কাদির পীর এর পরিচয়
কাদির পীর-এর মূল নামটি আব্দুল কাদির (রহ.)। প্রায় আড়াই শত-তিন শত বছর আগে সুদূর ইয়েমেন থেকে বারোজন আলেমের আগমন ঘটে তৎকালীন ভারতবর্ষে। তারা ধর্ম প্রচার করতে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে খানকাহ, দরগাহ স্থাপন করেন। ভারতবাসী তাদেরকে পীর সাহেব বলে ডাকেন, সম্মান করেন, অনুসরণ করেন। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহণ করেন। সোহবতে শান্তি লাভ করেন।
এই বারো জন আওলিয়ার একজন আব্দুল কাদির (রহ.)। তিনি যেখানে দরগাহ স্থাপন করেন সেই স্থানটি বর্তমানে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া নামক গ্রাম। ওই জায়গাটি এখনও কাদির পীরের দরগাহ নামে পরিচিত।
হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলমান পীরের দরগাহ! সমাজে অগ্রহণযোগ্য! নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইমানী দায়িত্বে ধর্ম প্রচার করতে লাগলেন। এমনকি সাথে আসা বাকি এগারোজনের কেউ কাছেকূলে নেই! সততা, নিষ্ঠা, এলেম ও আদর্শ দিয়ে ইমানী দাওয়াত দিতে থাকেন। স্থানীয় মুসলমানগণ যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। তারা শিক্ষা লাভ করে ধন্য হলেন। তার অনুসারী হয়ে ধর্ম প্রচার করতে লাগলেন। বহু অমুসলিম নৈতিকতা ও আদর্শ দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ভক্ত, অনুসারী, শিক্ষা গ্রহণকারী, এবাদতকারী ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
অজু, গোসল, পবিত্রতা অর্জন এবং পানাহারের জন্য দরগাহর পাশেই মসজিদ এবং তিন পাশে তিনটি পুকুর বা দীঘি খনন করা হয়। সেগুলোর সুন্দর নামকরণ করা হয় রাজা মায়ের দিঘী, সাহেবের দিঘী, আলম দিঘী। এর মধ্যে আলম দীঘি সবচেয়ে বড়। দরগাহর পাশেই একটি কূয়া স্থাপন করা হয়। দরগাহর পশ্চিম পাশে মাটির উঁচু টিলা ও একটি বড় পাথর এখনও অনেকটাই দৃশ্যমান। বহু ভক্ত, অনুরাগী ও গবেষক এখনও আসেন।
বর্তমানে দরগাহর মোট জমির পরিমাণ পাঁচ একর বিশ শতাংশ। এই জমিতে ইসলামী গবেষণাকেন্দ্র ও মাদ্রাসা স্থাপন করে দু’জাহানের কামিয়াবি অর্জন করা যাবে।
উল্লেখ্য, পীর, মাশায়েখ, গাউস, কুতুব, ওলি, মাজার, খানকাহ, দরগাহ ইত্যাদি পবিত্র শব্দ ব্যবহার করে অনেকেই ভণ্ডামি করছেন। তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। পক্ষান্তরে প্রকৃত পীর-মাশায়েখদের সম্মান দিতে হবে। তাদের জীবনি, সৎকর্ম, অবদান ও বিশেষ কীর্তিগুলো জানতে হবে, জানাতে হবে। মাজার-দরগাহগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।