গারো পাহাড়ের হাতি : নিজগৃহে পরবাসী
”আমার হাতিপ্রীতি বিটিভির বরাতে। টারজান দেখে দেখে। লেঙ্গট পরা টারজান দু’হাতের পাঞ্জা গোল করে মুখে আ আ আ আ ধ্বনি বনের ভেতরে ছড়িয়ে দিচ্ছে আর দূর বনের গভীর থেকে হাতি শুঁড় উঁচিয়ে শরীর নেড়ে ইয়া বড় কান নাড়াতে নাড়াতে দৌড়ে আসছে দেখে তখন শুধু টারজান নয় — নীচে চটে বসা আমাদের মতো খুদে দর্শকেরা টান টান উত্তেজনায় শিহরিত হয়ে উঠতাম।
Table of Contents
মফস্বলের বাচ্চাদের আনন্দের উৎস ছিল এই টারজান। বিদ্যুৎবিভ্রাটে মন ভেঙে যেতো। আবার কখনো ঠিকঠাক সিগন্যাল না পেলে বারান্দায় বাঁশের খুঁটির মাথায় বাঁধা এন্টেনা এপাশ ওপাশ মুচড়িয়েও ধরতে না পারলে বিকেলটাই মাটি। রঙ-বেরঙের ছিট কাপড় নিয়ে টিভি বোবা।
অষ্টমী মেলায় চিনির হাতি ঘোড়া যাই কিনি না কেন — ছাই রঙে কাজ করা বাঁকানো দাঁতের হাতি ছাড়া আমার চোখের জল বন্ধ হতো না। সেই কবে একটা বড়সড় হাতি কিনেছিলাম এখনো আছে বসবার ঘরে আলমারির তাকের উপর। শুঁড় উঁচিয়ে আমার সৌখিন হাতি চুপচাপ হাঁ মুখ করে বসে আছে।
কিন্তু হাতি তো ঘর বেঁধে এক জায়গায় থাকার প্রাণী না। সে চলতে চলতে খাবার খায়। বিশাল দেহের বিশাল খাবার। তাই গরু ছাগল মহিষ পালার মতো করে সাধারণ গেরস্থ মানুষেরা হাতি পালে না। লালন পালন করত রাজা বাদশারা — আভিজাত্য আর যুদ্ধের জন্য — প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় আর ত্রাসের প্রতাপ ছড়িয়ে দেবার জন্য।
যাই হোক — হাতি সব খাবার যে একবারে খায় তা নয়। চলতে চলতে খায়। অবসর নেয়। আবার খায়। খেতে খেতে খাবার সরবরাহ কমে গেলে এই যূথবদ্ধ প্রাণী চলে খাদ্যের সন্ধানে। আর তখনই গোল বাঁধে আমার উত্তর জনপদের প্রান্তিক এলাকা ঝিনাইগাতির সীমান্তবর্তী তাওয়া কুচা, হলদি গ্রাম, গাজনি, রাংটিয়া, কাংশায়ের গুরুচরণ, দুধনই; নালিতাবাড়ির সমশচূড়া, বুরুঙ্গা কালাপানি, হাতিপাগলা ও শ্রীবর্দির হাড়িয়াকোনা, দিঘলাকোনা, বালিজুড়ি, চান্দাপাড়া আর বকশীগঞ্জের কামালপুর ইউনিয়নের সাতানি পাড়ার গ্রামগুলোতে — এমনকি দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হাতি সময়ে সময়ে গোল বাঁধিয়ে বসে।
শুধু কি এলাকায়? দেশব্যাপী মানুষ ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বরাতে শোনে আর ভেতরের পাতায় তিন কলামের নিউজে বিস্ফারিত চোখ পড়ে “খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির দল লোকালয়ে : মশাল জ্বালিয়ে পাহারা’’ অথবা ‘‘রাসায়নিক সার খেয়ে হাতির মৃত্যু বা হাতির পায়ে আদীবাসী যুবক পিষ্ট” কিংবা “শেরপুর সীমান্তে চলছে হাতি নিধন, নির্বিকার প্রশাসন” — বছরে গোটা দুইবার এমন খবরাখবরে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। একবার বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে কাঁঠাল পাকার মৌসুমে অন্যবার কার্তিক অগ্রহায়ণে আমন ধান পেকে ওঠার সময়।
বছর বিশেক ধরে খাবারের সন্ধ্যানে এই এশিয়ান বংশোদ্ভুত গারো পাহাড়ের হাতির একটি দল লোকালয়ে ঢুকে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে প্রতিবছর। সংখ্যা নেহাত কম নয়। বন বিভাগ সূত্রে৫০/৬০টি। যারা সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে সবাই ফিরে যায়নি বা যেতে পারেনি — যায়ও না। সময়ে হাতির প্রজনন বেড়েছে।
