Our Sherpur

গোপন নায়ক উপন্যাস পর্ব (৭) সাগর আহমেদ

লেখকঃ সাগর আহমেদ
ব্যর্থটার কথা আর বাড়াতে চাইনা! সে প্রসঙ্গ এখন থাক। তাঁর যাবার সময় হয়েছে। বললাম, “ভালো মত যেও। আর বাড়ি না পৌছানো পর্যন্ত একটু পর পর কল দিও। তাহলে আর তোমার একা লাগবে না।”
সে আমার কথাগুলো শুনলো কিন্তু কিছুই বললো না। মুখেও সম্মতির কোন লক্ষণ খুঁজে পেলাম না! বললাম, “কি হলো? কিছু বললে না যে..?”
মুখে অসহায় আর বিনয়ের ভাব প্রকাশ করে এইবার “সে” বললো, “চলো না আজকে আমার সাথে! দুজনে এক সাথে বাসে করে যাই। তারপর তুমি আবার মেসে চলে এসো। কতক্ষণ আর লাগবে?”
আমি তাঁর কথায় অসম্মতি জানালাম। “আজকে না, অন্য দিন যাবো নিশ্চিত। আজকে আমার একটু ঝামেলা আছে।”
আমার কথাতে সে একটু রাগ হলো! “হ্যা, তোমার তো শুধু ঝামেলা আর ঝামেলা! কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো। আবার কতদিন পর দেখা হয়, তারও ঠিক নেই।”
আবার আগের মত করে আবার অসম্মতি প্রকাশ করলাম। বুঝলাম, রাগটা কমেনি বরং বাড়লো। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলো, “তোমাকে এত করে বলতাম না। কলেজে দেখলাম, আমাদের ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন খারাপ ছেলেরা আসছে। নামকরা খারাপ। এরা সব সময় সুযোগ পেলেই খুব ডিস্টার্ব করে। খুব বাজে বাজে কথা বলে। সম্ভবত এরা একই এলাকার আর আমাদের এদিক থেকেই আসে। মনে হচ্ছে, আমাকে তাদের সাথে একই বাসে করে বাড়ি ফিরতে হবে। আমার খুব ভয় করে। তাই তোমাকে আমার সাথে যাবার কথা বলতেছি।”
আমি অল্প সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম! একটু গভীর ভাবে ভাবলাম। অবশেষে আমি বললাম, “সাহস রাখো, তোমার কিছু হবে না। বাসে গিয়ে কোন মহিলার সাথে অথবা সবার আগের সিটে বসবে। আর বাসে তো আরো অনেক মানুষ থাকবে। অযথা চিন্তা করো না।”
সে অনেক কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু তাঁকে আর কিছু বলতে দিলাম না। বিদায় জানিয়ে দ্রুত মেসের দিকে ফিরতে লাগলাম।
এতক্ষণে তোমরা হয়ত আবারও আমাকে গালমন্দ করে ফেলেছো! এভাবে অসহায় পরিস্থিতিতে একটা মেয়েকে ছেড়ে আসা নিঃসন্দেহে কাপুরুষের কাজ। কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনাটা একটু অন্য রকম। কারো মতের সাথে যদি না মিলে যায়, সে জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!
মেসে এসেই এক বড় ভাইয়ের কাছে প্রয়োজন মত টাকা ধার নিলাম। এটা সত্য যে, মেসে অনেক বড় ভাই আছেন, যাদের ব্যবহার খুবই অমায়িক। বিশাল মনের অধিকারী আর বন্ধু তো বটেই। আমিও এমন একজনকে পেয়েছি। সেই বড় ভাইয়ের নাম আব্দুর রউফ। স্রষ্টা তাঁর মঙ্গল করুন।
রাস্তায় এসে দ্রুত একটা রিক্সা ভাড়া করলাম। রিক্সাওয়ালাকে বললাম, বাইপাশের রাস্তা ধরে খুব দ্রুত বাস স্ট্যান্ড যেতে। আমার লক্ষ্য হলো তাঁর আগে আমাকে বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। আমি জানি, তাঁকে যেখানে রেখে এসেছি সেখান থেকে বাস স্ট্যান্ড যেতে তাঁর কিছুটা দেরি হবে। কারণ, অটোওয়ালা চার-পাঁচ জন যাত্রী না উঠলে অটো ছাড়বে না। আর ততক্ষণে আমি সেখানে পৌছে যাব। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যে বাসটা অপেক্ষায় আছে তাতে উঠে যাব। বসবো গিয়ে একেবারে পিছনের সিটে। যাতে “সে” কিছুতেই বুঝতে না পারে। কারণ, “সে” তো এসে বসবে প্রথম দিকের সিটে।
