শেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগার
- “যদি জ্ঞান আহরণ করতে চাও, জেলা গাণগ্রন্থাগারে চলে যাও”
- “পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই”
- “গ্রন্থাগারকে ভালবাসুন, গ্রন্থাগারে পড়তে আসুন”
জ্ঞানের উৎস হলো বই। আর বইয়ের উৎস হলো লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার। মানুষের জ্ঞান-সমৃদ্ধির কেন্দ্রস্থল হলো এই লাইব্রেরি। লাইব্রেরি মানুষকে করে তোলে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী, স্বশিক্ষিত এবং রুচিশীল।
জ্ঞান কোষ বা জ্ঞান সংরক্ষণের ভান্ডার হলো গ্রন্থাগার। প্রমথ চৌধুরীর মতে, “এ দেশে গ্রন্থাগারের সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল কলেজের চাইতে একটু বেশি”! গ্রন্থাগারে পাঠকের সুবিধার্থে প্রায় সকল প্রকার বই রাখা হয়। পাঠক যেন বই পড়া থেকে বঞ্চিত না সে জন্য সরকার প্রতিটি জেলা শহরে পাবলিক গ্রন্থাগার স্থাপন করেছেন।
গ্রন্থাগার একটি বিদগ্ধ প্রতিষ্ঠান যেখানে পাঠক-গবেষকদের ব্যবহারের জন্য বই, পত্র-পত্রিকা, পান্ডুলিপি, সাময়িকী, জার্নাল ও অন্যান্য তথ্যসামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হয়। গ্রন্থাগারের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Library’-এর উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক’। Liber শব্দটি এসেছে Libraium শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক রাখার স্থান’।
গণগ্রন্থাগার হলো বিশাল কক্ষ বিশিষ্ট নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ, যেখানে রাখা হয়েছে বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। গ্রন্থাগারে প্রবেশের পূর্বে বিনামূল্যে নাম রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে যে কেউ ফ্রি’তে বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র পড়তে পারেন।
শেরপুরের মাধবপুরে অবস্থিত “খানবাহাদুর ফজলুর রহমান” জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। ১৯২৬ সালে রিডিং ক্লাব নামে বেসরকারি ভাবে যাত্রা শুরু করে জেলা গণগ্রন্থাগার। শেরপুর গণগ্রন্থাগারে ৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবনে দুটি বিশাল কক্ষ রয়েছে, একটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং অন্যটি চাকরি প্রার্থী তথা রেজিস্ট্রেশন কৃত নিয়মিত পাঠকদের জন্য।
সর্বসাধারণের জন্য যে রুমটি রয়েছে সেখানে প্রায় সকল প্রকার দৈনিক পত্রিকা, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, শিশুদের বই সহ ৩৯,৭৪৪ টি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। আর নিয়মিত বা রেজিস্ট্রেশন কৃত পাঠকদের কক্ষে রয়েছে একাডেমিক পুস্তক থেকে শুরু করে প্রায় সকল চাকরির প্রস্তুতি মূলক বই। গ্রন্থাগারে দু’টি ভাষার বই স্থান পেয়েছে আমাদের মাতৃভাষা তথা বাংলা এবং ইংরেজি। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য জেলা গণগ্রন্থাগার উন্মুক্ত থাকে।
১৯২৬ সালে যাত্রা শুরু করলেও ১৯৮৪ সাল থেকে বিশিষ্ট দানবির মরহুম খানবাহাদুর ফজলুর রহমান এর নামানুসারে গ্রন্থাগারটির নামকরণ করা হয়। এরপর জেলা গ্রন্থাগার সমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রন্থাগারটি সরকারি করা হলে এর নামকরণ করা হয় “খানবাহাদুর ফজলুর রহমান” জেলা গণগ্রন্থাগার। ১৯৯১ সালের জুলাই মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