বিট কর্মকর্তাদের বরাতে রিপোর্ট হয় “এক সপ্তাহ ধরে বন্য হাতির দল গারো পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। হাতিগুলো মানুষের বসত বাড়িতে হামলা না করলেও উঠতি আমন ধানের খেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি করছে।”
কাজে কাজে মশাল জ্বালিয়ে পাহারা। রাতের আঁধারে হাতি ঝোপঝাড়ের ভেতর থেকে ঘন অন্ধকারের এলেই তিনদিকে ছুটে শতশত মানুষ। হাতে মশাল। আগুনের গনগনে লাল শিখা পতপত করে বাতাসে। চারদিকে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থা। সামনে যুদ্ধ ক্ষেত্র। লড়াই চলছে। হাতি বনাম মানুষ। এই বনের অধিকার কার দখলে থাকবে? কোন পক্ষই বিনা যুদ্ধে নাহি দিবে সূচ্যগ্রমেদিনী — এমন ভাব ভাবনা নিয়ে যুদ্ধরত।
এমনই এক যুদ্ধ দামামা আমি দেখেছিলাম কামালপুর ইউনিয়নের সাতানি পাড়া গ্রামে। বিকেল থেকেই সাজ সাজ রব। আগের রাতে বেবাক ফসল নষ্ট করে দিয়েছে শত্রু পক্ষ। আজ তার দাঁতভাঙা জবাব দেবার জন্য সবাই প্রস্তুত। দুই হাজার সাত সালে সাতানি পাড়ার যে বাড়িতে আমরা অতিথি হিসেবে ছিলাম তারা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুব মুশকিলে পড়ে গেলেন। একদিকে অতিথি সৎকার, অন্যদিকে শত্রুর মোকাবেলা। এই দুই নিয়ে মেজবান বেশ অস্থির। নিজেরাও শঙ্কিত। সে রাত আর থাকা হয়নি। ফিরে আসি বকশীগঞ্জে।
শুধু কী মশাল জ্বালিয়ে পাহারা? আরো আছে সোলার ফেঞ্চি। রাতে তার থাকে বিদ্যুায়িত। বেড়া ডিঙাতে চাইলেই বৈদ্যুতিক স্পর্শে হাতি সরে যায়। কখনো তারে জড়িয়ে মরে চিৎপটাং হয়ে থাকে বিশাল দেহ। মশাল তো এমনি এমনি জ্বলে না। তেল লাগে। পাট লাগে। সংবাদে প্রকাশ এবার “হাতির দলকে তাড়ানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেল ডিজেল বিতরণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” এনজিও আছে। কয়েক বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন হাতি তাড়াবার জন্য কৃষকের হাতে তুলে দিয়েছে টর্চ, হ্যাজাক আর শত শত মশালের লাঠি।
স্থানীয় প্রশাসন কিংবা বিট কর্মকর্তা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এই মশাল দিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে হাতি কে কোথায় পাঠাতে চান? সত্যি সত্যি কি হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে, নাকি হাতির বিচরণক্ষেত্র দখল হয়ে যাবার কারণে বিপন্ন হাতি অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে? হাতির প্রধান খাবার তো আর শুধু আমন ধান নয়।
অথচ কী অবাক কাণ্ড কীভাবে যেন কোন দায়িত্বশীল উৎস ছাড়াই একটা ভুল সংবাদ রটে গেছে শুধু বাতাসে নয়। কাগজের পাতাতেও। “এই হাতি আমাগো না। আগে এই পাহাড়ে হাতি আছিল না। এই গুলান ইণ্ডিয়া থাইক্কা আইছে। ইন্ডিয়া নাকি খেদাইয়া দিছে।” পত্রিকায় যখন কোন খবর প্রকাশিত ঠিক এমন ভাষ্যই থাকে। “…ভারত থেকে ওই বন্য হাতির দল খাবারের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে।” “শেরপুর সীমান্তে হাতি ঠেকাতে ব্যর্থ বৈদ্যুতিক বেড়া প্রকল্প।”
