বাবাদের ফিলিংস নাই!
অণু গল্প : রফিক সাহেবের একমাত্র কন্য শারমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ে। সারাদেশে করোনায় ভাইরাসের আতংকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় মেডিকেল কলেজও বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তাই শারমিন বেলা ২ টায় বাসে উঠেছে শেরপুরের উদ্যেশে। বাবা রফিক সাহেব ঘড়ি ধরে সন্ধ্যা ৭ টায় নবীনগর বাসটার্মিনালে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
একটু পর পর ফোন করে যেনে নিচ্ছিল ‘মা, আর কতক্ষণ লাগবে, কোথায় আছিস? ইত্যাদি। এদিকে শারমিনের মা রুবিনা মেয়েকে বার বার ফোন দিয়ে বলছে, ‘মা, গাড়িতে কোন সমস্যা নাইতো, ভালো সিট পাইছিস? ক্ষুধা লাগছে? আমি কিন্তু তোর জন্য সেই দুপুর থেকে রান্না করছি। তোর পছন্দের কচু শাক, ঝোল বাড়িয়ে দেশী মুরগির তরকারি, টমেটো দিয়ে মশারি ডাল।’ গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় আসবা, কোথাও কিছু খাবা না, ইত্যাদি। মেয়ে শারমিন মা এবং বাবার এমন নানা প্রশ্নে অনেকটা বিরক্ত। কিন্তু কি আর করা মা-বাবারা তো তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য একটু বেশী চিন্তা করবেই, এসব কথা ভেবে স্বাভাবিক হয় শারমিন।
এভাবে রফিক সাহেবের অপেক্ষার প্রায় ঘন্টা খানিক পর, মেয়ের বাসটা এসে থামলে, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে একটি রিক্সায় উঠে। শহরের নিউ মার্কেট মোড়স্থ ঐতিহ্যবাহি অনুরাধার মিষ্টির দোকানের সামনে রিক্সা ভিরিয়ে রফিক সাহেব মেয়ের উদ্যেশে বলে, ‘এখানে নামো, আসো মা, এখানের টাটকা একটা মন্ডা খেয়ে এক গ্যালাস পানি খাও। সেই দুপুর থেকে কিছু খাওনি।’ শারমিন একটু বিরক্তির স্বরে বাবাকে বললো, ‘কি বলো বাবা, এই অবস্থায় খাবো? বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবো তারপর কিছু খাবো। এছাড়া মা তো বার বার ফোন দিচ্ছে সেই দুপুর থেকে নাকি আমার জন্য রান্না করে বসে আছে।’
বাবা রফিক সাহেবের মুখটা একটু কালো হয়ে যায় মেয়ের কথা শুনে। তাই সে ভগ্ন হৃদয়ে বললো, ‘ও আচ্ছা, মা রান্না করে বসে আছে, তাই কিছু খাওয়া যাবে না। আর আমি ঘন্টা খানিক ধরে রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে তোর পথ চেয়ে বসে আছি এবং তোকে দেখে মনটা চাইলো কিছু খাওয়াই তোকে, কিন্তু না, মা রান্না করেছে মা’রটা খেতে হবে। ঠিক আছে চল, “বাবাদের ফিলিংস নাই, যা ফিলিংস শুধু মা’য়েদের।”
‘এইযে মন খারাপ করলা, ঠিক আছে মন্ডা নিয়ে আসো, তবে এখানে এই অবস্থায় খাবো না। বাসায় গিয়ে তোমার সামনে বসে খাবো।’ শারমিনের এ কথা শুনে রফিক সাহেবের ঠোটের কোনে মৃদু হাসির ঝিলিক পড়লো। আনন্দ চিত্তে রফিক সাহেব অনুরাধার মন্ডা নিয়ে রিক্সায় উঠে বসলো।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি রফিক মজিদ।