আবদুর রহমান তালুকদার
বড়ই দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা দেশের অবহেলিত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করে বলে তাঁদের কৃতিত্বপূর্ণ কাজগুলো যথাযথ প্রচার-প্রচারণা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে, নামী দামি পদমর্যাদার ব্যক্তিদের মত পদ না থাকার কারণে, বর্তমান প্রতিযোগিতামুলক সময়ে সহজেই তাঁরা হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই থেকে যায়!
তাঁদের দলেরই একজন ব্যক্তি হলেন, “নালিতাবাড়ি উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী” সংগঠনের বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান তালুকদার। যিনি নিজের প্রচেষ্টায় কয়েক বছর গবেষণা করে, বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ জবানবন্দী রেকর্ড করে, শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা সংবলিত “মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর”, “মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ি” নামক মহামুল্যবান গ্রন্থগুলো রচনা করেছেন। যে বইগুলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে পারে সেই অজানা করুণ কাহিনী আর বীর যোদ্ধাদের বীরত্বকাব্য।
সেই নিভৃত্তে থাকা কবি আবদুর রহমান তালুকদার এর জন্ম ১৯৪৮ সালে, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী কাকরকান্দি ইউনিয়নের বরুয়াজানী গ্রামে। ময়মনসিংহ জেলা শহরের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে স্নাতক অর্জন শেষে, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির ডাকে জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরে অংশ গ্রহণ করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথমে বরুয়াজানী হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবতর্তিতে তিনি সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। চাকরি জীবন থেকেই তিনি সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকীতে গল্প ও ছড়া লিখে একজন গল্পকার, কবি, সুরকার ও গীতিকার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পরিদর্শক পদে দীর্ঘ ৩২ বছর চাকরি শেষে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁর লেখা একক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ‘আরেকটা যুদ্ধ চাই’, ‘জল্লাদের দরবার’, ‘অন্যান্য’, ‘শিকড়’। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তথ্য নিয়ে লেখা বইগুলো হলো- ‘মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর’, ‘মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ি‘। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক। স্ত্রী সিদ্দিকা আক্তার জাহান রেবা।