অথচ এই হাতি গারো পাহাড়ের হাতি। হাতির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হবার ফলে হাতি দলবল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে খাবারে সন্ধানে। বিস্তীর্ণ পাহাড় ও তার ঢালু জমিনে একদিন যেমন ছিল সারি সারি কলার বাগান, নানা জাতের লতা গুল্ম ও বাঁশের ঝোপে বেড়ে ওঠা কচি বাঁশ, গাছের পাতা, গাছের ছাল, ফুল ও ফল — যা হাতির নিজস্ব মেন্যুকার্ড। একাশিয়া মোড়া গারো পাহাড়ে হাতি একাশিয়া থেকে কিছুই পায় না।
লিজ নিয়ে নানা খামার ও বসত বাড়ি নির্মিত হবার কারণে হাতির হোমরেঞ্জ সংকুচিত। কাজে কাজেই তাকে খাবারের সন্ধানে বের হতে হয়। এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। সেখানে খাদ্য অপ্রাপ্যতার কারণে তাকে আরো দূরে সরে যেতে হয় — কিন্তু যত দূরেই যাক-না-কেন সে তার পূর্ববর্তী খাদ্য যোগানের স্থানের কথা ভোলে না।
যে পথ দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে সেই পথ দিয়ে সেই স্থানে — বার বছর লাগেও — সেই একই পথে ফিরে আসে। ফিরে আসতে হয়। আর আসার সময় যদি সে প্রতিবন্ধকতা দেখে তা সে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই পথ- প্রতিবন্ধক যদি মানুষ হয় তবে মানুষকে; আবাদি জমিন হয় আবাদি জমিনকে আর যদি পথমধ্যে মনুষ্য বাড়িঘর থাকে তবে সেই বাড়ি ঘরকে সে গুঁড়িয়ে দেয়। শুঁড় দিয়ে আছাড় মারে। পায়ের তলায় পিষিয়ে মারে।
সাতানি পাড়ার ফসল রক্ষার জন্য হাতি বনাম মানুষ লড়াইয়ে হাতির পালের আক্রমণে বালিঝুরি পলাশ তলা গ্রামের আব্দুল মান্নান (৪৮) নিহত হন। স্থানীয় প্রশাসন নিহতের পরিবারে নগদ টাকা ও চাল সহায়তা দেয়। কিন্তু বন্য হাতি হত্যা করলে? কখনো বৈদ্যুতিক শক দিয়ে কিংবা কীটনাশক খায়িয়ে হাতি হত্যা হচ্ছেই। রয়েছে নানা কায়দায় ‘বৈদ্যুতিক ফাঁদ’। আরো রয়েছে জেনারেটর দিয়ে মৃত্যুফাঁদ সৃষ্টি করে হাতি নিধনের পেছনে রয়েছে চোরারকারবারীদের হাতির দাঁত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসায় — অথচ খবরে ‘‘সোলার ফেঞ্চিতে জড়িয়ে” হাতির মৃত্যুর সংবাদটুকুই প্রকাশিত হয়।
হাতি মৃত্যু বা নিহত হলে সুরতহাল রিপোর্ট হলেও কারো জেল জরিমানা হয়েছে এমন তথ্য জানা নেই। যদিও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপদ আইনে জেল জরিমানার ধারা উপধারা রয়েছে।
গত বিশ বছরে হাতি মানুষের লড়াই চলছে। হাতির আক্রমণে পাহাড়ি ও বাঙালি উভয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। গত বিশ বছরে সত্তরের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু আব্দুল মান্নান নয়, ২০০৭ সালে হাতির দল তাড়াতে গিয়ে তারা মিয়া নামে এক যুবক হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু বরণ করে। হাতির পায়ের নীচে পড়ে তারা মিয়ার মাথা খুলি ছিন্নবিছিন্ন হয়ে গেছিল।
২০১৭ সালে নভেম্বরে গারো পাহাড়ে নয় জন মানুষের হাতির আক্রমণে মৃত্যুতে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে সংক্ষুদ্ধ করে তোলে। শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতি-নালিতাবাড়ির পাহাড়ের পাদদেশে মানববন্ধনসহ “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই বন্য হাতির ফাঁসি চাই” শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল এই জনপদ। নড়ে বসেছেন বন কর্মকর্তারা।