শেরপুর জেলা গ্রন্থাগারে সম্পূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশ, সেখানে রয়েছে অনেক গুলো বইয়ের আলমারি, চেয়ার এবং টেবিল। পাঠকের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে রাখা হয়েছে ওয়াশরুম। পাঠক যেন আরামের সাথে পড়তে পারে তার জন্য রয়েছে লাইট, ফ্যানে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাইের ব্যবস্থা।
পাঠক চাইলে গ্রন্থাগার থেকে তাদের পছন্দ মত পুস্তক নিয়ে বাড়িতেও পড়তে পারে। তার জন্য প্রয়োজন গ্রন্থাগারে রেজিস্ট্রেশন করা।
রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি
প্রথমে, ১০ টাকা দিয়ে একটি ফর্ম নিতে হয়। ফর্মের সাথে স্টুডেন্ট কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সহ পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি যুক্ত করতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাত্র ৩০০ টাকা এবং বয়স্কদের জন্য ৫০০ টাকা ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে পাঠক যখন রেজিস্ট্রেশন বাতিল করবে তখন রেজিস্ট্রেশন ফি ফেরত দেওয়া হয়।
ভিশন
জ্ঞানমনস্ক আলোকিত সমাজ।
মিশন
জেলার শিশু, গৃহিণী, লেখক, সাহিত্যিক, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সুবিধা সহ পাঠকসেবা ও তথ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় বিকশিত ও সমৃদ্ধকরণ।
কার্যবলী
- শেরপুর জেলার সর্বস্তরের জনগণকে পাঠ সুবিধা প্রদান।
- জেলা পর্যায়ে পাঠ্য ও রেফারেন্স বই এর উপর গুরুত্বরোপ করে জ্ঞানের সকল শাখার উপর একটি সুষম ও সমৃদ্ধ পুস্তক সংগ্রহ গড়ে তোলা।
- শিশু সাহিত্যের উপর পর্যপ্ত সংগ্রহ গড়ে তোলা।
- আলোচনা সভা, গ্রন্থ প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণ জনগনের মাঝে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে উৎসাহ যোগানের মাধ্যমে গ্রন্থাগারকে একটি সংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।
- বিভিন্ন জাতীয় দিকস ও বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে রচনা, আবৃত্তি, সুন্দর হাতের লেখা, বই পাঠ ইত্যাদি প্রতিযোগীতার আয়োজন করা।
- সকল শ্রেণী পেশার জনগণের জন্য জীবনব্যাপী অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।
- জনগণের মাঝে নাগরিক সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গেড় তোলার মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিকাশ সাধনে সহায়তা প্রদান।
- জনগণকে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রন্থাগার সেবা প্রদান।
গ্রন্থাগার সেবা
- পাঠক সেবা
- বই ধার সেবা
- পুরাতন পত্রিকা সেবা
- সাম্পতিক তথ্য-জ্ঞাপন সেবা
- নির্বাচিত তথ্য বিতরণ সেবা
- তথ্য অনুসন্ধান সেবা
রেফারেন্স সেবা
- পরামর্শ সেবা
- উপদেশমূলক সেবা
সম্প্রসারণমূলক সেবা
- প্রতিযোগিতা আয়োজন
- গ্রন্থ-প্রদর্শনী/বইমেলা আয়োজন
- আলোচনা অনুষ্ঠান/সেমিনার আয়োজন
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা
- ফটোকপি সেবা
- ইন্টারনেট সেবা
- গ্রন্থাগার সম্পর্কিত তথ্য প্রদান
প্রাতিষ্ঠানিক সেবা
- বেসরকারি গ্রন্থাগার জরিপ ও নিবন্ধন প্রদান।
যোগাযোগ
জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার শেরপুর
মাধবপুর (থানা মোড়), শেরপুর টাউন, শেরপুর-২১০০
ফোন: ০৯৩১-৬১৬১৪
মোবাইল: ০১৭৯০-৫৮৮৪৫৮
ই-মেইল: [email protected]
ফেইসবুক: www.facebook.com/DGPLSHERPUR
ওয়েবসাইট: www.publiclibrary.sherpur.gov.bd