Our Sherpur

৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

ক‍্যাপ্টন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম
ক‍্যাপ্টন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম

ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই শেরপুর শত্রু মুক্ত হয়। এর আগে ০৪ ডিসেম্বর কামালপুর ও আহমদ নগর পাক হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে। তখনই বুঝতে পারছিলাম শেরপুর শত্রু মুক্ত হওয়া সময়ের ব‍্যাপার মাত্র। ০৬ তারিখ সকল পাক বাহিনী তাদের তল্পি তল্পা গুটিয়ে ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে জামালপুর পিটিআই ও অন‍্যান‍্য জায়গায় আশ্রয় নেয়। এক রকম বিনা বাঁধায় মিত্র ও মুক্তি বাহিনী শেরপুর প্রবেশ করে।

আমরা আগে থেকেই সংবাদ রাখছিলাম। আমাদের আনন্দ আর ধরে না। ০৭ তারিখ সকালই আমরা ও আমাদের বাড়িতে অবস্থানরত মুক্তি বাহিনীসহ জয় বাংলা ধ্বনী দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমাদের উল্লাস আর ধরে না। এক রকম দৌড়ে কানাসা খোলা এসে দেখি হাজার হাজার লোক। কানাসা খোলা থেকে শেরপুর দারোগ আলী পার্ক পর্যন্ত মানুষের মিছিল। এক রকম ঠেলাঠেলি করে শহরে হাজির হলাম। মানুষ আর মানুষ। পুরু শহর লোকে লোকারণ্য।

Products list of Our Sherpur
শেরপুর জেলার যেসব পণ্য আওয়ার শেরপুর এ পাওয়া যায়।

নিউ মার্কেট সহ সব জায়গায় মিত্র বাহিনীর গাড়ী। আমরা আনন্দে মিত্র বাহিনীর সাথে হাত মিলাচ্ছি। কারো সাথে গলাগলি করছি। বাংলা হিন্দি মিলিয়ে ওদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। কারো সাথে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছি। মিত্র বাহিনীর লোকজন আন্তরিক। সবাই আমাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদের আনন্দ আর ধরে না।

একটু পরে শুনতে পেলাম হেলিকপ্টারে মিত্র বাহিনীর পূর্বাণ্চলীয় প্রধান জেনারেল জগজিত সিং অরোরা আসছেন। আমরা দৌড়ে পার্কের দিকে গেলাম। মিত্র বাহিনী মানুষ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। কিছু ক্ষণের মধ‍্যেই হেলিকপ্টার অবতরণ করলো। বীর দর্পে নেমে এলো জেনারেল। সাথে নেমে আসলো বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ( সম্ভবত)। চারি দিকে জয় বাংলা ধ্বনীতে মুখরিত।

৭১ এর গল্প
শেরপুর মুক্ত দিবসে উল্লাসিত জনতা

মিত্র বাহিনীর কেউ কেউ ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনী দিচ্ছে। আমাদের আনন্দ আর ধরে না। স্বধীন বাংলার পতকা উত্তলোন করলেন জেনারেল নিজেই। দেশী বিদেশি সাংবাদিক বিরামহীন ছবি তুলছে। সারা দিন জয় বাংলা ধ্বনী দিয়ে আর এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে খাবার কথাও ভুলে গিয়ে ছিলাম। তারপরও কোন ক্লান্তি ছিল না। সে দিন যে আনন্দ পেয়েছিলাম, সে আনন্দ আর একদিন পেয়েছিলাম ১৬ ডিসেম্বর, যে হানাদারদের হটিয়ে লাল সবুজ পতাকা পেয়েছি। আর কোন দিন পাই নি।

প্রশ্ন: শেরপুর মুক্ত দিবস কবে? 
উত্তর: ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল

আজ ৪৬ বছর পরও স্মৃতির পাতায় জ্বল জ্বল করছে। রাতে বাড়ি ফিরে বড়দের সাথে সারা দিনের আনন্দের কথা বলে আর শেষ করতে পারি না। রাতে আকাশবাণী কলকাতা আর বিবিসি সংবাদে পাক হানাদার এর পতনের কথা শুনতে কী যে ভাল্লেগেছ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। কলকাতা কেন্দ্র থেকে দেব দুলাল বন্দোপাধ‍্যায় ও দিল্লী থেকে নিলীমা সান্নাল এর খবর পড়ার কথা আজও কানে বাজে। আমি সে দিনের ইতিহাসের অংশ হতে পেরে গর্ব করি।

মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর
মুক্তিযুদ্ধের চিত্র। ছবি: প্রথম আলো

Leave a Reply

Scroll to Top