শেরপুর জেলায় বাড়ি আমার অনেকেরই জানা।
গারোপাহাড় পাদদেশে শ্রীবরদী হয় থানা।
শ্রীবরদী তো শ্রী বর্ধিত রূপ-মাধুর্যে গড়া।
পাহাড়-নদী-সমতলে ধন-সম্পদে ভরা।
সুফি-সাধক “সহরোয়ারদী” এর নামানুসারে
এই “শ্রীবরদী” নামকরণ পাই কিংবদন্তীপাড়ে।
তহশিলদার শম্ভু নাথের নিজের নামে কৃত
“শম্ভুগঞ্জ” নাম কিছুদিন ছিলো প্রচলিত।
বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, শেরপুর, ঝিনাইগাতি,
এই চৌহদ্দি-র থানাগুলো পারস্পরিক সাথী।
উত্তরের সীমান্তে ভারত, মধ্যে রাজার পাহাড়।
বালু, পাথর, কয়লা, ঝোরা, বন্য প্রাণীর বাহার।
মাঠে সোনার ফসল ফলে, জলাশয়ে মাছ।
সারা মোকাম জুড়ে আছে নানান জাতের গাছ।
বারো দুয়ারি মসজিদে পাই পুরাকীর্তির খবর
কালিদহ, ডিঙি, জাঙাল, জরিপ শাহের কবর।
জরিপ শাহের গড়জরিপা, এক কালের রাজধানী।
টিপু শাহ, শের আলি গাজি-র স্মৃতিধন্য জানি।
চাষা, মজুর, আমজনতার পরিশ্রমের মাটি,
নানা গুণে গুণীজন আর মুক্তিযোদ্ধা-র ঘাঁটি।
শহীদ খুররম, মাহমুদ আরও মুক্তিযোদ্ধা বহু।
পাক বাহিনীর মেজর আইয়ুব ঝরায় বুকের লোহু।
রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ, ডাক্তার সেরাজুল,
আব্দুল হালিম, এম এ বারী, এ ডি এম শহীদুল।
ফজলুল হক, মাহমুদুল হক, আনোয়ারুল ইসলাম,
খুররম, মামুন, শামসুল হক কতো শত নাম।
ফতে মাহমুদ, বশির উদ্দিন, আবুল কাশেম চিশতি,
কাদির পীর, লুৎফর রহমান চালান ধর্মের কিশতি।
নান্নু, মঞ্জু, সোহরাব, মন্টু, জহুরুল হক ডাইয়ে…
খেলাধুলায় দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি দেন পাইয়ে।
নকশি কাঁথা, বাঁশের শিল্প, কেচ্ছা-জারি গানে
বন্যা-খরার ধকল সয়ে জোয়ার আনে প্রাণে।
পর্যটনের আনন্দে আর তুলশিমালার গন্ধে
গান কবিতা হচ্ছে লেখা মন ভোলানো ছন্দে।
মাটির মতো খাঁটি মানুষ সহমর্মী রীতি।
এই সমাজে ভাঁজে ভাঁজে সাম্প্রদায়িক প্রীতি।
মুসলিম, হিন্দু ছাড়াও আছে নানান উপজাতি।
নানা উৎসব আয়োজনে সবার মাতামাতি।
সর্বস্তরের যতো মানুষ এই শ্রীবরদীবাসী
মাটি, মানুষ আর আমাদের দেশ-কে ভালোবাসি।।
সুফি সাধক হযরত সহরোয়ারদী (রহ.)-র নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে সহরোয়ারদী > সরোয়ারদী > সরোবারদী > সরোবর্দী > স্রবর্দী > শ্রীবর্দী > শ্রীবরদী। (বিস্তারিত জানতে আমার “শ্রীবরদী নামকরণ” প্রবন্ধটি দেখতে পারেন।)