আশা করি, তোমরা অবশ্যই আমার পরিকল্পনাটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছো! আমার লক্ষ্য এটা নয় যে, বর্শি দিয়ে তোমাকে মাছ ধরে দেয়া। আমার লক্ষ্য বর্শি দিয়ে কিভাবে মাছ ধরতে হয়, সেটা তোমাকে শিখিয়ে দেয়া। সেই একই রকম ভাবে, আমি বাসে করে কতদিন আর তাঁকে এগিয়ে দিতে পারবো? তোমরাই বলো! তাঁকে তো এ পথে সচারাচর চলাফেরা করতে হবেই। ভয় মনের মধ্যে পুষে রাখলে তো আর বিপদ দুর হবে না। দরকার সাহস। আর সেই সাহসটাই আমি তাঁর মধ্যে কিছুটা হলেও তৈরি করতে চাই। সে শিখুক, সাহস দিয়েই অনেক কিছুই জয় করা যায়!
ততক্ষণে বাসস্ট্যান্ড চলে এলাম। ঐ তো “সেও” এদিক দিয়ে পড়েছে। ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত বাসে উঠে পেছনে চলে আসলাম। বাসে পাঁচ-সাত জন যাত্রীও আছে। এরই মধ্যে “সেও” বাসে উঠে সামনের সিটে বসলো। আর আমাকে যেন না দেখতে পায় সে জন্য আমি তখন আমার মাথাটা নিচু করে রাখলাম।
ধীরে ধীরে বাসে আরো যাত্রী উঠতে শুরু করলো। একটু পর দেখলাম, একই বয়সি পাঁচজন ওয়েস্টান আধুনিক ছেলে আসলো। মাথার চুলের স্টাইল দেখেই বুঝা যায়, তাদের স্বভাব আর কথা-বার্তা কি ধরনের হতে পারে। তার মানে “ওর” কথায় ঠিক হলো। এরাই সেই বাজে ছেলেগুলো।
দেখলাম, ছেলেগুলো অন্যপাশে বাসের সামনের দিকের প্রথম দুই সিটে বসলো। একটা সময় পর্যাপ্ত যাত্রী হওয়ার পর বাস ছাড়লো। সবাই সবার মত করে চিন্তা-ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ঐ ছেলেগুলোর কথাবার্তা পুরো বাস জুড়ে শোনা যাচ্ছে। দেখলাম, কেউ বিরক্ত হয়, কারো হয়ত ভালো লাগেনা। কিন্তু কেউ কোন প্রতিবাদ করে না। এতক্ষণ তবুও ভালো ভাবেই যাচ্ছিলাম। আধঘন্টা পর এক বাজারে বাসটি থামলো। বাসের প্রায় অর্ধেক যাত্রীই নেমে পড়লো। কোথাও এক সিট কোথাও দুই সিট এভাবে বাসের সিটগুলো খালি হলো। মহিলা যাত্রী বলতে “সে” একজনই। কেবলই তাঁর সাথে থাকা মহিলাটি নেমে গেলো। আর আমি তো সবার পেছনে বসে তাঁর অলক্ষ্যে সব প্রত্যক্ষ করতেছি। বাস পাঁচ মিনিটের জন্য থেমেছিলো। আবার ছাড়লো। এখন বাসের এ পাশে একাকি “ও” বসে আছে, আর তাঁর ঠিক বিপরীত পাশে ছেলেগুলো।
তখনি আমার মোবাইল বেজে উঠলো। আর কেউ না! “সে” ই কল দিয়েছে। কল রিসিভ করে আস্তে আস্তে বললাম, “কি খবর তোমার? কোন পর্যন্ত গেলে?”
“সে” বললো, “অর্ধেক আসছি কেবল। আর তোমাকে বলছিলাম না! ঐযে… ঐটা সত্যিই হইছে।” আমি জানতে চাইলাম, “কোনটা?” সে জানালো, “ঐযে, যে কারণে তোমাকে সাথে আসতে বলেছিলাম।” বললাম, “তাহলে কি ঐ বাজে ছেলেগুলোও বাসে উঠেছে?” সে বললো, “হুম!” আমি তখন সাহস দিলাম, “ভয় পেয়োনা, সোজা চুপচাপ বসে থাকো। এদিক সেদিক পেছনে সামনে ভুলেও তাকাবে না। কেউ ডাকলেও তার দিকে তাকাবে না। কোন সাড়াও দিবে না। আর আমি তো সব খানে তোমার সাথে সাথেই আছি। তোমার চোখে, তোমার মনে, তোমার চিন্তায়। বুঝছো? তাহলে রাখো এখন। ভালো মত যেও। পরে কথা হবে।”
বলেই কলটা কেটে দিলাম।

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব

Leave a Reply

Scroll to Top