হাতি তাড়ানোর যে তাণ্ডব তা ভয়ংকর। হাতি মানুষের এই লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে কখনো মানুষের কখনো হাতির। দলছুট হাতি জনতার রোষে পড়ে, পিটিয়ে মারে ক্ষুব্ধজনতা। কখনো মৃত্যু সংবাদ পাই হাতি রাসায়নিক সার খেয়ে মারা গেছে। সার হাতির খাদ্য নয় — নানা উপায়ে হাতি দমন, তাড়ানো বা হত্যার অপকৌশল মাত্র।
এই তৃণভোজী প্রাণী দিন রাত খাবারের সন্ধানে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। একটা সময় পুরো গারো পাহাড় জুড়ে ছিল তার বিচরণক্ষেত্র। অল্প জায়গা তার পোষায় না। তার দরকার বন। যেখানে সে পাবে পর্যাপ্ত খাবার — গাছের পাতা, কচিবাঁশ, কলাগাছ, নারিকেল গাছের চিরল সবুজ পাতা ইত্যাদি। আরো দরকার পানীয় জলের উৎস।
একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি প্রায় ১৫০ কেজি খাবার খায়, তেমনি হাতি ৮০ থেকে ১২০ লিটার জল তার প্রয়োজন। সে তো আর সব সময় খায় না। সেও অবসর নেয়। চার হাত-পা ছড়িয়ে কাৎ হয়ে বিশ্রাম নেয় জল মাটি গায়ে মাখতে মাখতে।
পরিতাপের বিষয় এই খাবার, পানীয় জলের উৎস ও বিশ্রামস্থল শুধু অপ্রতুল নয় — মানুষের দখল প্রবণতার কারণে দিন দিন ক্রমহ্রাসমান। হুমকির মুখে হাতির জীবন। যে সমগ্র গারো পাহাড় ছিল হাতিদের সেটি ক্রমেই মানুষের বসতভূমির বিস্তার, লিজের মাধ্যমে নানা কিসিমের খামার তৈরি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নতুন নতুন সেটেলারদের অবস্থান — একদিন যেখানে ছিল বাঁশ ঝোপের ঘন কালো ঝাড়, কলার বাগান এখান সেখানে খালি ফসলি জমির বিস্তার, বিদেশি গাছের উপনিবেশের কারণে গাছের ছাল বা পাতা হাতি পাচ্ছে না।
এছাড়াও যত্রতত্র পাহাড় কাটা ও অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণের ফলে বন ও পাহাড়ের কৌমার্যকে নষ্ট করে দিয়েছে। বনসংলগ্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও নাব্যতা বাঁধাগ্রস্ত। পাহাড়ি ছোট ছোট ঝোড়ার উৎসস্থল বিনষ্ট হবার কারণে হাতির পানীয় জলের অপ্রতুলতা এই এশীয় গারো পাহাড়ের হাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের আছে নিজস্ব সৌন্দর্য। পাহাড়-বন পাহাড় বনের মতোই। তার গন্ধ আলাদা। রূপ আলাদা। তাকে টাউনের মোড়কে সাজাবার দরকার নেই। সীমান্তের কাছাকাছি জিরো পয়েন্টে হাতির আনাগোনা বেশি। হামলা মানুষ যেমন করছে তেমনি হাতিও। এই আক্রমন ও প্রতি আক্রমনে প্রাণ যায় রাংটিয়ার আমজাদ, তারা মিয়াদের। বিটে পড়ে থাকে মৃত হাতি। দলবেঁধে পাহারা। মশাল ও বোঙ্গা জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানো। বাড়িঘর আক্রমন।
এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবে প্রাণই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রয়োজন সামগ্রিক দৃষ্টিভঙি। প্রাণ ও প্রকৃতির বৈচিত্র্য লালন ও পালনের পরিসর নির্মাণ করে। মানুষ হিসেবে কতটুকু পরিসর আমরা রেখেছি পশু পাখিদের জন্য? সরকার বাহাদুর ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার সুফল প্রকল্পটি মূলত পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি বড় প্রকল্প। সুফল মানে Sustainable Forest & Livelihood — “টেকসই বন ও জীবিকা।”
