ফারাহ্ দিবা : ‘অনেকে বলে, এখন আর গ্রাম খুঁজেই পাওয়া যায় না। আমি একমত নই। এখনও অনেক গ্রাম আছে যেখানে মাটির ঘর আছে, যে গ্রামের পথে যেতে দুই ধারে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত দেখা যায়। আর থেকে পথের ধারের নাম না জানা জংলা ফুল। জলার পাড়ে ঢোল কলমি বিছিয়ে থাকে। কোনো এক অদ্ভুত কারনে গ্রামের পথে চলতে শুরু করলেই একটা অদ্ভুত ধরনের অচেনা, ভেজা, বুনো কিন্তু সতেজ ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে। পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই সুঘ্রাণ। আমাকে পাগল ভাবছেন তো??? ভাবছেন কেনো এই অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা????
উই তে আসার পর থেকেই একটা নতুন নাম চিনেছি, “তুলশীমাল”। যখনি নামটা পড়তাম আমি গ্রামের ঐ সুঘ্রানটা পেতাম। মধ্যবিত্তের সংসারে অনেক কিছুই মন চাইলেই করা যায়না। তাই অপেক্ষা ঈদের জন্য। ঈদ এলে “তুলশীমালা” কিনবো। অতঃপর…….
১৬ মে Md Daloare Hossain ভাইকে নক করলাম চালের জন্য। ভাই বললেন ‘আওয়ার শেরপুর‘ এর সিস্টেম হচ্ছে আগে বিকাশ করতে হয় তারপর কনফার্ম হবে। বিরাট চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি হচ্ছি DOHS এর বাসিন্দা। কঠিনভাবে সব বন্ধ। বিকাশের দোকানও ঠিক মত চলছেনা। যায় হোক পরদিন সকালে একবার সন্ধ্যায় একবার দোকানে পাঠালাম। বিকাশ হলো না। রাতে ভাইকে বললাম সমস্যার কথা। বললাম, কাল আবার পাঠাবো বিকাশ করতে। ভাই তখন আশ্বাস দিলেন, এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই আপু। আপনি চাল পাবেন। পরদিন ফাইনালি বিকাশ করতে পারলাম। কিন্তু ভাইয়ের দেখা পাইনা। তারপরদিন মানে ১৯ মে ভাই জানালেন টাকা পেয়েছেন। খুব বিব্রত হয়ে জানালেন আগের দিন সারাদিন বাইকে ট্রাভেল করেছেন, সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাই রেসপন্স করতে দেরি হলো। এটাই উদ্যোক্তা জীবন।
ভাইয়ের কনফার্মেশন পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম। এবার ঝামেলা বাঁধালো কুরিয়ার সার্ভিস। ওরা জানিয়েছে ডেলিভারি দিবে শুক্রবার ২২ মে। বোঝেন তখন আমার অবস্থা???। ধরেই নিয়েছিলাম ঈদে আর পোলাও খাওয়া হলোনা। কিন্তু সব টেনশন, জল্পনা, কল্পনা শেষ করে ঐ নির্দিষ্ট দিনেই ডেলিভারি পেলাম। আহ্…. ফাইনালি “তুলশীমালা চাল” আমার ঘরে এলো????।
এবার নেক্সট পর্ব। ঘরে তো এলো। বড়ো সাহেব মেনে নিবেন কিনা তখন আমার সেই চিন্তা। ঈদের দিন, আমার (সাথে তুলশীমালারও) পরীক্ষার দিন হাজির। খাওয়ার বিষয়ে আমাকে লাইনের সামনে পাওয়া যাবে। কিন্তু রান্নার বিষয়ে দেখা যাবে লাইনের একদম পিছনে। কখনো কখনো ঘরের কোনায়ও লুকানো অবস্থায় পাওয়া যেতে পারে আমাকে????। আমি কতো বড়ো রাঁধুনি বুঝতে পারছেন আপনারা??? যায় হোক, রান্না শেষে খাওয়ার পালা। এমন একটা ভাব নিয়ে খেতে শুরু করলাম যেনো রান্না ভালো হয়েছে কি খারাপ এটা কোনো প্রশ্নই হতে পারে না?????।
ওমা????? আমার সাহেব দেখি খেয়েই যাচ্ছেন!!!! থামছেন না। এক সময় বলেই বসলেন, “এটা কি চাল? পেট ভরে গেছে কিন্তু খাওয়া থামাতে পারছিনা কেনো?? এতটা খেলাম অথচ শরীর ভার লাগছেনা একটুও। আর এত সুন্দর ঘ্রাণ আগে কোনো পোলাও চালে পাইনি। কেমন অন্যরকম।”
আমিতো তখন মনে মনে????। বুঝছেন তো… মানে উড়ছি আর কি। খুব একটা ভাব নিয়ে বললাম, এটা “তুলশীমালা” চাল। তুমি চিনবে না?????। পরে তাকে বিস্তারিত পরিচয় বর্ণনা করেছি।
দেশবাসী শোনেন, এই প্রশংসার ২০০% হকদার আমি, আমি এবং আমি। দেলোয়ার ভাই আপনাকে আমি এক ফোঁটাও ক্রেডিট দিবো না। বহুত কষ্টে হাসিল করেছি এই প্রশংসা???। এখন অবস্থা এমন হয়েছে পোলাও, খিচুড়ি যাই রান্না হোক স্রেফ “তুলশীমালা” চাই।’
সূত্র : উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)।