পাহাড়ি তুরা শহরে এক দিন এক রাত্রী
ছোট বেলায় যখন পিকনিক বা বনভোজন খেতে ঝিনাইগাতি সীমান্তের গজনী পাহাড়ে যেতাম, তখন বাসে যেতে যেতে ঝিনাইগাতি বাজারে আসার আগেই আহম্মদনগরের কাছাকাছি আসতেই সোজা উত্তরে দূরে গজনী গারো পাহাড় এবং তার পাশেই কালো কালো আরো অনেক উচু একটি পাহাড় দেখতে পেতাম। বড়দের কাছে শুনতাম ওটা নাকি ভারতের তুরা পাহাড়। অবশ্য ওই তুরা পাহাড় এখনও দেখা যায়।
শেরপুর শহরের বিভিন্ন উচু ভবন থেকে আকাশ পরিস্কার থাকলে এখনও তুরা পাহাড় চোখে পড়ে। শেরপুর সীমান্ত থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দুরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি শহর তুরা। তাই একদিন হঠাৎ করেই মেঘের রাজ্য খ্যাত ‘মেঘালয়’ এর পাহাড়ি শহর ‘তুরা’ ভ্রমনের ঝটিকা সফরের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলি। সাথে ছিলেন বৈশাখি টিভি প্রতিনিধি বিপ্লব দে কেটু। পাসপোর্ট-ভিসা আগে রেডি ছিল তাই হুট করে এ সিদ্ধান্ত।
২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল শুক্রবার থাকায় আমি অনেকটা ছুটির আমেজে ছিলাম। তাই আগের রাতেই সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করে পরদিন সকাল ৯ টার মধ্যে পৌছে গেলাম নালিতাবাড়ি শহরে। সেখান থেকে কেটু দা কে সাথে নিয়ে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনে পৌছায় সকাল সাড়ে ৯ টায়। সেখানে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিজিবি’র চেকিং এর পর অনুরূপ ভারতের ঢালু সিমান্তের বিএসএফ, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন শেষ করে সীমান্ত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে বারাঙ্গাপাড়া বাজারে চলে যাই।
সেখান থেকে বাংলাদেশের হাইয়েজ মাইক্রো বাসের মতো ১৪ সিটের একটি মাইক্রোবাসে (স্থানীয় ভাষায় উইঞ্জার) জন প্রতি ৮০ রুপী (বর্তমানে ১০০ রুপি) করে টিকিট কেটে উঠে পরি সেই মাইক্রোবাসে। বেলা ১ টায় (ভারতীয় সময়) বাসটি ছেড়ে পাহাড়ি এক্কেবারে খাড়া উত্তর দিকে উঠতে শুরু করে আকাবাঁকা ও উচুনিচু পথ বেয়ে। ঘন্টা খানিক পথ পাড়ি দেওয়ার পর চোখকে আর সামলে রাখতে পারছিলাম না।
এ যেন শুধু মেঘের রাজ্য নয়, দিগন্ত জুড়ে নৈস্বর্গিক পাহাড়ের দৃশ্য মনকে ক্ষনিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয়। সেই সাথে পাহাড় বেয়ে চলা মেঘেদের ছেটানো জল এবং হিমেল বাতাস যেন বাসের ভিতর ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছিল। মেঘেরাও যেন পাহাড়ের কোল ঘেষে আমাদের বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলছিল।
জালানার ফাঁক থেকে চোখকে ফেরাতে পারছিলাম না। পাহাড়ের ডালুতে দূরের কিছু বাড়ি এবং সেখানকার মানুষজনের জীবন-জীবিকার নানা দৃশ্য ও আদিবাসী গারোদের নানা ফসল-ফলের পসড়ার দোকানও চোখে পড়ে বেশ কিছু স্থানে। এভাবেই দেখতে দেখতে দুই ঘন্টা যেন দুই মিনিটেই পার হয়ে গেলে। এক পর্যায় এসে গেলো তুরা শহর। শহরের প্রাণ কেন্দ্র সুপার মার্কেটের সামনে নেমে পরলাম আমরা। তখন বেলা ৩ টা। ঝটপট মধ্যম মানের একটি হোটেলের রুম নিয়ে দুপুরের খাবারটা সেড়ে ফেলি।