“বন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয় বর্ধক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা” — ২০১৯ গৃহীত এই পরিকল্পনা বন্য প্রাণীর বেঁচে থাকা ও প্রজনন বিস্তার এবং খাদ্যের উৎসের জন্য কোন সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে নি। যার ফলে বন, বনবাসী ও বন্য প্রাণীর জন্য কার্যকরী কোন ব্যবস্থা সুফলে কোন ফল দেখছেন না সুধী সমাজ।
অন্য জেলা মতো শেরপুর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য “তুলসীমালার সুগন্ধে পর্যটনে আনন্দে” — শ্লোগানটি ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জেলার সুগন্ধ তুলসীমালা আতপ চাল যেকোন ভোজন রসিকের প্রথম পছন্দ। সারা দেশেই ক্রমেই বিস্তার ঘটছে।
অন্যদিকে এই উত্তর জনপদে মেঘালয়ের পাদদেশ দিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল — বন বনানীর গারো পাহাড় ভ্রমণ–পিপাসুদের আগ্রহ পাহাড় চিরে সড়ক নির্মাণের কারণে সকল দর্শনীয় স্থান একই বেল্টে এনে ভ্রমণকে করেছে আরো সহজ।
কিন্তু এতে পাহাড়ী জনপদের নিজস্ব সৌন্দর্য ব্যাহত হয়েছে। কাঠ চোরাকারবারিদের ট্রাকের পর ট্রাক লোড করে রাতারাতি পারাপারের সুবিধা হয়েছে। দিন দিন যন্ত্র ও যান্ত্রিকতার আমদানির জন্য বিপন্ন প্রাণীকূল আর নানা জাতীয় পাখি।
কোন কোন পরিবেশবাদী শ্লোগানটি ঘুরিয়ে এভাবে বলছেন, “তুলসিমালার সুগন্ধে বন্য প্রাণীর ক্রন্দনে” রূপ নিয়েছে এই পাহাড়। বন উজাড় করে পাহাড় গুঁড়িয়ে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস করে কি পর্যটন সম্ভব? প্রয়োজন হাতির বাসস্থান, সংরক্ষণ করলেই পর্যটন বৃদ্ধি পাবে। হাতির বিচরণক্ষেত্রে টাওয়ার বসিয়ে চিড়িয়াখানা বা কংক্রীটের মৎসকন্যা বা শিশু পার্ক করলেই পর্যটন বান্ধব হয় না।”
প্রয়োজন ইকোলোজিক্যাল এ্যাওয়ারনেস। প্রকৃতির যেখানে যাকে সুন্দর সেখানেই তার পরিসর নির্মাণ করা। বিট কর্মকর্তা বা স্থানিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নয় — পশুপাখির কাছে বন ছেড়ে দিন। বন্য প্রাণীর ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণে — প্রাণ প্রকৃতির নাড়ির স্পন্দন অনুভব জরুরি। যদি সেটি অনুভব করতে কর্মকর্তারা ব্যর্থ হোন তবে পশু পাখিদের কাছে ছেড়ে দিন — তারা নিজেরা নিজেদের অবাসক্ষেত্র তৈরি করে নিবে। প্রকৃতি নিতে পারবে বুক ভরে প্রাকৃতিক শ্বাস।
মানুষ বনাম হাতির লড়াই মানুষের সৃষ্ট। হাতির আক্রমন হামলা তার ফল। পশুর খাবার, পানীয় জলের উৎস ও তার বিশ্রামের প্রাকৃতিক ক্ষেত্র বিনষ্ট হলে সে মারমুখী হবেই। মশাল জ্বালিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিদ্যুতের তার সংযুক্ত করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ক্ষতি হবে শুধু প্রাণ ও প্রকৃতির। ভারসাম্য হারাবে জীববৈচিত্রের। দরকার সামগ্রিক পরিকল্পনা। সমগ্রের পরিপ্রেক্ষিতে অংশকে বিবেচনা করা। কোন কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়। একটি অপরটির সাথে জড়িয়ে ছড়িয়ে আছে।
