খন্দকার খুররম ভাই এর ইন্তেকাল
১৪ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে সাবেক সাংসদ খন্দকার খুররম তথা খুরভাই ইন্তকাল করেছেন। খুররম ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ও তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে খুররম ভাই সম্পর্কে একদিনের ঘটনা বলছি।
১৯৭৩ সাল। সবে শেরপুর কলেজে ভর্তি হয়েছি। তখন শেরপুর কলেজে ছাত্র সংখ্যা অনেক। দেশ কেবল স্বাধীন হয়েছে, তাই সবার মাঝে বিপ্লবী ভাব। সকলেই কোন না কোন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি। সে সময় ছাত্রললীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। মুজিববাদী ছাত্রললীগ ও জাসদ সমর্থিত ছাত্রললীগ। জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মাদ প্রমুখ। তখন তাঁরা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র।
শেরপুর কলেজের মুজিববাদী ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওদু ভাই, মন্জু ভাই ও সংগ্রাম চক্রবর্তী, প্রমুখ। জাসদ সমর্থিত ছাত্র সংগঠন সবে শেরপুর কলেজে কাজ শুরু করেছে।নেতৃত্বে আছেন লালা ভাই, মকসুদ ভাই মুছা ভাই প্রমুখ।
আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই লালা ভাই, মকসুদ ভাই ও আশিস আমাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য বার বার তাগাদা দিতে থাকলো। আশিস আমার ক্লাসমেট ছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের অনুরোধে ছাত্রলীগে যোগদান করি। কাজ করে যাচ্ছি। কিছুদিন পর শেরপুর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। আমাকে সাহিত্য সম্পাদকের পদে নমিনেশন দেয়া হলো। ঐ বছর শেরপুর কলেজে তিনটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেয়। মুজিববাদী ছাত্রলীগে ওদু মন্জু, আমাদেরটা এবং ছাত্র ইউনিয়নের একটি।
এবার খন্দকার খুররম ভাই এর কথা বলি। খুররম ভাই তখন জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে পড়াশোনা করেন। পেট্রোল ভাই, মাজেদ ভাই আর খুররম ভাই তখন ডাকসাইটে ছাত্র নেতা।আমাদের পরিচিতি সভায় তারা তিনজন আসবেন। শেরপুর কলেজের লিচুতলায় সভার আয়োজন করা হলো। কলেজে টান টান উত্তেজনা। ছোট মঞ্চ তৈরী করা হলো।
জামালপুর থেকে তারা আসবেন। কলুরচর ঘাট থেকে আনতে হবে। নিয়ে আসার দায়িত্ব দেয়া হলো আমাকে ও আশিস কে। আশিস পরবর্তীতে শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। নিউ মার্কেট মোড় থেকে দুটি বেবি টক্সি নিয়ে আশিস আর আমি জামালপুর ঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করছি। একসময় দেখলাম তিনজন ছাত্রনেতা একটি নৌকায় আসছেন। ঘাটের কাছাকাছি আসতেই আমি হাঁটু পানিতে নেমে স্বাগত জানাতেই খুররম ভাই বললেন “কেমন আছ?” যেন কত পরিচিত। তারপর সারা রাস্তা খুররম ভাইএর পাশে বসে গল্প করতে করতে কলেজে আসা হলো পেট্রোল ভাই খাটো ছিলেন। কী তেজ ছিল। পরবর্তিতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
খুররম ভাই যৌবনে দেখতে যেমন সুপুরুষ ছিলেন তেমনি সুবক্তাও ছিলেন। তিনি পরিচিতি সভায় আমাদের বিশ জন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঐ বছর শেরপুর কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন জয়লাভ করে। পরবর্তীতে খুররম ভাই সতন্র প্রার্থী হয়ে এমপি হন। পরে জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
আমার সাথে যোগাযোগ ছিল ৮৮ সাল পর্যন্ত। আমার দেশে বিদেশে ঘুরাঘুরির কারণে আর দেখা হয় নাই। ভেবেছিলাম এখন শেরপুর আসলাম আবার যোগাযোগ করবো। আর হলো না। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুণ। আমিন!
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, অবসর প্রাপ্ত সম্মানিত ক্যাপ্টন, সেনা শিক্ষা কোর।