তুরাতে কোন খাবার হোটেল নেই বললেই চলে। সেখানে প্রত্যেক আবাসিক হোটেলেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকটা ক্যান্টিন এর মতো ভাত-মাছ, ভর্ত্তা-সবজিসহ প্রায় সব কিছুই পাওয়া যায়। তবে দাম একটু চড়া। কিন্তু উপায় নেই, বাইরে কোন হোটেল না থাকায় ওই আবাসিক হোটেলই ভরসা। তবে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুই চার টি ঝুপরি ও টিন সেড ঘরের মতো খাবার হোটেল রয়েছে। কথায় আছে ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’। তাই ভুড়িভোজনের চিন্তা একটু কমিয়ে বিকেল ৪ টায় বেড়িয়ে পরি শহর দর্শনে।
শহরের পুরোটাই সড়কের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ফুট হয় উপরে নয়তো নিচের দিকে ডালু। তাই বার বার রাস্তা ভেঙ্গে হাটতে হাটতে হাফিয়ে উঠছিলাম। যদিও চড়া মুল্যেও ভাড়ার অটোরিক্সা ছিল কিন্তু তাতে তো আর ভালোভাবে শহরটা দেখা যাবে না। তাই কি আর করা হাটতে হাটতে শহর দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে সিদ্ধান্ত নিই তুরার অন্যতম আর্কষণ প্রায় ৫ কিলো দূরত্বের সুউচ্চু ‘তুরা পিক’ দেখার জন্য (যেখান থেকে বাংলাদেশর অভ্যন্তরের গ্রাম, বিভিন্ন নদী-খাল ও বিল দেখা যায়) প্রায় ঘন্টা খানিক পাহাড় বেঁয়ে উঠারে পর বিকেল ৫ টার দিকে স্থানীয় এক ব্যাক্তির কাছে যানতে পারলাম তুরা পিকের চুড়ান্ত স্থানে যেতে বা ‘তুরা পিক’ এ উঠতে রাত হয়ে যাবে।
‘তুরা পিক’ স্পটটাতে উঠতে খাড়া সিড়ি ও কিছুটা পথ ঢালাই খাড়া রাস্তা এবং শেষের পথটা খাড়া মাটির পথ। তুরা শহরে বৃষ্টি কখনও বলে কয়ে আসে না এবং মেঘগুলো অনেকটা চুপি সারে এসে চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় গাঁ ভিজিয়ে দেওয়ার সময় বুঝা যায় এখানে বৃস্টি হয়েছে। তাই রিস্ক না নিয়ে ফিরে এলাম শহরের অন্যতম বেড়ানোর স্থান ‘ডিসি পার্ক’ দেখার জন্য।
১০ রূপী দিয়ে টিকিট কেটে পাহাড়ের ডালুতে মনোরম দৃশ্যের স্পটটি সত্যিই মনকে সতেজ করে তুলে। ডিসি পার্কের বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ দুরের প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য এবং মেঘেদের ছুটাছুটি দেখে মনকে চাঙ্গা করে সেখান থেকে সন্ধ্যার আগেই বেড়িয়ে পরি শহরের সুপার মার্কেট এলাকায়।
সেখানে ফুটপাতের ধারে চটপটি খেয়ে পাশের একটি দোকানে চা-য়ের কাপে চুমুক দিয়ে উঠে পড়ি তুরার একমাত্র বহুতল ও বৃহৎ সুপার মার্কেটে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে রাত ৭ টা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি ও সামান্য কেনা-কটা করে বেরুনোর সময় লক্ষ্য করলাম এখানে রাত হয়েছে। অর্থাৎ দোকানপাট বন্ধের হিরিক পড়েছে।
জানতে পারলাম তুরা শহরে রাত ৮ টার মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার করণে রাত ৯ টার মধ্যেই ভূতুরে শহরে পরিনত হয়। তাই দেরি না করে অনেক খোজাখুজি করে একটি রুটির দোকান বের করে সেখানে রুটি-সবজি গিলে সকালের জন্য হালকা নাস্তা ও পানি নিয়ে হোটেলের দিকে ছুটছিলাম।
হঠাৎ দেখি তুরা পুলিশ গ্রাউন্ডের পাশের মাঠে চলছে মিনা বাজার। আমাদের দেশে যাকে বানিজ্য মেলা বলে। চকমকে আলোর ঝলকানি দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। ১০ রূপি দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ি মিনা বাজারে (মেলার মাঠে)। কিন্তু মিনা বাজারের মাঠে ঢুকে চোখ ছানাবর। নানা বাহারি পন্যের স্টল এবং খাবারের স্টলের পাশাপাশি অপেন বিভিন্ন রকমের জুয়া এবং নাগিন ড্যান্স চলছে। তবে সম্পূর্ন মার্জিত ভাবে হচ্ছিল।
সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর মিনা বাজার বন্ধের হুইসেল পড়ার সাথে সাথেই মেলার মাঠ শুন্য হয়ে পড়তে থাকে। রাত তখন ঘরির কাটা ৯ টা ছুই ছুই করছে মেঘালয়ের পুলিশের পাশাপাশি সেন্ট্রাল রির্জাভ পুলিশ অর্থাৎ সিআরপি’ও টহলে বের হয়েছে। তখন বুঝতে বাকি রইলো না এখন আর বাইরে থাকা এবং ঘোরাঘুরি করা যাবে না। তাই হোটেলে ‘ঢু’ মারলাম। আমাদের হোটেলটির লবি থেকে পুরো তুরা শহরের ভিউ দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টা দেখে অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। পাহাড়ের কোল ঘেষে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ৩ থেকে ৪ স্তরে বিভিন্ন সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের লাইটের ছুটাছুটি দেখে মনে হয়েছিল রাতটা এখানে বসেই কাটিয়ে দেই।
কিন্তু বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা এবং কমপক্ষে ৫০ ফুট উচু ও নিচু সড়কে হাটাহাটি করে শরিরের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ায় রাত ১২ টার দিকে চোখ আর খোলা রাখতে পারলাম না। অবশেষে মেঘালয়ের গারো রাজ্য থেকে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলাম।
সকাল বেলাই চলে আসতে হবে বিধায় একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি। সকাল ৬ টার দিকে ভাবলাম একটু মনিং ওয়ার্ক করে নেই এবং সাথে সাথে ভোরে তুরা শহরটা দেখে নেই। তাই কথা মতো কাজ শহরে বের হয়ে বেশ কিছুক্ষন হাটার পর বেলা ৭ টার দিকে লক্ষ্য করলাম এখানেতো অনেক বেলা কিন্তু সরাসরি সূর্য দেখা যাচ্ছে না কেন।
তখন তুরা শহরের পূর্ব দিকে শহরের গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকা সুউচ্চ ‘তুরা পিক’ পাহাড়ের দিকে নজর গেলো। সূর্যকে পহাড়ের গাঁ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। বেলা ৮ টার আগে সরাসরি সূর্যের মুখ দেখা সম্ভব নয় তুরা শহর থেকে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে সকাল ৮ টার দিকে নাস্তা সেরে হোটেলের দিকে ফিরে যাই। ঘোরাঘুরি’র সময় দেখতে পেলাম ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যের এবং বেশ কিছু ভিনদেশীয় পর্যটকরা সুপার মার্কেট এলাকায় শিলং, গোহাটি, দার্জিলিং ও শিলিগুড়িসহ বিভিন্ন শহরে যাওয়ার দুই পাল্লার বিভিন্ন বাস ও মাইক্রোবাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে রাস্তার পাশ দিয়ে। সকাল ৭ টার মধ্যে এসব বাস চলে যায়। আবার রাতে জমতে থাকে বাসযাত্রীদের ভির।
সকাল ৯ টার দিকে হোটেলে ফিরে গুছগাছ করে হোটেল ম্যানেজারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটি অটোরিক্সা নিয়ে চলে যাই ‘তুরা-ঢালু’ বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে ঢালু বাসের অনেক দেরি দেখে বিকল্প রাস্তা হিসেবে মেইন রোড়ে এসে ওই মাইক্রোবাসের জন্য অপেক্ষা করি এবং কিছুক্ষণ পর পেয়ে যাই।
সকাল সাড়ে ৯ টায় মাইক্রোবাসে চড়ে ঢালু সীমান্তে পৌছি বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে। তুরা থেকে ফেরারা সময় ঢালু রাস্তার কারণে প্রায় ৩০ মিনিট সময় কম সময়ের মধ্যে ঢালু বারাঙ্গাপাড়া বাজারে চলে আসি। এরপর ভারত এবং বাংলাদেশের বিজিবি-বিএসএফ, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস পেরিয়ে বাংলার মাটি ছুই বেলা দের টার দিকে।
