সোহাগপুর! শেরপুরের নালিতাবাড়ি থানাধীন একটি গ্রামের নাম। হানাদার বাহিনীর ও তাদের দোসরদের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের অন্যতম সাক্ষ্য বহন করছে এ গ্রামটি। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মধ্যে আলোচিত পাশাপাশি ৩ টি গ্রাম সোহাগপুর, কাঁকরকান্দি এবং বরুয়াজানি। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসে এ ৩ টি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা যেভাবে হত্যা, লুটতরাজ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, নারী ও শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে তা ইতিহাসে যেকোন সভ্যতার অত্যাচারকে হারমানাবে।
২৫ জুলাই ১৯৭১, ১০ শ্রাবণ রোজ রবিবার। ভোরবেলা হানাদার বাহিনী বিরামহীন ভাবে গুলি চালিয়েছে। মানুষ যার যার মতো করে পালাচ্ছে। কেন এমনিভাবে গুলি আসছে কেহ জানে না। কিছুক্ষণ পর জানা গেল হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। এরপর মাঠে কর্মরত কৃষকদের নির্বিচারে হত্যা করে। কয়েকজন করে করে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। নীরিহ মানুষ ঘরের ভেতর শাড়ি পরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে তাতেও রক্ষা পায়নি, ঐদিন হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা মিলে ১৮৭ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মা-বোনদের ওপর করা হয়েছিল পাশবিক অত্যাচার, স্বামী-সন্তানহারা হয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। তখন থেকে গ্রামটির নাম হয় “বিধবাপল্লী“
গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী ২ টি ভাবে বিভক্ত হয়ে একদল বাঘাইতলা হয়ে হালুয়াঘাটের তেলিখারি চলে যায়, অন্যদল রামচন্দ্রকুড়া ক্যাম্পে চলে যায়।
শত্রু চলে যাওয়ার পর লাশগুলো টেনে হেচড়ে ৮-১০ জন করে একত্রে কবর দেওয়া হয়েছিল। আরও বহু লাশ শেয়াল, শকুন আর কুকুরে খেয়েছে। আর যারা ভাগ্যক্রমে জীবিত ছিলো তারা রাতে আধারে কোথাও চলে গেছে তার কোন হদিস মিলেনি। দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসন ও অনির্বাণ-৩০-এর সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই গ্রামের শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে স্মৃতিফলক নির্মাণ ও গণকবর চিহ্নিত করেন।
তথ্য সূত্র- মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস।