সুতানালী দিঘী । বিরহিণী দিঘী । কমলা রাণী দিঘী
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম শালমারা। উপজেলা সদর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই গ্রামে ২৮ একর জমির উপর একটি দিঘী রয়েছে। সরকারি রেকর্ডের দিঘীর নাম বিরহিণী দিঘী আর এলাকারবাসীর মুখে সুতানালী দিঘী এবং কমলা রাণী দিঘী নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন মোগল আমলের শেষ দিকে সামন্ত রাজার বসবাস ছিলো। আবার কেউ কেউ বলেন বৌদ্ধবিহার ছিলো।
শালমারা গ্রামে রাজপরিবারের বসবাস ছিলো। কমলা রাণী ছিলেন রাজার দাম্পত্য সঙ্গিনী। কোন এক রাতে রাণী রাজারকে বলেন আমাকে এমন কিছু দান করুন যেন মানুষ যুগে যুগে মনে রাখবে। রাজা চিন্তা করতে রানীকে বললেন আমি ঠিক করছি, অবিরাম এক রাতে সুতা কাটলে যে পরিমান জায়গা দখল করবে সে পরিমাণ একটা দিঘী তোমার নামে খনন করবো। লোকজন দিঘীর পানি ব্যবহার করবে আর তোমার নাম স্মরণ রাখবে। কমলা রাণী তাতে সম্মতি দেয় তারপর শুরু হয় অবিরাম রাত সুতা কাটার এবং সে পরিমাণ জায়গার উপর দিঘী খনন করা হয়।
অতবড় দিঘী খনন করা হয়েছে যে, এক পাড়ে দাঁড়ালে আরেক পাড় থেকে মানুষ চেনা যায় না শুধু দেখা যায় না। কিন্তু দিঘীতে পানি উঠে না তাই সবাই চিন্তিত এখন কি করা যায়? অবশেষে রাজা স্বপ্নে দেখেন গঙ্গা পূজা কর নরবলি দিয়া তবে পুকুরে পানি উঠবে। সব কথা শুনে রাণী চিন্তিত। নরবলি দিতে রানী নারাজ। দিঘীর মধ্যে মহা ধুমধামে গঙ্গা পূজার আয়োজন করে রাণী গঙ্গা মায়ের নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেন “কোন মায়ের বুক করিয়া খালি তোমাকে দিব মাতা নরবলি” আমি যে সন্তানের মা, আমায় করিয়া ক্ষমা কোলে তোলে নেও মা কবুল কর তোমার পূজা।
হঠাৎ পুকুরে বজ্রপাতের ন্যায় শব্দ, প্রবল বেগে পানি উঠতে লাগলো। লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে পাড়ে উঠে। সবাই উঠে কিন্তু রাণী উঠতে পারেনি। দিঘী সম্পর্ণ ভরপুর হয়ে গেলো পানিতে। রাজা রাণী বলে চিৎকার করে কিন্তু কোন উত্তর মেলেনি। সেই থেকে দিঘীর নাম হয়- সুতানালী দিঘী বা বিরহিণী দিঘী।
দিঘিটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। ১৯৯৭ সালেতৎকালীন সরকার পুকুর সংস্করণ ও মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় দিঘিটিকে খনন করে মৎস্য চাষের পরিকল্পনা করেন। দিঘীকে কেন্দ্র করে অসংখ্য পরিবারের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ হয়েছে। এছাড়াও এটা হয়েছে মৎস্য শিকারীদের মিলন মেলা। প্রতি বছর টাকার বিনিময়ে মৎস্য শিকারের মাছ জন্য টিকিট ছাড়া হয়।