Our Sherpur

শের আলী গাজী এবং পদ্মবতী

নাও, ঘোড়া এবং নারী যখন যার হাতে যায় তারই কথা বলে কথা কিন্তু সত্য। নারীর লোভে কেউ হারায় সিংহাসন, কেউ হারায় জমিদারি আবার কেউ হারায় প্রাণ। যুগে যুগে এমন বহু ঘটনা রয়েছে। শেরপুরের জমিদার শের আলী গাজীর জীবনে পদ্মবতীর আগমন ও বিচ্ছেদ এ রকম ঘটনা।

মুর্শিদাবাদ সরকারের অধিনস্ত শেরপুর অঞ্চলের জমিদার শের আলী। গাজী শের বংশের শেষ জমিদার শের আলী। তার নামানুসারে জেলার নামকরণ হয় শেরপুর। সম্পূর্ণ স্বাধীন চেতনার পুরুষ ছিলেন শের আলী। মুর্শিদাবাদ সরকারের অধিনতা ছিন্ন করে স্বাধীন ভাবে শেরপুরের জমিদারি শুরু করেন।

বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত জমিদারিতে শের আলীর মন নেই। গাজী শিকার করতে এবং ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। শিকারের উদ্দেশ্যে নদী পথে একদিন নৌকা নিয়ে বের হলেন। যেতে যেতে নদী তীরবর্তী “দর্শা” গ্রামে (ঘাটে) নৌকা থামে। ঘাটে এক অপরূপা সুন্দরী নাম তার পদ্মবতী (হিন্দু ধর্মাবলম্বী)। তাকে দেখে বিমুগ্ধ হলেন নৌকারোহী শের আলী গাজী।

শেরপুর জেলার নামকরণ

শের আলী গাজী হলেন রাজ্যের জমিদার আর পদ্মবতী সামান্য প্রজার কন্যা। সে সময় অল্প বয়সে বিয়ে হতো মেয়েদের। পদ্মবতীর বেলায় বিকল্প হয়নি। ইতিপূর্বে পদ্মবতীর বিয়ে হয় রামভল্লব নন্দীর সাথে। পদ্মবতী শের আলীর প্রেম হয় এবং তাদের প্রেমের মিলন হয়। কিন্তু তাদের সুখ বেশি দিন টিকেনি। শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। গাজীর বিরুদ্ধে পরস্ত্রী হরণ, জেনা এবং রামভল্লব হত্যার অভিযোগ আনে পদ্মবতীর নিকট আত্মীয় হিন্দুরা। মুর্শিদাবাদ নেজামতে গাজীর বিচার হয় এবং বিচারের রায় হয় গাজীর প্রাণ দন্ড। শর্ত থাকে যদি শের আলী গাজী জমিদারিত্ব ত্যাগ করেন দন্ড মওকুফ করা হবে।

দন্ড মওকুফ করার জন্য গাজী পদ্মবতীর শিশু পুত্র রামনাথ নন্দীকে সমস্ত জমিদারিত্ব দিয়ে গাজী তার নিজস্ব খামার বাড়িতে (বর্তমান গাজীর খামার) নির্বাসনে চলে যান এবং এই অজ্ঞাতে বসেই দুঃখে-কষ্টে, জমিদার শের আলী গাজী ফকিরের মতো জীবনকে শেষ পরিণতির দিকে ঠেলে দেন। একদিন জীবনের আলো নিভে যায়।

কেউ বলছেন, পদ্মবতীর স্বামী রামবল্লভকে নৌকায় করে নিয়ে হত্যা করে শের আলী গাজী পদ্মবতীকে লাভ করেন।

কেউ বলছেন, স্বামী পদ্মবতীকে ত্যাগ করলে গাজীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেই শের আলীর কাছে প্রণয় প্রার্থী হন।

কেউ বলছেন, হিন্দুরা জমিদারিত্ব লাভ করার জন্য পদ্মবতীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এ জন্য তারা রামবল্লভকে হত্যা করায় ও মুর্শিদাবাদ নিয়ে পদ্মবতীকে দিয়ে শের আলীর বিরুদ্ধে নরহত্যা, পরস্ত্রী হরণ, জেনার অভিযোগ উত্থাপন করায় আজিজ খাঁ বিচারে প্রাণদন্ড প্রদান করেন।

সূত্র- বাংলা একাডেমী গ্রন্থমালা

Leave a Reply

Scroll to Top