তুরা শহরে ঘুমের সময়টা বাদ দিলে মাত্র ৬ ঘন্টা ঘুরে আসলে কিছুই দেখা সম্ভব নয়। যদিও তুরা শহরটি খুব বেশী বড় না তবে পাহাড়ি উচু-নিচু ঢালুর কারণে বেশ দুরে দুরে অনেক সরকারী-বেসাকারী অফিস এবং স্কুল-কলেজ ও খ্রীষ্টানদের চার্জ থাকায় এক্কবারে ছোট্ট শহরও বলা যাবে না। তবে বেশ পরিচ্ছন্ন রাস্তা-ঘাট এবং জানজট বলে কোন কিছু চোখে পড়েনি। উচু নিচু ও ডালু রাস্তার কারণে রিক্সা চলে না এখানে। কেবলমাত্র পেট্রোল চালিত অটোরিক্সাই (বাংলাদেশের সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মতো) ভরসা শহরবাসী।
তুরা থেকে চলে আসার পর খোজ নিয়ে জানতে পারি সেখানে নেহেরু ও গান্ধি পার্ক, বোটানিকেল পার্ক, রিসোর্ট, মনোরম খ্রীষ্ঠান চার্জসহ আরো বেশ কিছু বেড়ানোর স্থান রয়েছে। তবে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন দিনের জন্য তুরায় অবস্থান নিয়ে ঘোরাঘুরি করলে মোটামুটি তুরা শহরের প্রায় সব কিছুই দেখা সম্ভব।
গারো খ্রীষ্টাান অধ্যুষিত তুরা শহরকে গীর্জার শহরও বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে যেমন একটু পর পর মোড়ে মোড়েই মসজিদ দেখা যায়। সেখানে সেরকম একটু পর পর ছাট-বড় অসংখ্য গীর্জা চোখে পড়ে। বাঙ্গালি বা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক থাকলেও বেশ কিছু মন্দির দেখা গেলেও আকর্ষনীয় কোন মন্দির চোখে পড়েনি। মুসলমানের সংখ্যা খুবই নগন্য হলেও শহরের একমাত্র এবং প্রাণ কেন্দ্রে একটি দোতালা মসজিদ রয়েছে।
স্থানীয়রা একটি সূত্র জানায়, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে আসাম থেকে কোন এক মুসলিম ব্যবসায়ী তুরাতে ব্যবসা করতে এসে ব্যাপক লাভের মুখ দেখলে তিনি তার নিজের টাকায় মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে। তবে তৎকালে স্থানীয় কিছু উগ্র গারো খ্রীষ্ঠানরা মসজিদটি কয়েক দফা ভেঙ্গে ফেলা এবং স্থানান্তরিত কারার অনেক চেষ্টা করলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কঠিন অবস্থানের কারণে আজো টা টিকে আছে।
ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে তুরা শহরের জনসংখ্যা হল ৫৮ হাজার ৩৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৩% । সমূদ্র সমতল হতে তুরা শহরের গড় উচ্চতা হল ৩৪৯ মিটার বা ১১৪৫ ফুট। এখানের অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি। সম্ভবত সংখ্যাগুরু গারোরা খ্রীষ্টান হওয়ার কারণে তারা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেন। তবে সাধারণত শহরের রাস্তা-ঘাটে গারো এবং সামন্য কিছু হিন্দি ও বাংলা ভাষায় কথা বলতে দেখা গেছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যেও সুবিধার কারণে গারোদের পাশপাশি বাঙ্গালিরাও গারো ভাষায় কথা বলতে বাধ্য। এছাড়া এখানে প্রায় সকল শ্রেনীর মানুষ ইংরেজী পত্রিকা পড়েন। এরমধ্যে দ্যা শিলং টাইমস অন্যতম। তবে ‘দ্যা তুরা টাইমস’ নামেও স্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। গারো অধ্যুষিত তুরার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় কিছু নারী-পুরুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিধান করলেও শহরের মানুষ বিশেষ করে তরুন ছেলে-মেয়ে বা শিক্ষার্থীরা প্রাশ্চাত্যের আদলে পোষাক-আষাক পরিধান করেন।
