দেশের মাটিতে চলছে পাকবাহিনীর অত্যাচার, এ অত্যাচার থেকে নারী এবং শিশুরাও বাদ পরেনি। মানুষ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শরনার্থী হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভরতের শরনার্থী ক্যাম্প চলে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মধুপুর, মুক্তাগাছা, পিয়ারপুর, নান্দিনাসহ এ অঞ্চলের মানুষ গুলো নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য শেরপুরের নালিতাবাড়ির নাকুগাঁও ভোগাই নদী হয়ে ভারতের ডালুতে প্রবেশ করতো, কারণ নালিতাবাড়ি সদরে এখনো পাকবাহিনী প্রবেশ করেনি। তবে তাদের দোসর- রাজাকার, আলবদর এবং আলশামসরা একত্রিত হতে থাকে। সীমান্ত তখনো শান্ত।
২৫ মে ১৯৭১, ভোরবেলা নাকুগাঁ ভোগাই নদীতে সাতঁরিয়ে কেউবা গলা পানিতে হেঁটে হেঁটে নদী পার হতে লাগলো। ঠিক তখনই কিছু বুঝে উঠার আগেই কাশবনের ঝোপঝাড় থেকে একসঙ্গে রাইফেল, স্টেনগানসহ অন্যান্য অস্ত্রের ব্রাশফায়ার ঝাঁঝরা করে পেলে নিরীহ নিরস্ত্র আস্রয়কামী মানুষ গুলো শরীর। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে তাদের আর্তচিৎকারে। ভোগাই নদীর পানি আর রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেলো, স্রোতের কারণে লাশগুলোর হদিস পাওয়া যায়নি, কোন মানুষ জীবিত অবস্থায় ডালু পৌঁছাতে পারছে কিনা তাও জানা নাই। কতজন লোক এ নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই।
হানাদার বাহিনী অতি দ্রুত ভোগাই নদী পার হয়ে ডালু বাজারে বি. এস. এফ. ক্যাম্পে গুলি করতে করতে প্রবেশ করে, ৯ জন বি. এস. এফ. কে হত্যা ও ৫ জনকে বেঁধে নিয়ে তাদেরকে ময়মনসিংহ আটকে রাখে। এছাড়াও ডালু বাজারে অসংখ্য বেসামরিক লোককে হত্যা করে একই দিনে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫ জন বি. এস. এফ. কে মুক্ত করা হয় ময়মনসিংহ জেল থেকে।
নাকুগাঁ এ নির্মম হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় তাই ইতিহাসে “নাকুগাঁ হত্যাকান্ড” নামে পরিচিত। ঐ দিন এ নির্মম হত্যার স্বীকারে কত জন লোক ছিলো তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবে নালিতাবাড়ি ও শেরপুরের যে কয়জন ছিলো তাদের কয়েকজনের নাম নিচে দেওয়া হলোঃ-
১. নীরেন দাস > নালিতাবাড়ি বাজার।
২. নৃপেন দে > নালিতাবাড়ি বাজার।
৩. নরেন শীল > নালিতাবাড়ি বাজার।
৪. ফণীন্দ্র দাস > নালিতাবাড়ি বাজার।
৫. মোতালেব হোসেন > শেরপুর।
৬. হরিয়া > শেরপুর।
৭. আশ্রাফ আলী > বরুয়াজানি।
৮. রিয়াজ উদ্দিন সরকার > হাতিপাগার।
৯. আহাদ সরকার > কালাকুমা।
১০. শাহাজাহান > ময়মনসিংহ।
১১. আবেদ আলী > অজ্ঞাত।
১২. নুর ইসলাম (ইপিআর) > অজ্ঞাত।
১৩. আজাহার উদ্দিন (পুলিশ) > অজ্ঞাত।
১৪. অশ্বিনী মিস্ত্রি > অজ্ঞাত।
তথ্য সূত্র- মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস।