মোহাম্মদ রবিউল আলম : জেলা শেরপুরের বিভিন্ন অফিসে “পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে” শ্লোগানটি দেওয়ালে ঝুলতে দেখা যায়। জেলা হিসেবে শেরপুরের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে তুলশীমালার চাল ও পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে দারুন ভাবে কাজ চলছে। আর কুমিল্লার ছেলে দেলোয়ার “আওয়ার শেরপুর” ওয়েবসাইট খুলে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। দেলোয়ারের কর্মযজ্ঞে জেলা আইনজীবী সমিতি ও শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল শ্যামলবাংলা২৪.কম এর সম্পাদক ও কবি সংঘ বাংলাদেশ এর নির্বাহী সভাপতি এড. Rafiqul Islam Adhar ভাইয়ের চেম্বার ও শেরপুর প্রেসক্লাবসহ বেশক’টি অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও সিনিয়র সাংবাদিক, কবি সংঘ বাংলাদেশ এর সুযোগ্য সভাপতি ও আমার গুরুকবি Talat Mahmud মহোদয়ের সাথে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম।
তুলশীমালার খ্যাতি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম যখন ঢাকা থেকে আমার এক বন্ধু তুলশীমালা চাল ও বীজধান চেয়ে আমার উপর ফরমান জারি করলেন। তুলশীমালার চাল রাজধানী ঢাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে ভেবে বেশ পুলকিতই হলাম। কিন্তু, তুলশীমালার প্রতি বন্ধুর দুর্নিবার আকর্ষণের কারণ জেনে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকাও খেলাম। কারণ, বন্ধু আমার তুলশীমালার প্রেমে এখনও মজেননি, তার উদ্দেশ্য বিখ্যাত বাসমতি চালের সাথে চাল দেবেন। তার চালে যদি আমাদের তুলশীমালা বাসমতিকে বাঁশ দিতে পারে, তাহলে মান-ইজ্জত বাঁচবে, নাহলে বানের জলে ভাসবে। আত্মরক্ষার (Self-defense) চেষ্টা হিসেবে আগে থেকেই তাকে বলে রাখলাম যে স্বাদ (taste) তো একেক জনের কাছে একেক রকম হয়। স্বাদকে সুস্বাদু করতে অভ্যাস, আঞ্চলিকতা ইত্যাদিরও ভূমিকা আছে। তবে, খেয়ে দেখতে পারো। আমার বিশ্বাস, বাসমতিকে বাঁশ না দিতে পারলেও ভালোবেসে কাঁধে হাত রাখার মত পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তাকে চাল ও বীজধান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলাম।
একটু চিন্তিত হলাম, বাড়িতে (জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার এক অজপাড়াগাঁ) বসে কিভাবে এগুলোর ব্যবস্থা করে পাঠাই!চালের ব্যবহারে কোনো চিন্তা ছিল না। কারণ, “আওয়ার শেরপুর” এর কর্ণধার ছোটভাই দেলোয়ারের (Md Daloare Hossain) উপর চোখ বুঁজে নির্ভর করতে পারবো। কিন্তু বীজধান কোথায় পাই?
অনেক ভেবে-চিন্তে প্রথমে স্মরণাপন্ন হলাম পৌরসভার ট্যাক্স কালেক্টর আমার প্রিয়ভাই Muslim Uddin এর। কারণ চাকরির পাশাপাশি তিনি কৃষির সাথেও জড়িত।কিন্তু তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে কিছুটা সংকোচ নিয়েই আমার আরেকজন শ্রদ্ধাভাজন প্রিয়ব্যক্তিত্ব আলহাজ Shafiul Alam Chan স্যারকে ফোন করলাম। তিনি আমাকে তাঁর বন্ধু এবং আমার আরেকজন প্রিয়মুখ, শেরপুর চেম্বারের অন্যতম পরিচালক, চিরসবুজ Layesur Rahman Dara ভাইয়ের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিলেন এবং স্বভাবসুলভ বিনয় প্রকাশ করে এ প্রতিশ্রুতিও দিলেন যে, কোথাও বীজধান না পেলে তাঁকে যেন জানাই। তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন। তো দারাভাইকে ফোন দিতেই তিনি হাসিমুখে প্রতিশ্রুতি দিলেন তুলশীমালার বীজ জোগাড় করে দেওয়ার। মাত্র দু’দিন সময় নিলেন। দেলোয়ারকে ফোনে আমার অবস্থা ও অবস্থান দু’টোই বর্ণনা করলে সে আমাকে আশ্বস্ত করলো। শেরপুরের বাইরের বন্ধুদের অবগতির জন্য বলে রাখছি, তুলশীমালার স্বাদ যদি কারো মনে জ্বালা ধরায় তাহলে দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করলে সে জ্বালা মেটানোর চেষ্টা করবে। সে সারাদেশে তুলশীমালার চাল সর্বরাহ করে।
যাক, দু’দিন যেতে না যেতেই দারা ভাইয়ের ফোন, “স্যার, আপনার ধানবীজ রেডি।” দেলোয়ারকে জানানোর পর সে তুলশীমালার চাল ও বীজধান দু’টোই সুন্দরবন কুরিয়ার মারফত রাজধানীর বুকে আমার বন্ধুর ঠিকানায় পাঠিয়ে আমাকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন। বন্ধুকে বীজধানসহ তুলশীমালার চাল পাঠানোর যজ্ঞে যুক্ত হয়ে মনে পড়লো প্রিয় সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই বিখ্যাত “রসগোল্লা” গল্পের কথা। ঝান্ডুদার ভ্যাকুয়াম প্যাক্ট মিষ্টান্ন, চুঙ্গিওয়ালা, সেই রসগোল্লা চেখে দেখার দুর্নিবার লোভ, অতঃপর ঝান্ডুদার সাথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটন-অঘটন! কিন্তু আমার বন্ধুটি সম্ভবতঃ এখনও আমাদের তুলশীমালার স্বাদ চেখে দেখতে পারেননি। তাঁর আইনি-সম্পর্কের এক আত্মীয়ের দেহ-ত্যাগজনিত কারণে হয়তো এখনও তুলশীমালার চাল তাঁর চুলার মুখ দেখেনি।
আমরা তাঁর আত্নীয়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করি। আশা করি, শোক কাটিয়ে অতি সত্বরই তিনি সপরিবারে তুলশীমালার তুলতুলে পোলান্ন ভক্ষণ করবেন এবং দেখবেন বাসমতির বাহাদুরি তুলশীমালার কাছে কতক্ষণ টেকে। শেরপুরের বন্ধুরা, আসুন, আমরা সবাই প্রার্থনা করি, আমাদের তুলশীমালা যেন বাসমতিকে বাঁশ দিয়ে তার রাশ টেনে ধরতে এবং আমাদের মুখ উজ্জল করতে পারে।
সূত্র : ফেসবুক।