Our Sherpur

তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে

রিয়াদ আল ফেরদৌস

শারদীয়া মানেই একচালাতে বাঁধা দুর্গা পরিবার। দুইপাশে দুই পুত্র ও কন্যা সন্তান আর মাথার উপর সদাশিব স্বামী মহাদেব শঙ্কর। পিতৃপক্ষ থেকে দেবীপক্ষে এলেও তিনি বিরাজমান।

কিন্তু এই চিত্রটি বৃহৎ পরিসরে পল্লবিত হয়ে উঠে যখন সমাজের সহাবস্থানে থাকা বহুমত ও পথের মানুষ মিলেমিশে রবি ঠাকুরের কন্ঠের সাথে উচ্চারণ করে শুধু নয় অপরের মত ও পথের প্রতি থাকে সহিষ্ণুতা। 

“কিসের হরষ কোলাহল 
শুধাই তোদের, তোরা বল।
আনন্দ-মাঝারে সব উঠিতেছে ভেসে ভেসে
আনন্দে হতেছে কভু লীন…”

এমনি এক শারদ সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ীর তারাগঞ্জ বাজারের বিশিষ্টজনের এক মিলনমেলা বসেছিল কামারপট্টি পূজা মণ্ডপের উঠানে। বিশেষ বৈশিষ্ট্যে যিনি শিষ্ট বা শ্রেষ্ঠ তিনিই বিশিষ্ট বৈকি। এটি দীর্ঘ এক রূপান্তরের আজকের একটি ছোট চিত্র। হলো মুক্ত গল্প, স্মৃতিমন্থন, নয়া ভাবনা ও ভাব বিনিময়, তিল নাড়ুর অপ্যায়ন। 

IMG 20251002 WA0058

তবে হলে হতেও পারত একটি পার্বণী কাগজ। পালাগান বা মিশ্র গানের আসর। একালে পালাগান হতো। যাত্রা হতো। নাটক হতো। পুজার আগে ঘণ বর্ষার ভেতর রিহার্সালও হতে যেতো। 

গত শতকের চল্লিশের দশকে আর্য নাট্য সমাজ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মাথায় মেতে নিতেন। সেখানে মুসলিম যেমন ছিলেন তেমনে হিন্দু নাট্য কর্মীরাও ছিলেন। নাট্যকার আবদুর রশীদ যেমন ছিলেন তেমনি কার্তিক দে প্রমুখ। একজনের অভিনয়ের কারণে তার নামও রটে গেলো ঘোড়া ঠাকুর বলে।

1000075286

সে যাক। বছর ত্রিশ বছর আগে ১৯৯৫ সনে খালভাঙ্গা পালপাড়া গ্রামে প্রয়াত নগেন্দ্র চন্দ্র পাল স্যার বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন ধারাবাহিক পূজামণ্ডপের শতবর্ষ পত্রিকা প্রকাশ করে অনন্য এক দলিল দিয়ে গেছেন সমাজকে। এটি একটি অনন্য কাজ। সমাজ দলিল। এই কাজটি এখন হয় না।

হাজার টাকার লাইটিং করবে কিন্ত পুজা উপলক্ষে কোন শারদীয় সংখ্যা করবে না। খালভাঙা আনন্দ ভবনের কাগজে মোস্তফা কামাল চমৎকার আলোচনা করেছেন স্বাধীনতার আগে হ্যাজাকের নিভু নিভু আলোয়া যাত্রা পালা দেখছেন মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো।
মোস্তফা কামাল না লিখে গেলে জানতেই পারতাম না পুজা উপলক্ষে এই তল্লাটে কী চমৎকার সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা চলছে। 

ভোগাই পালিত নালিতাবাড়ী বন্দরে বিগত শতকে সত্তর এবং আশির দশকের তরুণ প্রজন্মের ক্রিড়া, নাটক, সঙ্গীত ও সাহিত্যের বিশিষ্টতা ছিলো সর্বজনবিদিত। আজকের জমানার কিশোর ও যুবকরা জানেনা আমবাগান কেন্দ্রিক শাপলা শালুকের আসর; নবরূপী রত্ন সংঘ সহ পাঠাগার ; নাট্যচর্চার একটি বাতাবরণ ছিলো যেখানে এম এ হাকাম হিরা , আব্দুল হান্নান , কিরণ দত্ত, অসীম দত্ত হাবলু, জয়জিৎ দত্ত সহ অনেকেই ছিলেন সংগঠক। আজকের দিনে পরিবার ও সমাজের কাছে তিনি শুধুই ব্যবসায়ী/আমলা/শিক্ষক। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়।

কেননা ইতিহাস শুধু একটি ভুলে যাওয়া পৃষ্ঠাবন্দি কালি নয় বরং বর্তমানকে তার অবস্থান ও গন্তব্য স্পষ্ট করার একটি যৌথ প্রক্রিয়া বটে।

পাহাড়ি জনপদের বর্ণিল ক্রিড়াতীর্থ

 আরেকটু পেছনে তাকালেই আমবাগান মহল্লায় দেখতে পাব হান্টার্স ইলেভেনের কিংবদন্তি কায়কারবার। 

কিংবদন্তি ফুটবলার হারান বসু, রাখাল বসু, প্রভাত নাগ, বরকুনাথ, সুকুমার চৌধুরী, অবনী কর, মাখন সোম, হর সাহা মিশ্র লালবিহারী নাথ, সুরেন চ্যাটার্জি, নিখিল রায়, বীরেশ্বর রায়, আতর আলী, ওসমান উনি, অমর মজুমদার, ঠাণ্ডু সরকার, মন্টু রায়, মতিলাল সাহা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ফুটবলের স্বর্ণযুগের মানুষ। 

প্রত্যাশা রাখি এই পরম্পরা আলোক দ্যুতিটি আরো বর্ণিল করে ছড়িয়ে দেবে আসছে বছর অষ্টমী সাঁঝে। সে আশায় রইলাম।

Leave a Reply

Scroll to Top