১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে সারাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দালালদের অত্যাচার, নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যাকান্ডের মাত্রা বিশ্ব সভ্যতার সকলে বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। হানাদারদের অত্যাচার থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে বাংলার দামাল সন্তানেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে নিজের জীবন বাজি রেখে। তরুণরা বাড়িতে ফিরত না শত্রুর ভয়ে। তীরছা বাড়ির মালিক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন কারেন এ খবর চলে যায় সদর থানা পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্পে। এ খবরে ক্রুদ্ধ হয়ে অর্ধশতাধিক হানাদার ও তাদের দোসররা মিলে গ্রামটি ঘেরাও করে পরের সপ্তাহে। দিনটি ছিল ২৪ নভেম্বর ১৯৭১ বুধবার। তার আগের দিন মুক্তিবাহিনীর ৬ সদস্য মা-বাবাকে দেখতে বাড়িতে আসে কমান্ডারের নির্দেশে এবং রাত্রি যাপন করে নিজ নিজ বাসস্থানে। পরদিন যখন পাকিস্তানিরা গ্রাম ঘেরাও করে পেলে তারাও মুখোমুখি হয়ে যায়। ছয়জনের নামঃ-
১. ছোরহাব আলী
২. আ. খালেক
৩. মন্তাজ উদ্দিন
৪. হাবিবুর রহমান
৫. ফজলুল হক এবং
৬. আবুল হাসেম।
এরই মধ্যে হানাদার বাহিনী বাজারে প্রবেশ করে গ্রামবাসীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করার প্রস্তুতি নেয়। আর ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম কে রক্ষা করতে ধান ক্ষেতে অবস্থান নিয়ে ফায়ার শুরু করেন। তুমুল সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। ফায়ার অবস্থায় একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে ফেলে এবং তাকে হত্যা করে, বাকিরা কোন মতে পালাতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে নকলার মুনসুর বাহিনীর ৫০-৬০ মুক্তিযোদ্ধা চিথলিয়া অবস্থান করছিল পাকিস্তানিদের হত্যা করার জন্য এবং পাকবাহিনী যেন যোগাযোগ না করতে পারে সে জন্য টেলিফোন লাইন কেটে দেয়। তারা যখন খবর পেল সূর্যদী গ্রামে গণহত্যা চলছে, তারা দৌড়ে আসলো এবং ফায়ার শুরু করলো পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানিরা না পেরে উঠে গ্রেনেড আর মার্টার শেল মারতে শুরু করলো। মার্টার শেলের আগাতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরই মধ্যে পাকিস্তানিরা ৪০-৫০ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে। ঐ সময়ে স্বামী-সন্তান শহীদ হওয়া তাদের মা এবং বিধবা স্ত্রীগণ এখনো জীবিত আছেন অনেকে। যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে ছিলো তারা সবাই প্রাণে বাঁচতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। তাদের মধ্যে কয়েকজনঃ-
১. হারো খাতুন
২. মজিরান বেওয়া
৩. আলেছা
৪. রশিতন নেছা
৫. জাবেদা খাতুন
৬. ছয়মন বেওয়া
৭. আহেতন নেছাসহ আরও অনেকে।
কালবৈশাখী ঝড়ের গতিতে লন্ডভন্ড করে দিছে সবকিছু। মুক্তিযোদ্ধাদের আপ্যায়নের অভিযোগে তিরছা বাড়িতে ১১ জন কে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে ৫ জন, নবীরুদ্দিনের বাড়িতে ৯ জনসহ প্রায় প্রতি বাড়িতে হত্যা করে, এমনও বহু বাড়ি আছে যেখানে জীবিতের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেশি।
সারা গ্রামে লাশ আর লাশ। চারদিকে শুধু কান্না আর কান্না। পাকিস্তানিরা শেরপুর চলে গেলে ধীরে ধীরে জীবিতরা বাড়িতে আসতে থাকে এবং কোনমতে লাশ মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
সূর্যদী গণহত্যা নামে অন্য একটি লেখা৷
তথ্য সূত্র- মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস।