বালুচর সাহিত্য পত্রিকা
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থেকে প্রকাশিত একটি বিশুদ্ধ সুলুকসন্ধানী বালুচর সাহিত্য পত্রিকা। বালুচর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয় সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে পথচলা শুরু করে।
বালুচরে চাতালে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ি জনপদের মানুষের স্মৃতির নুড়িপাথর, শ্রুতি আর কল্পনার জমিন। আমাদের কথকতা, ব্যাথা, স্মৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক যাপনকে প্রজন্মান্তরে জড়িয়ে ধরে ছড়িয়ে দেবার সামাজিক প্রয়াস ছোটকাগজ “বালুচর”

বালুচর এক টুকরো অনাবাদি সাহিত্য ভূমি। শিল্প সাহিত্য চর্চার আতুরঘর হিসেবে পরিচিত ছোটকাগজ। ইতিহাস ঐতিহ্য; রাজনীতি অর্থনীতি এবং স্থানিক বরেণ্য কীর্তিমানদের কথা দালিলিক পাটাতনে তুলে আনা বালুচর সাহিত্য কাগজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা স্থানিকতার শক্ত ভিত্তিভূমি থেকেই আমরা পৌঁছে যেতে চাই বিশ্বসাহিত্যের উঠানে।
বালুচর সাহিত্য পত্রিকা ইতোমধ্যে কাজ করেছে ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে এই পাহাড়ি অঞ্চলে আন্দোলনের দিনগুলোতে এই তল্লাটের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে। সেখানে আজকের দিনে বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিকথা যুক্ত করা হয়েছে। বিস্মৃত অনেক বিষয় মাঠ পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষা করে তুলে আনা হয়েছে এই পত্রিকায়।
‘বালুচর’ এর তৃতীয় বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যয় ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের নালিতাবাড়ী গ্রামের নওজোয়ান মাঠে অনুষ্ঠিত ” ষষ্ঠ প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন’ এর নানা কথকতা ও দলিল আর প্রামাণ্য সাক্ষ্যে সাজানো।
উল্লেখ করা যায় ১৯৩৬ সালে বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে গঠিত হয় বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা। কলকাতার আলবার্ট হলে, আয়োজিত হয় নানা জেলার কৃষক সংগঠনের সন্মেলনে। জমির উপর জমিদারি মালিকানা উচ্ছেদ করে সেই জমি কৃষকের হাতে তুলে দেয়া। লাঙল যার জমি তার, কৃষককে ঋণমুক্ত করা সহ নানা দাবী নিয়েই মূলত এই কৃষক সভা গঠিত হয়।কৃষক সভার লক্ষ্য ছিল, পূর্ণ স্বাধীনতা-আদর্শ ছিল কৃষক-শ্রমিকের রাজত্ব কায়েম।

কৃষক সভার জীবনে আন্দোলন ও সংগঠন সম্বন্ধে নালিতাবাড়ি সম্মেলন এক নতুন পরিস্থিতির সূচনা করে, নতুন নতুন কাজের ইঙ্গিত দেয়, কর্মী ও ভলন্টিয়ারদের মধ্যে নতুন উৎসাহ সৃষ্টি করে। পরবর্তী কালের আন্দোলন ও সংগঠনে তার সুস্পষ্ট ছাপ থেকে যায়, লিখেছেন সারা ভারত কৃষক আন্দোলনের বরেণ্য নেতা আবদুল্লাহ রসুল।
সে পর্যন্ত যতগুলো সম্মেলন হয়েছিল তার মাঝে নালিতাবাড়ী সম্মেলন ছিলো সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক, সফল এবং জনসম্পৃক্ত। তিনি ঐ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। সভাপতি হয়েছিলেন মোজাফফর আহমদ।

বালুচর পত্রিকার উঠে এসেছে স্থানীয় একাধিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালের সামাজিক সাক্ষ্য এবং ইতিহাস তেমনি স্থানীয় শিক্ষকদের কথা। এই অঞ্চলের প্রাগ্রজ শিক্ষাগুরু শ্রী নিশিকান্ত ভাদুড়ী স্যারের প্রয়াণের পর তার অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদের স্মৃতিকথা সম্বলিত ” নিশিকান্ত ভাদুড়ী স্মৃতিতর্পণ ” প্রকাশ করেছে বালুচর সাহিত্য কাগজ।
এরই ধারাবাহিকতায় বালুচর ষষ্ঠ সংখ্যা প্রকাশ করেছে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে। এখানে নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী তারাগঞ্জ হাটের এক জীবন্ত ও ছান্দিক বর্ণনা উঠে এসেছে কবি জ্যোতি পোদ্দারের বয়ানে। হাটের শরীরের বহুরূপী এক সম্ভার পাঠককে ভিন্ন এক স্মৃতি রোমন্থনে নিয়ে যায়।
পাশাপাশি নালিতাবাড়ীর বাউল তারা মিয়া এই প্রথম তার গান ও জীবন নিয়ে খসড়া লিখেছেন। দেশভাগের উপর মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছেন কলকাতার সুশান্ত পাল। সীমান্তের নদী গণেশ্বরীর তীরে লেংগুরা হাটের ঐতিহাসিক হারিয়ে যাওয়া এক চিত্র এবং টঙ্ক আন্দোলনের সময় লেংগুরা হাটে গণহত্যার প্রতিবেদন করেছেন সম্পাদক রিয়াদ আল ফেরদৌস।
একটি সাহিত্য ও সমাজ সচেতন মননশীল পাঠকগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে বালুচর। গারো পাহাড়ের প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশকে সবুজ এবং প্রাণী বৈচিত্র্যময় জনসমাজ; আদিবাসী সংস্কৃতি; পাহাড়ি নদী ; হাতি; সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যার কাজ চলমান আছে বালুচর সাহিত্য পত্রিকার দপ্তরে।
বালুচর দপ্তর সম্পাদনা করছেন রিয়াদ আল ফেরদৌস এবং সম্পাদনা পর্ষদ সদস্য জ্যোতি পোদ্দার, শিক্ষক সজল কর্মকার।
বালুচরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। সম্পাদনা পরিষদকে বিশেষ ধন্যবাদ।