পুঁজিতন্ত্রের মুনাফাভোগী নগদ লাভের কায়কারবার যখন সামনে এসে দাঁড়ায় সে তখন তার বিনিয়োগ ক্ষেত্র সন্ধানের সীমা পরিসীমা থাকে না। এই টাকার কারবারিরা যদি মানুষকে উৎপাটিত করতে হয় করবে যদি হাতিকে মারতে হয় মারবে। বানের জলের মতো সর্বত্র তার বিস্তার চাই। নদ-নদী-বন-পাহাড় খেতে খেতে একদিন সে রূপকথার সাপের মতো নিজেই নিজের লেজ গিলতে শুরু করবে।
এই হাতি গারো পাহাড়ের হাতি। আমার উত্তর জনপদের হাতি। আমার পড়শি হাতি। তাকে কোথায় তাড়াতে চান? এই শেরপুরের উত্তরে পাহাড়ে হাতির বাস তো আজকের নয়। ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক বিভাজন রেখার পূর্বে মেঘালয় রাজ্যের শেষপাদ এই পুরো গারো পাহাড় অঞ্চল হাতিদের বিচরণের অঞ্চল।
বাংলা ভূমি ভাগ করার সময়ে মানুষ প্রাধন্য পেয়েছে। রেড ক্লীফ সিজার দিয়ে ক্যাচ ক্যাচ করে কেটে দিয়েছেন টেবিলে রাখা বৃহৎ বঙ্গের মানচিত্র। দেশ মানচিত্রের চেয়ে বড়। রাজনীতিতে মানুষ কেন্দ্রীয় চরিত্র হবার কারণে পশুপাখির কথা বিবেচনা করা হয় নি।
এই বিশালদেহী প্রাণীকূল নিজগৃহে পরবাসীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে আজ। যে বিস্তীর্ণ পাহাড় ছিল তার চারণ ভূমি আজ সংকুচিত হতে হতে তার জীবন বিপন্ন। সংকটাপন্ন তার অস্তিত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬৮ টি বন্য হাতি কাগজ কলমে আছে।
যে হাতি আমাদের অথচ প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে ”এই হাতি আমাগো না। ইন্ডিয়া থেকে আইছে।” কাজে কাজেই অস্বীকার প্রবণতার কারণে জনমনে হাতিবিদ্বেষ বেড়ে গেছে। আর শত্রুকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার আগে একটি বেডনেইম দেয়াই নাকি যুদ্ধের রীতি — “Before kill, give him a bad name ’’
খাদ্যের সন্ধানে হাতি সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় বলে সীমান্তবর্তী তুরা পাহাড়ে হাতির চলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। সেই ভূখণ্ডও ছিল রাজনৈতিক রেখার পূর্বে গারোপাহাড় সংলগ্ন। এই ভ্রাম্যমাণ প্রাণী খাদ্য, পানীয় জল ও বিশ্রামের জন্য চষে বেড়ায় সর্বত্র। তাকে জোর করে ভিনদেশি কাস্টম ফাঁকি দিয়ে কাঁটাতাঁর পেরিয়ে এখানে চলে এসেছে এমন ভাবনা যথাযথ নয়। কাজে কাজেই ভুলনীতি ও শত্রু জ্ঞানে আমার পড়শিকে নিজগৃহে পরবাসী করবেন না।
সেদিন ফোনে কথা হচ্ছিল ফকির শহিদের সাথে। শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক তিনি। এ তল্লাটে পাখির প্রাকৃতিক সংরক্ষরণ ও পাখি আবাস টেকসই রাখার জন্য শহিদের দল নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড়, বন ও বন্যপ্রাণী নিয়েও লেখালেখির সাথে নানা ফোরামে ভয়েজ রেইজ করে যাচ্ছেন তিনি। “হাতি খাদ্য পেলে কখনোই ক্ষেতের ফসল নষ্ট করতো না। ধান হাতির খাদ্য না। খাদ্যাভাবে না পড়লে হাতি ধান খেতো না। খাদ্য সংকট দূর করার জন্য প্রয়োজন যে পথে হাতি আসে সেই পথে সৃষ্টি করতে হবে হাতির খাদ্যের সবুজ বেষ্টনী।” পুরো গারো পাহাড় মূলত হাতির নিজস্ব ভূমি। যে দিকে বেশি বন আছে খাদ্য আছে সে সেদিকেই চলে যায়। এটি নো মেন্স ল্যাণ্ড নয়, ভারতীয় বা বাংলাদেশ সীমান্ত সেটি তাঁর বিষয় নয়।