এখানে উন্নত মানের হোটেলে মধ্যে হোটেল নটরাজ, রিকম্যান ও সুন্দরী অন্যতম। এছাড়া আরো বেশকিছু হোটেলের মধ্যে প্যারাডাউন ও রাজ কুমারী মোটামুটি ভালো। তুরা শহরে ভ্রমন করতে হলে অথবা বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ঢাকার আশপাশের এলাকার মানুষ যারা ট্রেন বা আকাশ পথে ভ্রমন করতে আগ্রহী নন তাদের জন্য শেরপুরের এই ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট দিয়ে তুরা হয়ে মেঘালয়ের শিলং এবং আসামের গোহাটি যাওয়ার বেশ সহজ রাস্তা এটি।
নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরে নাকুগাঁও স্থলবন্দর সংলগ্ন ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট। এর পরে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার অদুরে বারাঙ্গাপাড়া ঢালু বাজার। সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে তুরা শহরে এক থেকে দুই ঘন্টা পর পর ছোট ছোট বাস চলাচল করে।
এছাড়া ১৪ সিটের মাইক্রো বাস চলাচল করে। বাস ভাড়া ৭০ টাকা এবং মাইক্রো বা উইঞ্জার ভাড়া ১০০ টাকা।
সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে রাস্তা কিছুটা খারাপ হওয়ায় এক ঘন্টার রাস্তা দেড় ঘন্টা সময় লাগে। তুরা বাস বাসস্ট্যান্ডে নেমে অটোরিক্সা করে ২০ টাকায় শহরের সুপার মার্কেট ও বাজার এলাকায় যেতে হবে। সেখানে আপনার পছন্দের হোটেলে উঠতে পারেন। আর মাইক্রো বাসে গেলে হোটেলের সামনে দিয়েই বাসটি চলাচল করে।
মাইক্রো বাস চালককে বললে সুপার মার্কেট এলাকার যে কোন হেটেলের সামনে নামিয়ে দিবে। হোটেল গুলোর মধ্যে ডবল রুম সর্বনিম্ন ৬৫০ রূপি থেকে শুরু করে ২ হাজার রূপি পর্যন্ত রয়েছে। প্রত্যেক হোটেলে নিজস্ব ক্যান্টিন রয়েছে। অর্ডার মতো খাবার পাওয়া যায়। তবে ডাল-ভাত থেকে শুরু করে সব খাবারই দাম একটু চড়া। সেইসাথে খাবারের মানও তেমন নয়। তবে ভ্রমনের কথা চিন্তা করলে খাবারের হিসেব না করাই ভালো।
তাই দেরি না করে আজই বেড়িয়ে পড়ুন সর্টকাট ও ঝটিকা ভ্রমনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের শহর তুরাতে। ইচ্ছে করলে তুরা হয়ে মেঘালয়ের শিলং, চেরাপুঞ্জি এবং আসামের গোহাটি ও পশ্চিম বঙ্গের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে নেপাল-ভুটান-সিকিম বেড়িয়ে আসতে পারেন। মাঝখান থেকে পাহাড়ি রাজ্য এবং মেঘের সাথে বন্ধুত্ব করে মেঘের উপর দিয়ে ছুটে চলা সাঁ সাঁ করে রাত কিম্বা দিনের বাস যাত্রা হয়ে উঠতে পারে অন্য এক ভ্রমন অভিজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢালু-তুরা সড়ক প্রশস্থ ও উন্নত করার কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শেষে দিকে এ সড়কের কাজ শেষ হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে। ওই সড়ক নির্মান শেষ হলে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই তুরা শহরে পৌছা যাবে। এছাড়া ঢালু থেকে শিলং, গৌয়াহাটি, দার্জিলিং, শিলিগুড়িসহ অন্যান্য সড়কে যান চলাচলে সহজ হবে বলে স্থানীয় পরিবহন সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।