফিরে এলো পাকিস্তানি ধারা। “বঙ্গবন্ধু আজ তোমার জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও সালাম।” আমরা তোমার সৈনিকেরা আছি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!!

লেখকঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম। 

Leave a Reply

Scroll to Top