শহিদ আরো জানালো, “যতটুকু কার বিচরণক্ষেত্র ততটুকু সে বিচরণ করবেই। খাদ্য সন্ধান করবেই। এই যে আবাদি জমি দেখছেন এগুলো পাহাড়ের ঢালু গড়িয়ে গড়িয়ে সমতল হয়ে আবার উপর দিকে ওঠে গেছে। এই নিচু জমিতে বর্ষার পানি জমে যে ঝোরা সৃষ্টি হতো সেগুলোই ছিল হাতির পানীয় জলের উৎস। সেটেলারদের বসতি স্থাপনে এইগুলো আবাদি জমিতে পরিনত হয়ে গেছে।”
বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙন এলাকা থেকে এখানে যেমন বহিরাগতরা এসেছে তেমনি নানা মুনাফাখোর কারবারিরা লিজ নিয়ে করেছে জাম্বুরা, লেবু, কমলা, পেঁপে, রাবারে খামার। তারা একদিকে যেমন যত্রতত্র গাছ কেটেছে তেমনি পাহাড় কাটা ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটি আলগা হয়ে ধসে গেছে মাটি। সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে ছোট ছোট টিলার এই গারো পাহাড়।
ঘন অন্ধকার ঝোপ ও ছোট ছোট টিলার আড়ালে হাতির যে নিরাপদ আবাস ছিল — নিজস্ব আড়াল ছিল — সেটি ভেঙে পড়েছে এই অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা ও পাথর উত্তোলনের কারণে। আবার অন্যদিকে রাতে হাতি বের হয়ে দেখে সাারা পাহাড় আলোকিত — হয় মশাল, নয় বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত।” তার ছোট্ট চোখ ঝলসে যায় সারি সারি আলোর ঝলকে। এছাড়াও নিয়মিত বিএসএফ সদস্যরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্চ লাইট ব্যবহার করায় হাতির দল দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।”
ফলে বহুবিধ সমস্যায় আক্রান্ত পাহাড় ও বন্যপ্রাণী। ফকির শহিদ টাউনের মতো পাহাড় আলোর সজ্জা বিরোধী। তিনি আরো বলেন, পাহাড়-বন পাহাড় বনের মতোই। তাকে শহুরে ধাঁচে ভবন, মঞ্চ, চিড়িয়াখানা, নানা কিসিমের বাজারের মতো সাজানো প্রকৃতি বিরোধী।”
পর্যটক বন-পাহাড় বন্যপ্রাণী দেখতে আসবে। শহর নয়। বন্যপ্রাণী দর্শনের জন্য তিনি নিদেন পক্ষে সুুউচ্চ টাওয়ার করার পক্ষপাতি। সমতল থেকে সরাসরি টাওয়ারে উঠবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে বন বন্যপ্রাণী সব কিছু তার নিজের মতো করে বেড়ে উঠবারর পরিসর পাবে। আরেক দিকে সরকার পাবে রাজস্ব। রক্ষা পাবে প্রাণ ওপ্রকৃতি।
“হাতির আবাসস্থলে আমরা ঢুকে পড়েছি — হাতি আমাদের আবাসে আসে নাই।” ফকির শহিদ আরো যুক্ত করলেন, “হাতির সেন্স খুব ভালো। যেখানে বেশি খাদ্য পায় সেখানেই বিচরণ করতে করতে এক সময় ফুরিয়ে যায়। দল বল নিয়ে কাফেলা চলে অন্যত্র। সেখানে হয়তো এক যুগ লেগে যায়। সেখানে খাদ্যভাব দেখা দিলে যে পথে সে এখানে এসেছিল সে পথ ধরে প্রাক্তন জায়গায় ফিরে আসে।”
তার চলার পথ সে ভোলে না। ফেরার সময় সে পথে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাকেই সে গুঁড়িয়ে ফেলে। এটাই বিশাল দেহী হাতির বৈশিষ্ট্য। মানুষের নিক্তিতে সব কিছু দেখতে গিয়ে অন্যান্য প্রজাতির অনন্যতা আমাদের চোখে পড়েনি। হাতিকে ভেবেছি শত্রু। আর তাই হাতি বনাম মানুষের লড়াই চলছে। প্রাণ ও প্রকৃতির আলোকেই এর মীমাংসা করতে হবে। বিজয়ী হবার প্রবণতা নিয়ে প্রকৃতিকে পরাভূত করা যায় না। প্রকৃতির ভেতর আমাদের বাস। আমি আমরা বন পাহাড় হাতি সবাই প্রকৃতির একটি ছোট্ট অংশের অংশ।
