গৌরবের শেরপুর (গান), হারুনুর রশীদ
পর্যটনে সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যে ভরপুর
গারোপাহাড় পাদদেশে গৌরবের শেরপুর। ২
কর্ণঝোরা, মধুটিলা, গজনী, রাজার পাহাড়,
মায়াবী লেক, পানিহাটায় রুপের কী বাহার!
বৈশা বিলে পদ্ম ফুলে রূপসী দর্দূর।
গারোপাহাড় পাদদেশে গৌরবের শেরপুর। ২
জরিপ শাহ, শের আলী গাজী, টিপু, কাদির পীর,
আব্দুল বাকী, সরোয়ার্দী, গড়েছেন নজির।
মজলিস শাহ , ঈশা খানের তলোয়ারের জোর।
গারোপাহাড় পাদদেশে গৌরবের শেরপুর। ২
গড়জরিপা, কাকরকান্দি, ঘাগড়ায় পূরাকীর্তি।
বেড় শিমুল গাছ, রুনীর মাজার, কসবা জুড়ে স্মৃতি।
ঐতিহ্যময় ঈদগা, মসজিদ আছে ইন্দিলপুর।
গারোপাহাড় পাদদেশে গৌরবের শেরপুর। ২
ছানার পায়েস, দানা গোল্লা, তুলশীমালার ভাত।
প্রমাণ করে শেরপুরবাসী ভোগবিলাসী জাত।
হস্তশিল্প, খেলাধুলা, কেচ্ছা-পুথির সুর।
গারোপাহাড় পাদদেশে গৌরবের শেরপুর। ২ ঐ
টীকা :–
জরিপ শাহ — সুফি জরিপ শাহ (রহ.)। হজরত শাহজালাল (রহ.)-র অন্যতম সফরসঙ্গী। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে আস্তানা গাড়েন এবং স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। তার জিন মুরিদেরা এক রাতে তার আস্তানার তিন পাশ ঘেরা খাল ও সাতটি জাঙ্গাল তৈরি করে। সেই খালটির পরবর্তী নাম কালিদহ সাগর।
শের আলী গাজী :– গাজী বংশের শেষ জমিদার। দীর্ঘ ২১ বছর মতান্তরে ২৪ বছর শাসন করেছেন। তিনি “শেরপুর” নামকরণ করে স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করেন। ক্ষমতাচ্যুত হলেও এলাকার নাম “শেরপুর” বহাল থাকে।
টিপু :– সুফি টিপু শাহ (রহ.)। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শেরপুরকে পূণরায় স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করেন। তিনি কয়েক বছর রাজত্ব করার পর ইংরেজদের হাতে বন্দি হয়ে জেলখানায় মৃত্যুবরণ করেন।
কাদির পীর :– আব্দুল কাদির ( রহ.) । ইয়েমেন থেকে আগত ১২জন পীর দরবেশের একজন। ঘোনাপাড়ায় তার দরগাহ ও মাজার এখনও আছে।
আব্দুল বাকী :– সুফি আব্দুল বাকী (রহ.)। তার স্ত্রী সোলেমন নেছা। মহীয়সী সোলেমন নেছাকে লোকে মা সাহেবান বলে ডাকতো। মা সাহেবান কথাটি মাই সাহেবা বলে প্রচলিত হয়ে পড়ে। তার নাম অনুসারে ঐতিহাসিক মাইসাহেবা জামে মসজিদ ।
সরোয়ার্দী :– সুফি সাধক সোহরাওয়ার্দী (রহ.)। এই সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে শ্রীবরদী ( সোহরাওয়ার্দী > সরোয়ার্দী > সরোবরদী > স্রবরদী > শ্রীবরদী) নামকরণ করা হয়েছে।
মজলিস শাহ :– শাহ মজলিস খান হুমায়ুন। বঙ্গের অধিপতি ফিরোজ শাহের সেনাপতি ছিলেন। সামন্ত রাজা দলিপকে পরাজিত ও নিহত করেন এবং পূণরায় মুসলিম রাজত্ব কায়েম করেন। জরিপ শাহের মাজার ও বারো দুয়ারী মসজিদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। রাজ্যের নামকরণ করেন “গড়জরিপা”। সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী সুন্দর ও পরিপাটি করে গড়েছেন। নৌকার আদলে ভাসমান বাগান তৈরি করেন যা বর্তমানে ডিঙ্গি নামে পরিচিত।
ঈশা খান :– সামন্ত রাজা কোচ লক্ষণ হাজোকে পরাজিত করে গড়জরিপা দখল করেন এবং মুসলিম রাজত্ব পূণঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
গড়জরিপা :– শাহী বারদুয়ারি মসজিদ, জরিপ শাহ (রহ.)-র মাজার, কালিদহ সাগর, ডিঙ্গি, জাঙ্গাল, মজলিস শাহের মাজার, কাদির পীর (রহ.)-র দরগাহ , মাজার, পুকুর ইত্যাদি পুরাকীর্তি।
কাকরকান্দি :– ঐতিহ্যবাহী সূতানালী দিঘি একটি পুরাকীর্তি।
ঘাগড়া :– ঘাগড়া লস্কর বাড়ি জামে মসজিদ একটি পুরাকীর্তি।
কসবা :– শাহ কামাল (রহ.)-র মাজার, মুঘল মসজিদ, থানাঘাঠ, ধোপাঘাট, কাঠগড়, মহাশ্মশান ইত্যাদি পুরাকীর্তি।
রুনীর মাজার :– রুনী গাঁয়ের মাজার ও মসজিদ উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি।
বেড় শিমুল গাছ :– নকলার অতি প্রাচীন ও বিশাল “বেড় শিমুল গাছ” শেরপুরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান।
ইন্দিলপুর :– ইন্দিলপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ (পূর্বপাড়া)।
এবং
ইন্দিলপুর ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ (মধ্যপাড়া) ।
প্রায় চার শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ও শেরপুরের ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত।