সাম্যের কবি, মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কোলকাতায় বসবাসের সময় পরিচয় হয় খ্রিস্টান ভদ্রলোক মহিম সরকারের সাথে। এই মহিম সরকারের শশুরবাড়ি বর্তমান বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা গ্রামে। ১৯২৬ সালের কোনো এক সময় কোলকাতায় থেকে বন্ধু মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সপরিবারে চলে আসেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায়।
দামুড়হুদা গ্রামেই খ্রিস্টান মিশন পল্লী (এখনও আছে) অবস্থিত। এই মিশন পল্লীর দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন মহিম সরকারের শ্যালক বাবু হর্ষপ্রিয়। এই হর্ষপ্রিয় বাবুর অন্যান্য ঘরের সাথে ছোট একটা আটচালা ঘর ছিলো। মাটির ঘর, ছনের ছাউনি। এই আটচালা ঘরেই সপরিবারে মাস দুয়েক ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সেই স্মৃতি বিজড়িত আটচালা মাটির ঘরটি এখনও আছে। হর্ষপ্রিয় বাবুর উত্তরসুরীগণ দেখভাল করছেন। এই আটচালা ঘরের উত্তর পশ্চিম পাশেই ছিলো হর্ষপ্রিয় বাবুদের তালপুকুর ও লিচুবাগান। সেদিনের সেসব লিচুর গাছ নেই। তবে স্মৃতি বিজড়িত লিচুর বাগান এখনও আছে, অতীতের যশ নেই।
হর্ষপ্রিয় বাবুদের তালপুকুরটিও আছে, পরিত্যক্তই বলা চলে। এই তালপুকুর ও লিচুর বাগান নিয়েই লিখেছেন বিখ্যাত ছড়া “লিচু চোর”। এই মিশন পল্লী এলাকার দুস্থদের অবস্থা দেখে এখানেই লিখেছেন বিখ্যাত উপন্যাস “মৃত্যুক্ষুধা” এবং বেশ কিছু গান ও কবিতা। সেই আটচালা ঘর, তালপুকুর ও লিচুর বাগান ঘুরে লিচু চোর অবলম্বনে লেখা আমার এই ছড়াটি।
বাবুদের তালপুকুর
বাবুদের তালপুকুরে
ক’জনে দিন দুপুরে
চলে যাই সদলবলে:
স্মৃতিতে রাখবো বলে।
পরিচয় জেনে নিয়ো,
বাবুর নাম হর্ষপ্রিয়।
দুলাভাই মহিম সরকার,
আন্তরিক সদ্ব্যবহার।
ডেকে নেন কাজীদাকে।
আমন্ত্রণ জানান তাকে।
উনিশ’শো ছাব্বিশ সালে
কোলকাতায় থাকার কালে
মহিমের আমন্ত্রণে
কোনো এক শুভক্ষণে
আমাদের প্রিয় কবি
পরিজন নিয়ে সবই
এসেছেন চুয়াডাঙ্গায়,
ওঠেছেন কার্পাসডাঙ্গায়।
বিখ্যাত মিশন পল্লী,
সে কথাই যাচ্ছি বলি–
মাস দুয়েক ছিলেন তিনি,
বিদ্রোহী খ্যাত যিনি।
আটচালা মাটির ঘরে
থেকেছেন সমাদরে।
রচে গান, কাব্যসুধা,
উপন্যাস মৃত্যুক্ষুধা।
আটচালা ঘরের কাছে
তালপুকুর আজও আছে।
পুকুরটি ভরছে ঘাসে,
তালের গাছ নেইকো পাশে।
পুকুরের অতি কাছে
লিচুর গাছ কিছু আছে।
লিচু চোর হানা দিয়ে
ভেঙ্গে ডাল পড়ে গিয়ে
মালিটার পিটনা খেয়ে
সবেগে পালায় ধেয়ে।
এ সময় ডালকুকুরে
ধাওয়া দেয় অধিক জোরে!
অল্পতে বাঁচে প্রাণে!
সে কথা সবাই জানে।
সহসা জাগলো হবি,
পুকুরের নিলাম ছবি।
এসে ভাই ধন্য হলাম।
সবাইকে জানাই সালাম।
চমৎকার ছড়ার গাঁথুনি। সৌভাগ্য হলো কবির সাথে আটচালায় যাওয়া আমার ছবিটাও ছাপা হয়েছে।