হাতির বিচরণক্ষেত্র হাতিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তার উৎসস্থল ধ্বংস করা যাবে না। গেঁড়ে বসা সেটেলারসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন লিজ প্রথা বাতিল করে ঘন বনের বেষ্টনী গড়ে তোলার সার্বিক পরিকল্পনার ভেতরই রয়েছে এর সমাধান সূত্র।
“বাঁশের ঘন বুনটের কারণে সে ভেতরে আসতে পারবে না। বাঁশঝোপ ও বাঁশের কঞ্চির বেড়া পেরিয়ে কখনো লোকালয়ে ঢুকতে পারবে না। কলাগাছ বন, বেতবন বড়ই বন ও বাঁশঝোপ হাতির জন্য প্রাকৃতিক বাঁধ।” পাহাড়কে পাহাড়ের কাছে ছেড়ে দিলে পাহাড় তার সদস্যদের জন্য নিজেই নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে নেবে। নগর ও বন পাহাড় পরিকল্পনা এক নয় — আলাদা আলাদা — সমগ্রের পরিপ্রেক্ষিতেই বিবেচনা করেই মানুষ ও বন্যপ্রাণীর হোমরেঞ্জ নির্মাণ করা জরুরি।
তখন আর হাতি — মানুষের লড়াইয়ে কারো প্রাণ যাবে না। হাতির পথে হাতি আর মানুষ মানুষের পথে। যার যার হোমরেঞ্জ আলাদা আলাদা। প্রয়োজন সংরক্ষিত বন। সংরক্ষিত বন ঘোষিত হলে ২০১৭ সালে একই পরিবারে বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে যে কিশোরী মেয়েটি চিৎকার করে বলছিল “আমি সরকারের কাছে বন্দুক চাই। আমারে বন্দুর আইন্যা দাও, আমি হাতি মারুম।” এমনটি আর কখনো ঘটবে না। আর কোন প্রাণ অকালে ঝরবে না। ২০১৭ নভেম্বর এই উত্তর জনপদে একটি রক্তাক্ত মাসের নাম। কাংশা ইউনিয়নের পানবর গ্রামে একই পরিবারে তিনজনসহ গারো পাহাড়ে সেই মাসে প্রমত্ত হাতির আক্রমনে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল নয়। পাহাড়ের সবুজ প্রান্তর লালে লাল হয়ে গেছিল।”
পেপার কাটিং:
- ‘‘বন্য হাতির দল লোকালয়ে, মশাল দিয়ে পাহারা, দৈনিক প্রথম আলো, ১২.১১.২০২০
- ‘‘জামালপুরে হাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু’’,দ্য ডেইলি স্টার, ৭.৭.২০২০
- ‘বেহাল গাজনি’’, ফকির শহীদ, সাপ্তাহিক জয়, ১০.১২.২০১৭
- সুফল প্রকল্প : ” নামটা যত ভালো কাজটা তত ভালো নয়, বাংলা ট্রিবিউন, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
- ‘বাংলাদেশে কেন কমছে হাতি’’, মোস্তফা কাজল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ নভেম্বরে, ২০২০
- ‘হাতির আগমন রোধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ’’, ফকির শহীদ, সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া, ৬.১১.২০১০
- ‘যেখানে সন্ধ্যা নামে হাতির আতঙ্কে’’, রফিক মজিদ, মানবজমিন
- ‘শেরপুর সীমান্তে চলছে হাতি নিধন : নির্বিকার প্রশাসন’’, রফিক মজিদ, যাযয়যায়দিন
- ‘শেরপুর সীমান্তে হাতি ঠেকাতে ব্যর্থ বৈদ্যুতিক বেড়া’’, রফিক মজিদ, যায়যায়দিন
- ‘ভালো নেই বুনোহাতি’’, রফিক মজিদ, ১৪.১১.২০২০, শেরপুর টাইমস
- ‘বন্য হাতির ফাঁসি চাই’’, রফিক মজিদ, শেরপুর টাইমস
- ‘‘শেরপুরে হাতির আক্রমন’’, দেশ টিভি
- ‘‘যমের নাম হাতি’’, রফিক মজিদ, যায়যায়দিন, ২৩.১১.২০১৭
প্রথম প্রকাশ: সহজিয়া।